একাদশের আগেই শেষ দেড় লাখ শিক্ষাজীবন

রুম্মান তূর্য |

মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে লক্ষাধিক শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়েছেন। ১৭ লাখ ৭৬ হাজার এসএসসি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীর মধ্যে দেড় লাখের বেশি এখনো কোথাও ভর্তি হননি। সাড়ে ১৩ লাখ শিক্ষার্থী বিভিন্ন কলেজে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে ভর্তির প্রক্রিয়ায় রয়েছেন। আর ২ লাখ ৩২ হাজার শিক্ষার্থী ইতোমধ্যে বিভিন্ন কারিগরি প্রতিষ্ঠানে বিএম, ডিপ্লোমা ও কৃষি ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তি হয়েছেন। সব মিলিয়ে পৌনে তিন লাখ শিক্ষার্থী কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসব কোর্সে ভর্তি হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। তাই অবশিষ্ট লক্ষাধিক শিক্ষার্থীর ঝরে পড়া অনেকটাই নিশ্চিত বলা চলে। বাল্যবিয়ে বা অর্থনৈতিক দুরবস্থার শিকার হয়ে কর্মজীবনে প্রবেশসহ বিভিন্ন কারণে তাদের শিক্ষাজীবনের ইতি ঘটছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় মোট উত্তীর্ণ হয়েছিলো ১৭ লাখ ৭৬ হাজার শিক্ষার্থী। বিভিন্ন কলেজ ও মাদরাসায় কেন্দ্রীয় ভর্তি প্রক্রিয়া সংশ্লিষ্ট সূত্রের দেয়া তথ্য বলছে, এসব শিক্ষার্থীর মধ্যে ১৩ লাখ ৬৬ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী বিভিন্ন কলেজ ও মাদরাসায় একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির আবেদন করেছিলেন। তারা উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে কলেজ ও মাদরাসাগুলোতে ভর্তি হতে চাচ্ছেন। ভর্তির আবেদন করেননি ৩ লাখ ৯৫ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী। ভর্তির আবেদন করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভর্তি জন্য নির্বাচিত হয়েছেন ১৩ লাখ ৪৪ হাজার। আর কলেজ পাননি বা নির্বাচিত হননি ২২ হাজার ৬০৪ জন। নির্বাচিত শিক্ষার্থীর মধ্যে ভর্তি নিশ্চায়ন করেছেন ১২ লাখ ২৫ হাজার শিক্ষার্থী। আর সাড়ে ৮২ হাজার শিক্ষা ভর্তি নিশ্চায়ন করেনি। বিভিন্ন কলেজ ও মাদরাসায় একাদশে ভর্তি হতে চাওয়া বা আবেদন করা শিক্ষার্থীদের এক লাখের বেশি এখনো ভর্তি হতে পারেননি। তাদের জন্য চতুর্থ ধাপে আবেদন গ্রহণ চলছে। 

শিক্ষা বোর্ডগুলোর চেয়ারম্যানদের মোর্চা আন্তঃশিক্ষাবোর্ড সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক ও ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকারের মতে, একাদশে ভর্তির আবেদন না করা ৩ লাখ ৯৫ হাজার শিক্ষার্থীর একটি অংশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের বিভিন্ন ডিপ্লোমা কোর্স ও এইচএসসি বিএম কোর্সে ভর্তি হয়েছেন। 
তবে, এসব শিক্ষার্থীর একটি অংশ যে ঝরে পড়ছেন তা স্বীকার করছেন তিনি। 

এদিকে গতকাল মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত বিভিন্ন কারিগরি প্রতিষ্ঠানের এইচএসসি বিএম. ভোকেশনাল ও ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তি হয়েছেন ২ লাখ ৩২ হাজার শিক্ষার্থী। ওদিন বিকেলে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার এইচএসসি বিএম ও ভোকেশনাল শিক্ষাক্রমে ভর্তি হয়েছেন ১ লাখ ৪৫ হাজার। আর সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে বিভিন্ন ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তি হয়েছেন ৪০ হাজার। বিভিন্ন বেসরকারি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তি হয়েছেন ৪২ হাজার শিক্ষার্থী। আর কৃষি ডিপ্লোমাসহ অন্যান্য কোর্সে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার শিক্ষার্থী। 

