এখনো অনুদানের টাকা পাননি ননএমপিও শিক্ষকরা

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি |

ঈদুল ফিতরের আগে প্রধানমন্ত্রী টাকা বরাদ্দ দিলেও আজ পর্যন্ত বিশেষ অনুদানের টাকা পাননি ননএমপিও শিক্ষক-কর্মচারীরা। এমনটাই অভিযোগ জানিয়েছেন সারাদেশের ননএমপিও শিক্ষকরা। এদিকে টাকা না পাওয়ায় ননএমপিও শিক্ষক কর্মচারীরা দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন। 

যদিও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, শিক্ষকদের জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের জটিলতায় ননএমপিও শিক্ষক কর্মচারীদের অনুদানের টাকা ছাড় করা যায়নি। শিক্ষকদের জাতীয় পরিচয় পত্রের তথ্যে ভুল থাকায় এ জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। তবে, শিক্ষকদের তথ্য যাচাই বাছাই করে দ্রুত ননএমপিও শিক্ষক কর্মচারীদের অনুদানের টাকা ছাড় করা হবে বলেও জানান মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের কমকর্তারা।

আরও পড়ুন : দৈনিক শিক্ষাডটকম পরিবারের প্রিন্ট পত্রিকা ‘দৈনিক আমাদের বার্তা’

শিক্ষকরা অভিযোগ করে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, ‘অদৃশ্য কারণে আজও প্রধানমন্ত্রীর দেয়া বিশেষ অনুদানের টাকা তারা পাননি। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কেউ কিছু বলতেও পারছেন না। এ টাকা কবে পাওয়া যাবে সেটাও নিশ্চিত নয়।’

শিক্ষকরা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, সরকার কর্তৃক প্রতিষ্ঠান স্বীকৃতি, শিক্ষক-কর্মচারীদের বৈধ নিয়োগ, পাঠদান, শিক্ষা কার্যক্রমসহ সকল নির্দেশ আদেশ পালন করেও বেতন-ভাতা পান না ননএমপিও শিক্ষক-কর্মচারীরা। অনেক স্বপ্ন আর প্রত্যাশা নিয়ে মহান এই পেশাকে ধরে থাকলেও বছরের পর বছর এমপিওভুক্ত হতে না পারায় তারা চরম হতাশা আর বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন। এ পরিস্থিতিতে রয়েছে দেশের হাজার হাজার ননএমপিও শিক্ষক-কর্মচারী। পরিবার-পরিজন নিয়ে তারা না পারছেন বাঁচতে, না পারছেন মরতে। কাগজে-কলমে ‘মহান পেশা’ আজ তাদের জন্য ‘কাল’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরই মাঝে ঈদের আগে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া বিশেষ অনুদানের টাকাও মাস পেরিয়ে গেলেও আজো পান নি। কবে পাবেন তাও নিশ্চিত নন। শিক্ষকরা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলছেন, আমরা অনুদান চাই না, আমরা চান বেতন-ভাতা তথা এমপিওভুক্তি।

সাতক্ষীরার কলারোয়ার বোয়ালিয়া ডিগ্রি কলেজের ননএমপিও ইংরেজি প্রভাষক শেখ মো.আলকামুন বাবলু দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ‘জানতে পেরেছি এনআইডির সাথে মোবাইল ফোন নম্বরের একাউন্ট সঠিক না থাকায় শিক্ষকদের টাকা আসছে না। এটা সংশ্লিষ্টদের একটা খোড়া অজুহাত ছাড়া আর কিছু নয়। কারণ সকলের তো একই সমস্যা নয়। যাদের সঠিক আছে তাদের টাকা তো আসতে পারতো। অথবা গত বছরের মতো চেকের মাধ্যমেও দিতে পারতো। নেহাতই অকারণে প্রক্রিয়াটি দীর্ঘায়িত করা হচ্ছে।’

দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব ও ফেসবুক পেইজটি ফলো করুন

ননএমপিও কর্মচারী রাশেদুল ইসলাম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ‘ঈদের আগে শুনলাম প্রধানমন্ত্রী আমাদের টাকা দিচ্ছেন। অথচ শিক্ষা দপ্তরের স্যারদের কারণে সেই টাকা কোন ঈদে পাবো, সেটা জানি না।’

একটি ননএমপিও কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাম প্রকাশের না করার শর্তে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ‘বাংলাদেশের শিক্ষাখাতে লালফিতার দৌরাত্ম আর সহজ কাজ দীর্ঘায়িত করে কঠিন করে ফেলা বছরের পর বছর চলে আসছে। তা না হলে বাংলাদেশে ননএমপিও বলে কোন শব্দ থাকতো না। এমপিও যোগ্যতা অর্জন করেও যখন বেতন-ভাতা পাই না, তখন অনুদানের টাকা কবে আসবে সেটাও ভাবি না।’

জানা গেছে, ঈদুল ফিতরের আগে ১২মে করোনাভাইরাসের কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় আর্থিক সংকটে পড়া সারা দেশের ননএমপিও
শিক্ষক-কর্মচারীদের অনুদান প্রদানের জন্য বরাদ্দ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শিক্ষকদের ৫ হাজার ও কর্মচারীদের আড়াই হাজার টাকা করে বরাদ্দ দেয়া হবে বলে জানানো হয়েছিল।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের (পিএমও) প্রেস উইংয়ের এক বিবৃতিতে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছিলো। এতে বলা হয়েছিল, সারাদেশের সাধারণ
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১ লাখ ৫ হাজার ৭৮৫ জন, কারিগরি ও মাদারাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার ৬১ হাজার ৪৪০ জন শিক্ষক কর্মচারীকে এ অনুদান দেয়া হচ্ছে। এসব শিক্ষক ও কর্মচারীদের অনুদান দেয়ার জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগকে প্রায় ৭৪ হাজার ৮১৭ কোটি টাকা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রত্যেক নন-এমপিও শিক্ষক এককালীন অনুদান পাবেন ৫ হাজার টাকা এবং প্রত্যেক কর্মচারী পাবেন ২ হাজার ৫০০ টাকা করে। প্রধানমন্ত্রী মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ১ লাখ ৫ হাজার ৭৮৫ জন নন-এমপিও শিক্ষক ও কর্মচারীর জন্য ৪৬ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা এবং কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের ৬১ হাজার ৪৪০ নন-এমপিও শিক্ষক ও কর্মচারীর জন্য ২৮ হাজার ১৮৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন।’

নিজেদের ন্যায্য বেতন-ভাতা তথা এমপিওভূক্তির দাবি জানানোর পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী দেয়া বিশেষ অনুদানের টাকা পাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন সারাদেশের ননএমপিও শিক্ষক-কর্মচারীরা।

ননএমপিও শিক্ষক কর্মচারীদের অনুদানের টাকার বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ননএমপিও শিক্ষক কর্মচারীদের অনুদানের টাকার বরাদ্দ পাওয়া গেছে। তবে, শিক্ষক-কর্মচারীদের এনআইডি ও মোবাইল ব্যাকিং অ্যাকাউন্টের তথ্যে গরমিল থাকায় টাকা পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। আর ত্রুটিপূর্ণ তথ্য অনুসারে টাকা পাঠালে একজনের টাকা অন্যজনের কাছে চলে যেতে পারে। তাই সে তথ্যগুলো যাচাই বাছাই চলছে। আশা করি, শিগগিরই টাকা ছাড় করা যাবে।

জানা গেছে, গত বছরও করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ননএমপিও শিক্ষক কর্মচারীদের বিশেষ অনুদানের টাকা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তখন ডিসি ও ইউএনওদের তত্ত্বাবধায়নে চেকের মাধ্যমে শিক্ষক কর্মচারীদের টাকা দেয়া হয়েছিল।

শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে সয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক শিক্ষা ডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0024151802062988