জন্ম নেন হাতের নয়টি আঙুল ছাড়াই। তবুও দমে যাননি শরীয়তপুর সদর উপজেলার নিপা আক্তার। পিএসসি ও জেএসসিতে এক আঙুল দিয়ে লিখে পেয়েছেন জিপিএ ৪। এ বার আংগারিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন নিপা। তবে পরীক্ষার কেন্দ্র পড়েছে আংগারিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে। দশ আঙুলের মধ্যে নয়টি আঙুল নেই তবুও পরীক্ষা দিতে লাগছে না সাহায্যকারী (শ্রুতি লেখক)।
আংগারিয়া উচ্চ বিদ্যালয় ও নিপার পরিবার সূত্রে জানা যায়, সদর উপজেলার আংগারিয়া ইউনিয়নের চর কারাভোগ গ্রামের বিল্লাল হোসেন মোল্লা ও নাছিমা বেগমের ছোট মেয়ে নিপা আক্তার। জন্মের পর তার হাতে নয় আঙুল না থাকলেও থেমে যায়নি তার পড়ালেখা। এক আঙুল দিয়ে চালাতে পারেন মোবাইল ও সংসারের যাবতীয় কাজ। সহযোগিতা করেন মা ও বোনকে। নিপার ইচ্ছে পড়ালেখা করে হবেন একজন আদর্শ শিক্ষক। ভালো পড়ালেখা করে দাঁড়াতে চান প্রতিবন্ধীদের পাশে। এজন্য যত প্রতিবন্ধকতা আসুক সব উতরে যেতে চান লক্ষে। দেখিয়ে দিতে চান ইচ্ছের কাছে বাঁধা নয় শারীরিক প্রতিবন্ধকতা। পরীক্ষা সংশ্লিষ্টরা এবারও নিপা ভালো ফল করবে বলে আশা করছেন।
এসএসসি পরীক্ষার্থী নিপা আক্তার বলেন, প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছি। আমার হাতে নয়টি আঙুল নেই, একটি আঙুল আছে। একটি আঙুল দিয়েই আমি ছোট বেলা থেকে লেখাপড়া করছি। দোয়া করবেন এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় যেন ভালো রেজাল্ট করতে পারি। ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে একজন আদর্শ শিক্ষক হতে চাই। দাঁড়াতে চাই প্রতিবন্ধীদের পাশে।
নিপার বোন লিজা আক্তার বলেন, আমরা দুই বোন একই সঙ্গে পড়ি। নিপার হাতে একটি আঙুল। তারপরও দুই বোন মাকে বাড়ির কাজে সহযোগিতা করি।
নিপার বাবা বিল্লাল হোসেন মোল্লা বলেন, আমি দিনমজুর। আমার ইচ্ছে মেয়েকে পড়ালেখা করিয়ে শিক্ষক বানাবো। কিন্তু সংসার চালিয়ে সন্তানদের পড়ালেখা করানো কষ্টকর হয়ে পড়েছে।
আংগারিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক শিউলী রায় বলেন, প্রথম দেখলাম কোনো মানুষ এক আঙুল দিয়ে লিখে পরীক্ষা দিচ্ছে। এক আঙুল দিয়ে অন্যান্য ছেলে-মেয়েদের মতোই সমানভাবে লিখে যাচ্ছে নিপা। তার হাতের লেখাও কিন্তু অনেকের চেয়ে ভলো।
আংগারিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং জেলা এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র সচিব রনজিত কুমার সাহা বলেন, নিপার বাম হাত নেই এবং ডান হাতে মাত্র একটি আঙুল। ওই এক আঙুল দিয়ে সে অন্যদের চেয়ে সুন্দর লিখছে। নিপার উজ্জ্বল ভবিষ্যত কামনা করি।
জেলা প্রশাসক পারভেজ হাসান জানান, প্রথাগত সমাজ কাঠামোর চোখে যারা পিছিয়ে পড়া মানুষ, তারা এখন আর পিছিয়ে নেই। আর দশটি সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একজন নিপা আক্তার সেটাই হাতে কলমে করে দেখিয়েছেন।