বিভিন্ন কলেজ ও মাদরাসায় চলা ভর্তি প্রক্রিয়া ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ভর্তি প্রক্রিয়ার তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যাচ্ছে, ১ লাখ ৬৩ হাজার শিক্ষার্থী এখনো কোথাও ভর্তি হতে চাচ্ছেন না। তারা কলেজ মাদরাসায় একাদশে ভর্তির জন্য আবেদন করেননি। আবার কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসি বিএম, ভোকেশনাল বা ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে ভর্তি হননি। যদিও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের লক্ষ্য এবার এসব কোর্সে ২ লাখ ৭৫ হাজার শিক্ষার্থী ভর্তি করা। 

জানতে চাইলে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সচিব মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জামান গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, এইচএসসি ডিপ্লোমা, ভোকেশনাল বিএমসহ অন্যান্য কোর্স মিলিয়ে আমাদের লক্ষ্য পৌনে তিন লাখ শিক্ষার্থী ভর্তি করা। এখন পর্যন্ত ২ লাখ ৩২ হাজারের মত ভর্তি হয়েছেন। বেসরকারি কারিগরি প্রতিষ্ঠানের ডিপ্লোমা ও বিএম কোর্সে বহু আসন ফাঁকা থাকছে। এ আসনগুলো আমরা শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য উন্মুক্ত করে দেবো। যে আসবে সে ভর্তি হতে পারবে। কোনো শিক্ষার্থী যদি পরেও ভর্তি হতে চান তাদের জন্য কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ থাকছে। 

এদিকে একাদশে ভর্তির চতুর্থ ধাপের আবেদন গ্রহণ চলছে। সংশ্লিষ্টদের ধারণা এ ধাপে কলেজে ভর্তির আবেদন করেও নির্বাচিত হতে না পারা ও নিশ্চায়ন না করা মোট এক লাখের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তির আবেদন করবেন। এর বাইরে তিন ধাপে আবেদন না করা শিক্ষার্থীদের খুব কমই চতুর্থ ধাপে ভর্তির আবেদন করবেন বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। কারিগরি শিক্ষা বোর্ড তাদের পৌনে তিন লাখ শিক্ষার্থী ভর্তির লক্ষমাত্রা পূরণ করলেও ১ লাখ ২০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে কোথাও ভর্তি হচ্ছেন না। এসব শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন শেষ হচ্ছে মাধ্যমিকের গণ্ডির পরই। যা দুর্ভাগ্যজনক বলে মনে করছেন শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা।

 

 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
অধ্যক্ষের অনুপস্থিতিতে শিক্ষকদের বেতন সভাপতির একক স্বাক্ষরে - dainik shiksha অধ্যক্ষের অনুপস্থিতিতে শিক্ষকদের বেতন সভাপতির একক স্বাক্ষরে জোর করে পদত্যাগ, ভালো নেই স্ট্রোক করা সেই অধ্যক্ষ - dainik shiksha জোর করে পদত্যাগ, ভালো নেই স্ট্রোক করা সেই অধ্যক্ষ বরিশালে থানায় শিক্ষার্থীদের হামলা-ভাঙচুর - dainik shiksha বরিশালে থানায় শিক্ষার্থীদের হামলা-ভাঙচুর হাজিরা মেশিন কাজে আসেনি ১৬৯ বিদ্যালয়ে, গচ্চা ৩৭ লাখ টাকা - dainik shiksha হাজিরা মেশিন কাজে আসেনি ১৬৯ বিদ্যালয়ে, গচ্চা ৩৭ লাখ টাকা পদ্মার ভাঙনে বিলীনের শঙ্কায় দুই স্কুল - dainik shiksha পদ্মার ভাঙনে বিলীনের শঙ্কায় দুই স্কুল কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.011715888977051