গত এক বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭ জন শিক্ষার্থী ও তিন জন সাংবাদিককে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের ২০টি ঘটনায় ২৭ জন শিক্ষার্থী এবং তিনজন সাংবাদিককে হেনস্থা হয়েছেন বলে এক সমীক্ষায় উঠে এসেছে। যার মধ্যে মাত্র চারটি ঘটনায় প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। একই সময়ে ছাত্রলীগের নির্যাতনে হলছাড়া হয়েছেন ২৬ জন শিক্ষার্থী।
গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিতে (ডুজা) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনের এমন তথ্য প্রকাশ করে ‘স্টুডেন্টস এগেন্সট টর্চার-স্যাট’ নামে একটি মানবাধিকার সংগঠন।
সংগঠনটির হেড অব ডকুমেন্টেশন আহনাফ সাঈদ খান বলেন, আমরা পত্রপত্রিকার তথ্য ও ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে এই সমীক্ষা করেছি। প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে কয়েকগুণ বেশি।
সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক সালেহ উদ্দিন সিফাত লিখিত বক্তব্যে বলেন, গত বছরে মোট ২০টি ঘটনায় ২৭ জন শিক্ষার্থী শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এসব ঘটনার মধ্যে মাত্র চারটি ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এছাড়া, জোর করে হল থেকে বের করে দেয়া হয়েছে ২৬ জনকে এবং তিনজন সাংবাদিককে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে হেনস্তা করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, মানবাধিকারের আন্তর্জাতিক সনদগুলোতে, যেমন ইউনিভার্সাল ডিক্লেনারেশন অব হিউম্যান রাইটসের পাঁচ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- নাগরিকরা কোনো নির্যাতন, নিষ্ঠুর ও অমানবিক দণ্ডের শিকার হবে না। এই প্রতিশ্রুতি দেয়া যেমন রাষ্ট্রের দায়িত্ব, তেমনি দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দায়িত্ব শিক্ষার্থীরা যাতে কোনো নির্যাতন, নিপীড়ন কিংবা সহিংসতার শিকার না হয় তা নিশ্চিত করা।
সালেহ উদ্দিন সিফাত বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত শিক্ষার্থী নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত নির্যাতকদের তদন্তপূর্বক প্রাশাসনিক শাস্তি নিশ্চিত করুন এবং গেস্টরুম নির্যাতনের বিরুদ্ধে একটি প্রশাসনিক বিধি প্রণয়ন করা। আমরা উচ্চ আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি- বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে এভাবে শিক্ষার্থী নির্যাতন চলতে থাকলে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার অধিকার ক্ষুণ্ন হবে। পড়াশোনার জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ তারা পাবেনা।
এসময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির মিডিয়া ডিরেক্টর আনাস ইবনে মুনীর, উইমেন অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড জেন্ডার এথিক্স স্মৃতি আফরোজ সুমি ও সদস্য সাদিয়া ইয়াসমিন ঐতিহ্য।
উল্লেখ্য, ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের মানবাধিকার নিয়ে কাজ করতে স্টুডেন্টস অ্যাগেইনস্ট টরচার (স্যাট) নামে সংগঠনটির আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ হয়। আত্মপ্রকাশের প্রথম দিনই নির্যাতনের একটি পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছিলো সংগঠনটি।