এক বছরে বিসিএস শিগগিরই : চেয়ারম্যান

নিজস্ব প্রতিবেদক |

২০২০ সালের ৩০ জুনের পর পিএসসি আর কোনো সাধারণ বিসিএসের ফল ঘোষণা করেনি। ওইদিন ৩৮তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করা হয়েছিল। এরপর বিশেষ বিসিএসের সুপারিশ করা হলেও সাধারণ বিসিএসের ফল আর প্রকাশিত হয়নি। এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসার জন্য পিএসসি কী করছে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান সবার আগে শুরুর অর্থাৎ ৪০ বিসিএস দিয়েই শুরু করলেন। বললেন, ‘আমাদের পুরোটা সময় ক্যালেন্ডারের ছকে বাঁধা। একটুও সময় নেই হেরফের করার। ৪০তম বিসিএসের সুপারিশ করা হবে এ মাসেই। এর সঙ্গেই শেষ হবে ৩৮তম বিসিএসের নন-ক্যাডারের কার্যক্রম। ৪১তম বিসিএসের ভাইভা আগামী মাসেই শুরু হবে। ৪২ ছিল চিকিৎসকদের বিশেষ বিসিএস। মহামারীতে জরুরি প্রয়োজনে তাদের নেওয়া হয়েছে। আগামী জুলাই মাসেই ৪৩তমের লিখিত পরীক্ষা শুরু হবে। এর আগে ২৭ মে অনুষ্ঠিত হবে ৪৪ বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা।’

পিএসসির চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইনের বক্তব্য :

প্রিলিমিনারি নিয়ে যতটা দুশ্চিন্তা, অন্য কোনো পরীক্ষা, বিশেষ করে লিখিত বা ভাইভা নিয়ে এত দুশ্চিন্তা করতে পিএসসি কর্মকর্তাদের দেখা যায় না। এত দুশ্চিন্তার কারণ কী জানতে চাইলে চেয়ারম্যান বলেন, ‘লাখ লাখ পরীক্ষার্থী। সারা দেশে তারা ছড়িয়ে থাকেন। তাদের জন্য পরীক্ষার হল ঠিক করা কঠিন এক কর্ম। এ সময় এসএসসি-এইচএসসির মতো পাবলিক পরীক্ষা, সম্ভাব্য নির্বাচনসহ কতকিছু খেয়াল রাখতে হয়। প্রশ্নপত্র তৈরি, মডারেশন, বিকল্প সেট বানানো, ছাপানো, পাঠানো সবই স্পর্শকাতর। পান থেকে চুন খসলেই সর্বনাশ। এত পরীক্ষার্থীর খাতা মূল্যায়ন, পরীক্ষক নির্বাচন, পরীক্ষার হলে দায়িত্বপালনকারী কর্মকর্তা সবই পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে করতে হয়। পিএসসির প্রত্যেকটা কাজই ষোল আনা চাই। এক আনা কম হলে চলবে না। তাই এত দুশ্চিন্তা।’

যারা বিসিএস দেওয়ার জন্য ফরম ফিলআপ করেন তারা সবাই কি প্রিলিমিনারি দেন প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান বলেন, ‘না, একটা বড় অংশ পরীক্ষাতেই হাজির হয় না। আর একটা অংশ পরীক্ষার হলে আসে, জীবনে একবার অন্তত বিসিএস দিয়েছি এটা বলার জন্য। পরীক্ষা দিতে না এলেও আমাদের প্রশ্নপত্র ছাপাতে হয়, পরীক্ষার হল সাজাতে হয়, প্রশ্নপত্র পাঠাতে হয়। এসব উত্তরপত্র মূল্যায়নও করতে হয়।’

পিএসসির সবচেয়ে বড় সমালোচনা হচ্ছে প্রতি বছর একটা করে বিসিএস আয়োজন করতে না পারা। অর্থাৎ বিজ্ঞাপন প্রকাশ থেকে শুরু করে সুপারিশ পর্যন্ত এক বছরেই শেষ হবে। কিন্তু চার লাখের বেশি প্রার্থীর প্রিলিমিনারি নিতে গিয়ে কুলিয়ে উঠতে পারে না পিএসসি। ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সীরা বিসিএস দিতে পারেন। এতে গড়পড়তা সাত-আটবার একজন প্রার্থী বিসিএস দিতে পারেন। এ ক্ষেত্রে মেধাবীদের চেয়ে মুখস্থবিদ্যায় পারদর্শীরা কোনো কোনো ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকেন। এ অবস্থায় শিক্ষাসংশ্লিষ্টরা প্রিলিমিনারির প্রার্থীর সংখ্যা কমানোর জন্য তিনটির বেশি বিসিএসে অংশ নিতে পারার ওপর বিধিনিষেধ আরোপের কথা বলছেন। তাদের যুক্তি হচ্ছে একজন মাস্টার্স পাস চাকরিপ্রার্থী বারবার বিসিএস দিতে থাকলে মুখস্থ লিখে একসময় সে টিকে যায়। এ বিষয়ে পিএসসি কোনো কিছু ভাবছে কি না জানতে চাইলে চেয়ারম্যান বলেন, ‘এটা আমাদের বিষয় নয়।’

