একুশের স্মৃতি: প্রতিবাদের স্ম্ফুলিঙ্গ জ্বলল কার্জন হলে

দীপন নন্দী |

পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর থেকেই শান্তিপূর্ণভাবে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলার স্বীকৃতি চেয়ে আসছিল পূর্ব বাংলার জনগণ। তবে ১৯৪৮ সালের ২৪ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা করলে এর প্রতিবাদ করেন শিক্ষার্থীরা। শুরু হয় রাজপথের আন্দোলন। 

১৯৪৮ সালের ১৯ মার্চ প্রথমবারের মতো ঢাকা সফরে আসেন পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। ২১ মার্চ রেসকোর্স ময়দানের নাগরিক সংবর্ধনায় তিনি প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন, 'উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। যারা এর বিরোধিতা করে, তারা পাকিস্তানের দুশমন। তাদের কঠোর হাতে দমন করা হবে।' ২৪ মার্চ তিনি কার্জন হলে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে একই বক্তৃতা করেন। তবে এবার তিনি বাধার মুখে পড়েন। স্ম্ফুলিঙ্গ থেকে যেমন আগুন জ্বলে ওঠে, ক্ষীণ এ প্রতিবাদ থেকেও  তেমনি দেখা দেয় প্রতিরোধের শিখা। এভাবে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে কার্জন হল।

গভর্নর জিন্নাহর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে কার্জন হলে উপস্থিত ছাত্রদের একটি অংশ তখনই 'নো-নো' বলে প্রতিবাদ জানায়। এ প্রতিবাদের তোয়াক্কা না করে তিনি তার রাজনৈতিক বক্তৃতা অব্যাহত রাখেন। বিশেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিয়ে জিন্নাহ বেরিয়ে যাওয়ার পর ছাত্ররা রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে উচ্চকিত হয়ে ওঠেন। 

কার্জন হলে প্রতিবাদকারীদের একজন ছিলেন ভাষাসংগ্রামী আবদুল মতিন। ভাষা মতিন হিসেবে খ্যাত এই আন্দোলনকারী নিজের এক লেখায় ওই দিনের স্মৃতিচারণ করে লিখেছেন, "১৯৪৮ সালের ১৯ মার্চ জিন্নাহ সাহেব ঢাকায় আসেন। ২১ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে জিন্নাহর ভাষণ শুনতে সেখানে যাই। ভাষণে বললেন, 'উর্দুই হবে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা'। প্রতিবাদ করতে চাইলাম। বন্ধুরা থামিয়ে দিল। হলে এসে দেখি কনভোকেশনের নোটিশ।

২৫ টাকা দিয়ে ড্রেস নিলাম। ভাবলাম, সেখানে যদি জিন্নাহ বাংলা ভাষার বিরুদ্ধে আবার বলেন, তবে প্রতিবাদ করব। এদিকে কথাবার্তা হচ্ছে জিন্নাহকে অপমান করা হলে বরদাশত করা হবে না। কার্জন হলে জিন্নাহ এলেন। সুন্দর চেহারা। চোস্ত ইংরেজি বলেন। বললেন, ওয়ান নেশন, ওয়ান লিডার, ওয়ান রুল, ওয়ান স্টেট ল্যাংগুয়েজ। কেউ কিছু বললেন না। আমি উঠে দাঁড়ালাম, প্রতিবাদ করলাম। আমি প্রথম 'নো', 'নো' বলে প্রতিবাদ করি। আমার প্রতিবাদের সাথে সাথে অনেকে কণ্ঠ মিলিয়েছেন।"

এ প্রসঙ্গে ভাষাসংগ্রামী ডা. আহমদ রফিক বলেন, ভাষা আন্দোলনের পথে এ ঘটনা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। জিন্নাহর বক্তৃতা ছাত্রসমাজে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। বিক্ষুব্ধ কিছু ছাত্র রেসকোর্স ময়দান থেকে বেরিয়ে এসেই ক্ষান্ত হননি, জিন্নাহ-বন্দনায় তৈরি বেশ কয়েকটি তোরণ ভাংচুর করেন। তারা জিন্নাহর ছবি নষ্ট করেন। এ ঘটনা তখনকার জন্য অভাবিত। এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখা গেছে একাত্তরের মার্চে।

কার্জন হলে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর বক্তব্যের প্রতিবাদে 'নো নো' বলে যে প্রতিবাদ ধ্বনিত হয় তারই ধারাবাহিকতায় আসে বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারি। বর্তমানে কার্জন হল থাকলেও, সে দিনের সে ঘটনার কোনো স্মারকফলক ভবনটির কোনোখানে নেই। 

সুত্র:  সমকাল


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
একাদশে ভর্তিতে কলেজ পছন্দে যে বিষয়গুলো মনে রাখতে হবে - dainik shiksha একাদশে ভর্তিতে কলেজ পছন্দে যে বিষয়গুলো মনে রাখতে হবে ছাত্রীকে যৌন হয়রানি: জুতার মালা শিক্ষককের - dainik shiksha ছাত্রীকে যৌন হয়রানি: জুতার মালা শিক্ষককের ঢাকা বোর্ডের এসএসসি: অসন্তুষ্টদের খাতা চ্যালেঞ্জ ১ লাখ ৮০ হাজার - dainik shiksha ঢাকা বোর্ডের এসএসসি: অসন্তুষ্টদের খাতা চ্যালেঞ্জ ১ লাখ ৮০ হাজার থমকে আছে শিক্ষক বদলি কার্যক্রম - dainik shiksha থমকে আছে শিক্ষক বদলি কার্যক্রম প্রশিক্ষক হতে শিক্ষকদের আবেদন আহ্বান - dainik shiksha প্রশিক্ষক হতে শিক্ষকদের আবেদন আহ্বান কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0038840770721436