এগিয়ে যাচ্ছে পঞ্চগড়ের সাইকেল বালিকারা

পঞ্চগড় প্রতিনিধি |

পঞ্চগড়ের শহর কিংবা গ্রাম, সর্বত্রই এখন দেখা মিলবে ‘সাইকেল বালিকা’দের। দিন দিন বেড়েই চলেছে এ মেয়েদের সংখ্যা।

বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে আলোর পথে এগিয়ে যাচ্ছে তারা। রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে সাইকেলে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে প্রতিদিন স্কুলে যাচ্ছে এই মেয়েরা। ফলে স্কুলে তাদের উপস্থিতিও বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে।
মাত্র ১৫ থেকে ২০ বছর আগেও পঞ্চগড়ে কোনো মেয়ে সাইকেল চালানোর কথা কল্পনা করতে পারত না। যদিওবা কেউ চালাত, শুনতে হতো কটূক্তি। ধীরে ধীরে মানুষের মানসিকতায় পরিবর্তন এসেছে। এখন জেলার বিভিন্ন গ্রামের মেয়েরা স্বাধীনভাবে যাতায়াতের জন্য বাহন হিসেবে সাইকেলকেই বেছে নিচ্ছে। অন্যদিকে সরকারি-বেসরকারিভাবেও প্রত্যন্ত এলাকার মেধাবী ছাত্রীদের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে সাইকেল।

পরনে ইউনিফর্ম, কাঁধে ব্যাগ।দল বেঁধে এভাবে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ কিলোমিটার পথ সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যাচ্ছে মেয়েরা। একইভাবে বাড়িও ফিরছে। একসঙ্গে চলাফেরা করায় কেউ তাদের উত্ত্যক্ত করার সাহস পর্যন্ত পায় না। ধর্মীয় গোড়ামি, কুসংস্কার—কোনো প্রতিবন্ধকতাই দমিয়ে রাখতে পারেনি এ মেয়েদের।
সাইকেলে যাতায়াত করায় খরচ কমার পাশাপাশি তাদের মা-বাবার দুশ্চিন্তাও অনেকটা কমেছে। গাড়ি-ঘোড়ার জন্য আগের মতো আর রাস্তায় অপেক্ষা করতে হয় না তাদের। ফলে সময়মতো ক্লাসেও উপস্থিত থাকতে পারছে। খেতে হচ্ছে না শিক্ষকদের বকুনিও। সাইকেল তাদের জীবনে এনে দিয়েছে গতি ও নিরাপত্তা।বোদা পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী শাম্মী আক্তার বলে, ‘স্কুল থেকে আমার বাড়ি সাত কিলোমিটার দূরে। সময়মতো যানবাহন পাওয়া যেত না। তাই স্কুলে পৌঁছাতে দেরি হতো। এখন সাইকেলে আসি। তাই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই স্কুলে পৌঁছাতে পারি। ’ অন্যদিকে সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী পূজা রানী বলে, ‘আগে অনেক সময় বখাটেরা আমাদের বিরক্ত করত। এখন সবাই মিলে সাইকেলে যাতায়াত করি। তাই কেউ কিছু বলার সাহস পায় না। ’

অভিভাবক বোদা সরকারপাড়ার সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ওরা যখন দল বেঁধে স্কুলে যায় আমাদেরও অনেক ভালো লাগে। ’

এনজিওকর্মী এ কে আজাদ বলেন, ‘আগে আমাদের এনজিওকর্মীরা সাইকেল ব্যবহার করত বলে মানুষ নানা কটূক্তি করত। এখন মানুষের মধ্যে পরিবর্তন এসেছে। তাই পঞ্চগড়ের সব স্কুলেই মেয়েদের সাইকেল নিয়ে যেতে দেখা যায়। ’

বোদা পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আব্দুল মোতালেব বলেন, ‘আগে মেয়েরা সময়মতো স্কুলে না এলে আমরা বকা দিতাম। কিন্তু এখন সাইকেলে আসায় ওরা ক্লাসে সময়মতো উপস্থিত থাকতে পারছে। স্কুলে তাদের উপস্থিতিও লক্ষ করার মতো। ’ পঞ্চগড় সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেখা রানী দেবী বলেন, ‘মেয়েদের সাইকেল নিয়ে স্কুলে আসতে দেখলে বুকটা ভরে যায়। আমাদের সময়তো আমরা সাইকেল চালানোর কথা ভাবতেও পারতাম না। এখন ওরা সাইকেল নিয়ে দূর-দূরান্ত থেকে সময়মতো স্কুলে আসছে। ’

জেলা প্রশাসক অমল কৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, ‘সব বাধা পেরিয়ে পঞ্চগড়ের বালিকারা এখন সাইকেল নিয়ে দূর-দূরান্তের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়তে যাচ্ছে। দুরন্ত এসব বালিকাদের উৎসাহ দিতে আমরা দরিদ্র ও মেধাবীদের মধ্যে সাইকেল বিতরণ করে যাচ্ছি। আমাদের প্রত্যাশা, এভাবেই এই সাইকেল বালিকারা আলোর পথে আরো অনেক দূর এগিয়ে যাবে। ’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
একাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু ৩০ জুলাই - dainik shiksha একাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু ৩০ জুলাই অবসর কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার ফের তাগিদ - dainik shiksha অবসর কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার ফের তাগিদ সুধা রানী হাদিসের শিক্ষক পদে : এনটিআরসিএর ব্যাখ্যা - dainik shiksha সুধা রানী হাদিসের শিক্ষক পদে : এনটিআরসিএর ব্যাখ্যা শরীফ-শরীফার গল্প বাদ যাচ্ছে পাঠ্যবই থেকে - dainik shiksha শরীফ-শরীফার গল্প বাদ যাচ্ছে পাঠ্যবই থেকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে শূন্যপদের ভুল চাহিদায় শাস্তি পাবেন কর্মকর্তা ও প্রধান শিক্ষক - dainik shiksha শূন্যপদের ভুল চাহিদায় শাস্তি পাবেন কর্মকর্তা ও প্রধান শিক্ষক এক রুমে ৩৫ ছাত্রী অসুস্থ, পাঠদান বন্ধ - dainik shiksha এক রুমে ৩৫ ছাত্রী অসুস্থ, পাঠদান বন্ধ যৌ*ন হয়রানির অভিযোগে প্রধান শিক্ষক কারাগারে - dainik shiksha যৌ*ন হয়রানির অভিযোগে প্রধান শিক্ষক কারাগারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032670497894287