৪০তমের পদসংখ্যা বাড়ানোর কথা বলা হচ্ছিল। এটা কি বাড়তে পারে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পরবর্তী বিসিএসের সার্কুলার হয়ে গেছে। অর্থাৎ ৪১, ৪৩ এমনকি ৪৪-এর সার্কুলারও হয়ে গেছে। এ অবস্থায় পদসংখ্যা ঘোষিত সংখ্যার চেয়ে বাড়ানো কঠিন। কারণ ৪১ বিসিএসের জন্য যে পদের সংখ্যা ঘোষণা করা হয়েছে তা থেকে কমানো সম্ভব নয়। না কমিয়ে অন্য কোনো বিসিএসের পদ সংখ্যা বাড়বে কীভাবে? একটা বিসিএসের যখন সার্কুলার দেওয়া হয় তখন সবকিছু আমলে নিতে হয়। ওই সময়ে কত কর্মকর্তা অবসরে যাবেন, নতুন পদ সৃজন সবকিছু মিলে সার্কুলার প্রকাশ করা হয়। সেখানে পরিবর্তন করতে গেলে পরের বিসিএসে প্রভাব পড়ে।’

পিএসসি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। সংবিধানের ১৩৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী গঠিত। প্রশ্নপত্র ফাঁসের কারণে সাংবিধানিক এ সংস্থার প্রতি মেধাবীরা আস্থা হারিয়েছিলেন। গত কয়েক বছর ধরে সে ধারা থেকে বেরিয়ে এসেছে পিএসসি। বিসিএসের প্রশ্নপত্র ফাঁস হয় না, প্রশ্নপত্র নিয়েও কোনো বড় অভিযোগ নেই। কিন্তু তদবির হয় কি না জানতে চাইলে চৌকস এ আমলা বলেন, ‘পিএসসিতে তদবির হয়, অদ্ভুত ধরনের যুক্তি নিয়ে অনেকে আসেন। অনেকে এসে বলেন চাকরিটা হলে গরিব ছেলেটার বা মেয়েটার উপকার হবে। কিন্তু তারা ভাবেন না, গরিবের উপকার করতে গেলে মেধাবীকে বঞ্চিত করতে হবে। গরিবের উপকার করতে গিয়ে মেধাবীকে বঞ্চিত করতে পারে না পিএসসি। তাই তদবির করবেন না। এখানে তদবির রাখার কোনো সুযোগ নেই। কে কোন বোর্ডে ভাইভা নিতে যাবেন এটা কোনো সদস্যই জানেন না। যেদিন ভাইভা সেদিন সকালে পিএসসিতে এসে তারা জানতে পারেন কোন বোর্ডে তিনি ভাইভা নেবেন।’

চেয়ারম্যান হিসেবে আপনি কি কোনো সদস্যের কাছে তদবির করেন প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান বলেন, ‘না, আমি সেটা করতে পারি না। আমি যদি কোনো সদস্যর কাছে তদবির করি তাহলে তিনি আমাকে কী ভাববেন এটা হলে কাজ করা সম্ভব হবে না। তদবির করলে নিজেকে অনেক ছোট মনে হবে।’

আপনি দায়িত্ব নিয়ে বলেছিলেন, এক বছরের মধ্যে একটা বিসিএস শেষ করবেন। প্রশ্ন শেষ করার আগেই চেয়ারম্যান বলেন, ‘সেদিকেই যাচ্ছি। সবগুলো চলমান বিসিএস গুচ্ছিয়ে এনেছি। সবকিছু যদি স্বাভাবিক থাকে আমরা পরিকল্পনামতো এগোতে পারি তাহলে ৪৪ থেকেই এক বছরে বিসিএস শেষ হবে। যখন শুরু তখন থেকে এক বছরেই শেষ হবে। তবে ৪৩তম বিসিএসের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। ৪৩ যথাসময়ে শেষ করতে পারলেই আমরা ৪৪ এক বছরে শেষ করতে পারব। এর আগে নিশ্চিত করতে পারছি না। তবে আমাদের চেষ্টা আছে, আমাদের পরিকল্পনা আছে। ৪৪ থেকে বিসিএস এক বছরেই শেষ হবে। সাধারণত নভেম্বরে বিসিএসের বিজ্ঞাপন হয়। বিজ্ঞাপনেই বলা থাকে কবে প্রিলিমিনারি হবে। লিখিত ভাইভা শেষ করে এক বছরেই বিসিএস শেষ করার দিকে যাচ্ছি আমরা।’

সূত্র: দেশ রূপান্তর 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0022048950195312