২০২৪ শিক্ষাবর্ষে অষ্টম ও নবম শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন হচ্ছে। সে হিসেবে শিক্ষাবর্ষ শুরু হতে মাত্র সাড়ে পাঁচ মাস সময় রয়েছে। আবার আগামী শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যপুস্তক ছাপার কাজ ২-৩ তিন মাস আগেই শেষ করার পরিকল্পনা নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
অথচ এখন পর্যন্ত নবম শ্রেণীর পাঠ্যক্রম (পান্ডুলিপি) রচনার কাজই শেষ হয়নি। অষ্টম শ্রেণীর পাঠ্যক্রম লেখার কাজ চূড়ান্ত না করেই ‘তড়িগড়ি’ সম্প্রতি দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। গত ১৭ জুলাই এই বইয়ের দরপত্র ‘উন্মুক্ত’ করা হয়। এখন মূল্যায়ন কাজ চলছে।
এ কারণে চলতি শিক্ষাবর্ষের মতো আগামী শিক্ষাবর্ষেও নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে ‘জটিলতা’ পাকানোর আশঙ্কা করা হয়েছে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের এক প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, ‘অষ্টম শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের কাজ শেষ হয়েছে। এখন ইলাস্ট্রেশন (চিত্রণ) চলমান রয়েছে। নবম শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের কাজ শুরু হয়নি।’
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খান স্বাক্ষরিত সর্বশেষ (১৭ জুন প্রকাশিত) মাসিক সমন্বয় সভার কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছে, ‘গত বছরের তুলনায় এ বছরের পাঠ্যপুস্তক ছাপানোর কাজ অনেকটাই এগিয়ে আছে। ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তকের দরপত্র মূল্যায়ন চলছে। অষ্টম ও নবম শ্রেণীর ক্ষেত্রে কিছুটা জটিলতা রয়েছে।’
গত বছরের তুলনায় এ বছরে দরপত্র পাঁচ মাস আগে আহ্বান করা হচ্ছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘নির্দিষ্ট সময়ে পান্ডুলিপি পাওয়া গেলে অষ্টম ও নবম শ্রেণীর পুস্তকসহ সব পাঠ্যপুস্তক যথাসময়ে মুদ্রণ সম্পন্ন হবে।’
এ বিষয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম বুধবার (২৬ জুলাই) সংবাদকে জানিয়েছেন, ‘অষ্টম শ্রেণীর বইয়ের পান্ডুলিপি লেখা শেষ হয়েছে। সম্পাদনার কাজও শেষের পথে। ইতোমধ্যে বই ছাপার দরপত্রও আহ্বান করা হয়েছে। এখন দরপত্র মূল্যায়ন হচ্ছে।’
আর নবম শ্রেণীর বই লেখার কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আশা করছি, চলতি মাসেই তা শেষ করা যাবে।’
যদিও এনসিটিবির অন্য দু’জন কর্মকর্তা বুধবার সংবাদকে জানিয়েছেন, অষ্টম শ্রেণীর বই লেখার কার্যক্রম এখন চূড়ান্ত হয়নি। বই ছাপার প্রস্তুতি নেয়ার জন্য শুধু বইয়ের পৃষ্ঠা সংখ্যা জানিয়ে দেয়া হয়েছে। এখন সম্পাদনার কার্যক্রম চলমান।
অষ্টম ও নবম-দশম শ্রেণীতে ১৩টি করে বিষয়ের বই পাঠদান হবে। এর মধ্যে একজন শিক্ষার্থীকে মোট দশটি বই পড়তে হয়। বিভিন্ন ধর্মের বই মিলিয়ে প্রতি শ্রেণীতে মোট বই ১৩টি।
এখন অষ্টম শ্রেণীর বইয়ের ‘সিডি’ বা ‘কনটেন্ট’ প্রস্তুতের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আর নবম শ্রেণীর বই লেখার কার্যক্রম এখনও শেষ হয়নি। নতুন বইয়ের পান্ডুলিপি প্রণয়নের সঙ্গে সম্পৃক্তদের সম্ভাব্য সময় অর্থাৎ জুনের মধ্যে নতুন শিক্ষাক্রমের বই লেখার কাজ শেষ তাগিদ দিয়েছিল এনসিটিবির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। অন্যথায় পুরনো বই ছাপার প্রস্তুতিও নিয়ে রাখা হয়েছে। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকরা নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেরই তাগিদ দিয়ে আসছেন বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
