হাইকোর্টেএক বিচারকের সকালে দণ্ড, দুপুরে জামিন ও বিকেলে রায় স্থগিত

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

আদালত অবমাননায় কুমিল্লার সাবেক চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. সোহেল রানাকে হাইকোর্টের দেওয়া এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানার রায় স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে তাঁর করা আবেদনের শুনানি নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এ আদেশ দেন। একই সঙ্গে রায়ের বিরুদ্ধে সোহেল রানার (কুমিল্লার সাবেক চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, এখন আইন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত) করা আবেদনটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে আগামী ২০ নভেম্বর শুনানির জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

এর আগে আজ বেলা সোয়া ১১টার পর আদালত অবমানায় সোহেল রানাকে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং পাঁচ হাজার টাকা জরিমানার রায় দেন বিচারপতি মো. বদরুজ্জামান ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসাইন দোলনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ। সাজার রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার শর্তে তিন ঘণ্টার মাথায় একই বেঞ্চ বেলা সোয়া দুইটার দিকে মো. সোহেল রানাকে ৩০ দিনের জামিন দেন। এরপর হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেন তিনি। বিকেল পাঁচটার পর আবেদনের শুনানি নিয়ে চেম্বার আদালত তাঁর কারাদণ্ড ও জরিমানার রায় স্থগিতের আদেশ দেন।

বর্তমানে  আইন মন্ত্রণালয় সংযুক্ত সোহেল রানার পক্ষে আদালতে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী পলাশ চন্দ্র রায় ও সেলিম আশরাফ চৌধুরী। পরে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক বলেন, সোহেল রানাকে হাইকোর্টের দেওয়া কারাদণ্ড ও জরিমানার রায় স্থগিত করেছেন চেম্বার আদালত। সোহেল রানার আবেদনটি ২০ নভেম্বর আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। সেদিন কার্যতালিকার ২০ নম্বর ক্রমিকের পর বিষয়টি থাকবে বলে উল্লেখ করেছেন চেম্বার আদালত। 

সোহেল রানাকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিনের পর দুপুরে আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক বলেছিলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির বিধান অনুসারে এক বছরের কম সাজা হলে আপিল দায়েরের শর্তে সংশ্লিষ্ট আদালত জামিন মঞ্জুর করতে পারেন। বেলা দুইটার সময় আপিল দায়ের করার শর্তে তাঁর (সোহেল রানা) জামিনের প্রার্থনা করা হয়েছে। আদালত ৩০ দিনের জামিন মঞ্জুর করেছেন। আপিল বিভাগে আবেদন করা হবে। ফলে তাঁকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতে হচ্ছে না।

এক মামলায় উচ্চ আদালতের আদেশ উপেক্ষার বিষয়ে ব্যাখ্যা দাখিল করেছিলেন কুমিল্লার সাবেক চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সোহেল রানা। ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট না হয়ে তাঁর প্রতি গত ২৮ আগস্ট আদালত অবমাননার রুল দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। রুলের শুনানি নিয়ে আজ বেলা সোয়া ১১টার পর রায় দেন বিচারপতি মো. বদরুজ্জামান ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসাইন দোলনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ। রায়ে সোহেল রানাকে ৩০ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড, ৫ হাজার টাকা জরিমানা এবং তাঁকে ৭ দিনের মধ্যে ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

রায়ের পর হাইকোর্টে আবেদনকারী পক্ষের আইনজীবী প্রণয় কান্তি রায় বলেছিলেন, সোহেল রানা নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছিলেন। তাঁর নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনায় সন্তুষ্ট না হওয়ায় হাইকোর্ট ৩০ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও জরিমানার রায় দেন। জরিমানার পাঁচ হাজার টাকা তাঁকে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল বরাবর জমা দিতে বলা হয়েছে।

