একের পর এক পাবলিক পরীক্ষায় পর্যুদস্ত শিক্ষার্থীরা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

একের পর এক পাবলিক পরীক্ষার খড়গ্ কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ঘাড়ে। অপ্রয়োজনীয় এসব পরীক্ষায় পর্যুদস্ত হচ্ছে তারা। তাই শিক্ষা আর আনন্দময় হয়ে দেখা হয় না শিক্ষার্থীদের। পাবলিক পরীক্ষার চাপে পিষ্ঠ হতে হচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীদের। তাদের দিকে নজর দেওয়ার যেন কেউই নেই। লেখাপড়া শুরু করার মাত্র ১২টি শিক্ষা বছরের মধ্যে প্রাথমিক সমাপনী থেকে শুরু করে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা, মাধ্যমিক ও সমমান পরীক্ষা এবং উচ্চ মাধ্যমিকে পাবলিক পরীক্ষায় বসতে হচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীদের। ১৮ বছরের আগেই এদেশে চারটি পাবলিক পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে।

রবিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ প্রতিদিন প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।প্রতিবেদনটি লিখেছেন আকতারুজ্জামান

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগে এ দেশে চারটি পাবলিক পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। পৃথিবীর কোথাও এমন নিয়ম নেই। পঞ্চম শ্রেণি ও অষ্টম শ্রেণিতে এ দেশে যে পাবলিক পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে, পৃথিবীর কোথাও তা নেওয়া হয় না।

সম্পূর্ণভাবে অপ্রত্যাশিত, অকার্যকর এসব পরীক্ষা। একের পর এক পাবলিক পরীক্ষার কারণে ছাত্র-ছাত্রীরা শিক্ষার্থীর পরিবর্তে পরীক্ষার্থীতে পরিণত হচ্ছে। অবিলম্বে পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির পাবলিক পরীক্ষা বন্ধ করার পক্ষে মত দেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক আরও বলেন, উন্নত বিশ্বের কথা চিন্তা করলে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষাও অপ্রয়োজনীয়। উন্নত দেশগুলোতে শুধু উচ্চ মাধ্যমিকের পরীক্ষার মাধ্যমেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছে শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষাবিদরা বলছেন, পরীক্ষার মাধ্যমে জিপিএ-৫ অর্জনের মেকি উৎসব করা হচ্ছে এ দেশে। এসব পরীক্ষায় ভালো করতে গিয়েও ক্লাস শেষে শিক্ষার্থীরা শরণাপন্ন হয় প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে। ছাত্র-ছাত্রীরা দারস্থ হয় বিভিন্ন একাডেমিক কোচিংয়েরও। আর এসব পরীক্ষাকে পুঁজি করে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার ব্যবসায় লিপ্ত হয় দেশের কোচিং সেন্টারগুলো। অবিলম্বে অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষাগুলো বাদ দেওয়ার পক্ষে মত দেন তারা।

অভিভাবকরা বলছেন, নানা পাবলিক পরীক্ষা ছাড়াও প্রতি বছর ত্রৈমাসিক, ষান্মাসিক ও বার্ষিক পরীক্ষার আয়োজন তো রয়েছেই। আর মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকে পাবলিক পরীক্ষার আগে ছাত্র-ছাত্রীদের বসতে হয় ‘টেস্ট বা নির্বাচনী’ নামক পরীক্ষায়। একের পর এক এসব পরীক্ষায় নাকাল আর নাস্তানাবুদ হয় ছাত্র-ছাত্রীরা।

যদিও সরকার বলছে পঞ্চম শ্রেণিতে নেওয়া প্রাথমিক সমাপনী কোনো পাবলিক পরীক্ষা নয়। কিন্তু কেন্দ্রীয়ভাবে ঘটা করে করা হচ্ছে এ পরীক্ষার আয়োজন। সরকারের মন্ত্রীরা পরীক্ষার আয়োজন, ফল প্রকাশ উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠান করায় এ পরীক্ষাকে পাবলিক পরীক্ষা হিসেবেই নিয়েছে ছাত্র-ছাত্রীরা। শিশু শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রীয়ভাবে এ পরীক্ষা দিতে গিয়ে শৈশবেই পরীক্ষার ভীতির সঞ্চার করে।

কোমলমতি বাচ্চাদের এসব পরীক্ষা নিয়ে অভিভাবকদেরও আশঙ্কা উদ্বেগের কমতি থাকে না। তারা বরাবরই অল্প বয়সের এ ছাত্র-ছাত্রীদের এ সমাপনী পরীক্ষার বিরোধিতা করে আসছেন। প্রাথমিক সমাপনীর পর মাত্র তিন বছরের মাথায় কৈশোরে এসে শিক্ষার্থীদের বসতে হচ্ছে আরেক পাবলিক পরীক্ষায়। স্কুলে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও মাদ্রাসায় জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষায় বসতে হচ্ছে তাদের। শ্রেণিকক্ষে পাঠের বাইরে তাদের শরণাপন্ন হতে হয় কোচিং আর টিউটরের কাছে।

দেশের শিক্ষাবিদরা বলছেন, অপ্রয়োজনীয় এসব পরীক্ষায় ভালো করতে শিক্ষার্থীদের চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। অতিরিক্ত পরীক্ষার চাপে একদিকে যেমন ছাত্র-ছাত্রীদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, অপরদিকে উদ্বিগ্ন-উৎকণ্ঠায় থাকছেন অভিভাবকরাও। এসব অতিরিক্ত পাবলিক পরীক্ষাকে ‘অপ্রয়োজনীয়’ আখ্যা দিয়েছেন তারা।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান - dainik shiksha সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! - dainik shiksha শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! হিটস্ট্রোকে শিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে শিক্ষকের মৃত্যু লিখিততে প্রক্সি দিয়ে পার, মৌখিক পরীক্ষায় এসে ধরা - dainik shiksha লিখিততে প্রক্সি দিয়ে পার, মৌখিক পরীক্ষায় এসে ধরা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষক কেনো বদলি চান - dainik shiksha শিক্ষক কেনো বদলি চান ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে - dainik shiksha ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0046699047088623