এনসিটিবি পাঠ্যপুস্তক ছাপানোর ক্ষেত্রে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত সব বিধিবিধান অনুসরণ এবং পুস্তকসমূহের পান্ডুলিপি প্রণয়নের ক্ষেত্রে ‘চ্যালেঞ্জসমূহ’ দ্রুত সমাধান করে মুদ্রণ কাজের গুণগতমান নিশ্চিত করাসহ যথাসময়ে সব পুস্তকের মুদ্রণ কাজ সুসম্পন্ন করার নির্দেশ দেয়া হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওই সভায়।
সাধারণত ডিসেম্বরের মধ্যে পাঠ্যবই ছাপা শেষ করতে হয়। কিন্তু এবার ২-৩ মাস আগে ২০২৪ শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যপুস্তক ছাপা শেষ করতে চাই এনসিটিবি। কারণ আগামী বছরের প্রথম দিকে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। এর আগে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিরূপ থাকতে পারে।
এজন্য সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রাথমিক এবং অক্টোবরের মধ্যে ২০২৪ শিক্ষাবর্ষের মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তক ছাপার পুরো কার্যক্রম শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে এনসিটিবি।
অক্টোবরের মধ্যে মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তক ছাপার কার্যক্রম শেষ করতে হলে চার মাসেরও কম সময় পাচ্ছে এনসিটিবি। কিন্তু দরপত্র আহ্বান থেকে কার্যাদেশ দেয়া এবং বই ছাপা শেষ করতে অন্তত ছয় মাস প্রয়োজন বলে এনসিটিবির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
এনসিটিবির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই), মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি), কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর এবং মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে ২০২৪ শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যপুস্তকের ‘চূড়ান্ত’ চাহিদাপত্র এখন পর্যন্ত পাননি।
এ জন্য গত বছরের পাঠ্যপুস্তকের চাহিদার আলোকেই এবার প্রায় ৩৫ কোটি পাঠ্যবই ছাপার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে পাঠ্যপুস্তক বোর্ড। এর মধ্যে মাধ্যমিক স্তরের প্রায় এক কোটি ৬৭ লাখ শিক্ষার্থীর জন্য প্রায় ২৩ কোটি বই ছাপা হচ্ছে। বাকি বই প্রাথমিক শিক্ষা স্তরের।
আগামী দু-এক মাসের মধ্যে পাঠ্যপুস্তকের চূড়ান্ত চাহিদাপত্র পাওয়ার আশা করছেন এনসিটিবি কর্মকর্তারা। চূড়ান্ত চাহিদাপত্র পাওয়ার পর বই ছাপার কাজ পাওয়া ছাপাখানা মালিকদের ‘বর্ধিত’ তালিকা দিয়ে দেয়া হবে।
চলতি শিক্ষাবর্ষে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রমের বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। কিন্তু যথাযথ প্রস্তুতি না নিয়ে গত বছর এই স্তরের নতুন শিক্ষাক্রম তৈরি করা হয়। এতে বই ছাপার পর প্রচুর ‘ভুল-ভ্রান্তি ও অসঙ্গতি’ শনাক্ত হয়। তাছাড়া নতুন শিক্ষাক্রমের ওপর দেশের সব শিক্ষকের প্রশিক্ষণও হয়নি।
নানা বিতর্কের পর এ বিষয়ে একাধিক তদন্ত কমিটি ও বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়। এরপর ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর ২২টি বইয়ের ৪২১টি সংশোধনী দেয়া হয়। তবে এসব ভুল-অসঙ্গতির জন্য দায়ীদের কোন শাস্তি হয়নি।
আবার শিক্ষাক্রমের প্রায় চার মাস শেষে এই সংশোধনী প্রকাশ করায় এর বাস্তবায়ন নিয়েও শঙ্কিত শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এই পরিস্থিতিতে আগামী শিক্ষাবর্ষে অষ্টম ও নবম শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রমের বাস্তবায়ন শুরু হচ্ছে।