যে মামলার সূত্রে আদালত অবমাননা

আইনজীবীদের তথ্যমতে, টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইনে মামুন চৌধুরী ও রিয়া আক্তার দম্পতির বিরুদ্ধে ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ মার্চ কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি মামলা হয়। মামলাটির কার্যক্রমের বৈধতা নিয়ে মামুন-রিয়া দম্পতির করা এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ৪ নভেম্বর হাইকোর্ট রুল দেন। একই সঙ্গে মামলাটির কার্যক্রম চার মাসের জন্য স্থগিত করেন হাইকোর্ট। ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ৬ মার্চ হাইকোর্ট রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মামলাটির কার্যক্রম স্থগিত করেন। হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ সত্ত্বেও কুমিল্লার তৎকালীন চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সোহেল রানা গত ১০ এপ্রিল মামলায় অভিযোগ গঠন করেন। অভিযোগ গঠনকালে আদালতে মামুন উপস্থিত ছিলেন। রিয়া অনুপস্থিত থাকায় তাঁকে পলাতক ঘোষণা করেন আদালত।

এ অবস্থায় উচ্চ আদালতের আদেশ উপেক্ষার বিষয়ে অবস্থান ব্যাখ্যা করতে সোহেল রানাকে হাজির হতে নির্দেশনা দেওয়ার জন্য হাইকোর্টে আবেদন করেন মামুন। গত ১৪ আগস্ট হাইকোর্ট এক আদেশে সোহেল রানাকে তলব করেন। উচ্চ আদালতের আদেশ উপেক্ষার বিষয়ে অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গত ২১ আগস্ট তাঁকে হাইকোর্টে হাজির হতে বলা হয়। ধার্য তারিখে তিনি হাইকোর্টে হাজির হন। পরবর্তী সময়ে জবাব দাখিল করেন। তবে জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় গত ২৮ আগস্ট সোহেল রানার প্রতি স্বতঃপ্রণোদিত আদালত অবমাননার রুল দেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি ৯ অক্টোবর তাঁকে হাইকোর্টে হাজির হতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

আদালত অবমাননার রুলের পর গত ৩১ আগস্ট সোহেল রানা মামলাটির অভিযোগ গঠনের আদেশ প্রত্যাহার করেন। হাইকোর্টের ধার্য তারিখে সোহেল রানা সময়ের আরজি জানান। হাইকোর্ট ১২ অক্টোবর পরবর্তী তারিখ রাখেন। আদালতে সোহেল রানা উপস্থিত ছিলেন। তাঁর পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক শুনানি করেন, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী সেলিম আশরাফ চৌধুরী। অন্যদিকে মামুন চৌধুরীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী প্রণয় কান্তি রায়।  

আদালত অবমাননার রুলের পরিপ্রেক্ষিতে সোহেল রানা নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন। তাঁর ক্ষমা প্রার্থনায় সন্তুষ্ট না হওয়ায় হাইকোর্ট তাঁকে জেল-জরিমানা করে রায় দেন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
গুচ্ছ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কমপ্লেইন বক্স বন্ধ - dainik shiksha গুচ্ছ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কমপ্লেইন বক্স বন্ধ পদত্যাগে বাধ্য করা অধ্যক্ষকে ফুলেল শুভেচ্ছায় ফেরালেন শিক্ষার্থীরা - dainik shiksha পদত্যাগে বাধ্য করা অধ্যক্ষকে ফুলেল শুভেচ্ছায় ফেরালেন শিক্ষার্থীরা শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কম দামে বিটিসিএলের ইন্টারনেট দেয়া হবে: তথ্য উপদেষ্টা - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কম দামে বিটিসিএলের ইন্টারনেট দেয়া হবে: তথ্য উপদেষ্টা শিক্ষকের ছোড়া স্কেলের আঘাতে শিক্ষার্থীর চোখ হারানোর অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষকের ছোড়া স্কেলের আঘাতে শিক্ষার্থীর চোখ হারানোর অভিযোগ দুই শিক্ষকের বহিষ্কারের দাবিতে বাউবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ - dainik shiksha দুই শিক্ষকের বহিষ্কারের দাবিতে বাউবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ হলগুলোকে সন্ত্রাসমুক্ত করে ছাড়বো : রাবি উপাচার্য - dainik shiksha হলগুলোকে সন্ত্রাসমুক্ত করে ছাড়বো : রাবি উপাচার্য কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0051119327545166