একীভূত হচ্ছে নামমাত্র শিক্ষার্থীর হাজারো স্কুল

রুম্মান তূর্য |

বারো হাত কাঁকুরের তেরো হাত বিচির মতোই দশা যেনো স্কুলগুলোর। কোথাও শিক্ষার্থী একজন, শিক্ষক চারজন। আবার কোথাও কাগজে কলমে ১৩/১৪ জন দেখানো হলেও ক্লাসে উপস্থিত পাওয়া যায় না। কিন্তু সরকারি কোষাগার থেকে মাসে মাসে ঠিকই বেতন-ভাতা তুলছেন শিক্ষকরা। এমন সব স্কুলের খবর ও ছবি প্রায়ই দেখা যায় বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে। এক নয়, দুই নয়, শয়ে শয়ে। বছরের পর বছর ধরে এমনই খবর প্রকাশ হয়ে আসছে। তবে, এবার সরকারি অর্থের অপচয় আর স্কুল নামের কলঙ্ক চিরতরে ঘুচানোর পাকা উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং অধিদপ্তরের কর্তারা দৈনিক আমাদের বার্তাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশের প্রায় এক হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী নেই। ৫৬টি জেলার ৯৪৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চলছে ৫০ জনের কম শিক্ষার্থী নিয়ে। এ তালিকায় জাতীয়করণকৃত স্কুলও রয়েছে। কম শিক্ষার্থী থাকা কাছাকাছি অবস্থিত স্কুলগুলো একত্রিত বা একীভূত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে এ ধরনের জাতীয়করণকৃত স্কুল বন্ধ করে দেয়ার বিষয়েও ভাবা হচ্ছে। যদিও  শিক্ষকদের একাংশের বিরোধিতায় মাঠ পর্যায়ের শিক্ষা অফিসগুলো কেন্দ্রের উদ্যোগে যথাযথ সাড়া দিচ্ছে না। ফলে গতকাল রোববার কড়া চিঠি দিয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে, কম শিক্ষার্থী থাকা স্কুলগুলো কিভাবে বা কোন উপায়ে একত্রিত করা যায়। এ বিষয়ে মাঠ পর্যায় থেকে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব চেয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। আর পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী না থাকা জাতীয়করণকৃত স্কুলগুলো আর না চালানোর বিষয়ে স্থানীয় পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রস্তাব পাঠাতে বিভাগীয় উপপরিচালকদের বলা হয়েছে।

একত্রিত করার জন্য প্রস্তাবিত স্কুলের নাম, ছাত্র সংখ্যা, জমির পরিমাণ, যে স্কুলের সঙ্গে একত্রিত করা হবে তার নাম, বর্তমান বিদ্যালয় থেকে একত্রিত করার জন্য প্রস্তাবিত স্কুলের দূরত্ব, প্রস্তাবিত স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা উল্লেখ করে অধিদপ্তরে প্রস্তাব পাঠাতে হবে উপপরিচালকদের।

জানা যায়, ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ধাপে ধাপে ২৬ হাজারের বেশি এমপিওভুক্ত রেজিস্ট্রার্ড, আনরেজিস্ট্রার্ড ও কমিউনিটি বিদ্যালয় সরকারিকরণ করা হয়। এদের মধ্যে প্রায় ২১ হাজার শিক্ষক ছিলেন কাম্য যোগ্যতাবিহীন। বার বার সময় দেয়ার পরও তারা কাম্য যোগ্যতা অর্জন করতে পারেননি। আবার অনেক স্কুলে ছিলো নামমাত্র শিক্ষার্থী। গোঁজামিল দিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্য দিয়ে স্কুলগুলো চালাচ্ছেন কিছু শিক্ষক। তারা বেতনভাতাও পাচ্ছেন।

সরকারি অর্থের অপচয়রোধে এসব নামমাত্র স্কুল একিভূতকরণের বিষয়টি সামনে আনেন সাবেক সিনিয়র সচিব আমিনুল ইসলাম খান। গতবছর অর্থাৎ ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি কম শিক্ষার্থী থাকা স্কুলগুলোতে একীভূত করার পরিকল্পনা করেছিলেন। সরেজমিন অনেক স্কুলে গিয়ে দেখেছেন স্কুলের নামে সরকারি স্থাপনা থাকলেও শিক্ষার্থী নেই।  

২০২২ খ্রিষ্টাব্দের বার্ষিক প্রাইমারি স্কুল জরিপ থেকে জানা গেছে, দেশে ৯৪৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে যেগুলোর শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫০ জনেরও কম। মোট ৫৬টি জেলায় এ স্কুলগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।

অধিদপ্তরের মাসিক সমন্বয় সভায় এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সে অনুযায়ী বিভাগীয় উপপরিচালকদের কাছে প্রস্তাবনা চাওয়া হয়। স্কুলগুলো একত্রীকরণ ও কম ছাত্র থাকা বিদ্যালয় পরিচালনা করা সমীচীন হবে কী-না সে বিষয়ে স্থানীয় পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রস্তাব আগামী ১৮ ডিসেম্বরের মধ্যে পাঠাতে বলা হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে ডিডিদের কাছে এ প্রস্তাব চাওয়ার বিষয়টি দৈনিক আমাদের বার্তাকে নিশ্চিত করেছেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পলিসি এবং অপারেশন বিভাগের পরিচালক মনীষ চাকমা। 

 শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল  SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
সরকারি চাকরি থেকে ২০ শিক্ষককে অব্যাহতি - dainik shiksha সরকারি চাকরি থেকে ২০ শিক্ষককে অব্যাহতি ইউজিসি চেয়ারম্যানের অতিরিক্ত দায়িত্বে বহাল থাকছেন অধ্যাপক আলমগীর - dainik shiksha ইউজিসি চেয়ারম্যানের অতিরিক্ত দায়িত্বে বহাল থাকছেন অধ্যাপক আলমগীর চার তারিখের মধ্যে মাদরাসা শিক্ষকদের এমপিওর আবেদন - dainik shiksha চার তারিখের মধ্যে মাদরাসা শিক্ষকদের এমপিওর আবেদন ত্রাণ দিতে যাওয়ার পথে দুর্ঘটনা, আহত ১২ চবি শিক্ষার্থী - dainik shiksha ত্রাণ দিতে যাওয়ার পথে দুর্ঘটনা, আহত ১২ চবি শিক্ষার্থী ব্যাংকের অনিয়ম তদন্তে কমিশন গঠন হচ্ছে - dainik shiksha ব্যাংকের অনিয়ম তদন্তে কমিশন গঠন হচ্ছে শীট মেশিন সম্বলিত প্রতিষ্ঠানের জন্য পুনরায় দরপত্র দাবি - dainik shiksha শীট মেশিন সম্বলিত প্রতিষ্ঠানের জন্য পুনরায় দরপত্র দাবি কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0051651000976562