এনসিটিবির বই ছাপানো ও কিছু কথা

মাছুম বিল্লাহ |

জনগণের আকাঙ্ক্ষা ও বাস্তবতার নিরিখে অন্তবর্তীকালীন সরকার ইতোমধ্যেই ঘোষণা করেছে, অভিজ্ঞতাভিত্তিক নতুন শিক্ষাক্রম থাকছে না,  শিখনফল তথা পরীক্ষাভিত্তিক শিক্ষাক্রমেই আমাদের ফেরত যেতে হচ্ছে। এতে বিনামূল্যের পাঠ্যবই ছাপার কাজের ক্ষেত্রে অনেকটা সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। কারণ, শিক্ষা উপদেষ্টা নতুন শিক্ষাক্রম বাতিলের পাশাপাশি বিগত সরকারের সময়ে রচিত পাঠ্যবইয়ের কাভার, কনটেন্ট বদলে ফেলারও ইঙ্গিত দিয়েছেন। এর ফলে বিগত সময়ে টেন্ডার হওয়া বা পাণ্ডুলিপি প্রস্তত হওয়া বইগুলোর ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে চিন্তা করতেই হচ্ছে। এনসিটিবি এবং ছাপাখানার মালিকরাও জানেন না পাঠ্যবই নিয়ে কী হতে যাচ্ছে।

পাঠ্যবই সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন বছরের প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্যবই তুলে দেয়ার রেওয়াজ ধরে রাখতে চাইলে সরকার থেকে দ্রুত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত  আসতে হবে। আমরা জানি নতুন শিক্ষাক্রমের বই ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির  শিক্ষার্থীরা ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ থেকে পড়ছেন। ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দে শিক্ষার্থীরা দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রমের পাঠ্যবই পড়ছেন। আগামী বছরের জন্য চতুর্থ, পঞ্চম ও দশম শ্রেণির বই লেখার কাজ চলছে। এরই মধ্যে কয়েকটি শ্রেণির বইয়ের টেন্ডার দেয়া হয়েছে। বাকিগুলোও টেন্ডার হওয়ার পথে। কিন্তু জুলাই থেকে শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনের ফলে বই প্রণয়নের কাজে ভাটা পড়ে। গত ৫ আগস্ট দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের ফলে বিপাকে পড়ে যায় সরকারি সংস্থাগুলো। ওইদিনের পর থেকেই সরকারি বিভিন্ন সংস্থার প্রধানদের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। এই তালিকায় এনসিটিবির চেয়ারম্যানকেও পদত্যাগ করতে হয়েছে। 

ঊধ্বর্তন আরো কয়েকটি পদ ফাঁকা থাকার কারণে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পাঠ্যবই নিয়ে ভাবার সময় পায়নি এনসিটিবি। শিক্ষা উপদেষ্টা ইতিমধ্যে বলেছেন যে, নতুন শিক্ষাক্রমে অনেক দুর্বলতা রয়েছে এবং মাধ্যমিক পর্যায়ে এটি অনেক দুর্বল। অনেক ধন্যবাদ মাননায় উপদেষ্টাকে। বিষয়টি আমরা পূর্ববর্তী কর্তৃপক্ষকে কোনোভাবেই যেনো বোঝাতে পারছিলাম না। হাতে সময় খুব কম, যতোটুকু পারা যায়, পরিবর্তন করা হবে। জানুয়ারিতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বই বিতরণ করতে হবে অথচ এখন আগস্টের শেষ। এই অল্প সময়ের মধ্যে বই তৈরি করতে হবে, কি ধরনের মুল্যায়ণ হবে সেটি ঠিক করতে হবে, বইয়ের মলাটসহ ভেতরের অনেক লেখা পরিবর্তন করতে হবে। একটি কমিটি গঠন করে বইয়ের কন্টেন্টের পরিবর্তন আনতে হবে। এগুলো সবই সময় সাপেক্ষ ও জটিল কাজ। তারপরেও সরকারকে এগুলো দ্রততার সঙ্গে করতে হবে। 

দেশের পট পরিবর্তনের কারণে বই ছাপার কাজে রাজি হচ্ছে না প্রেস মালিকরা। তাদের বক্তব্য হচ্ছে, এই সময়ে সদ্য সাবেক সরকারের ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন তথ্য রয়েছে–এমন কোনো কনটেন্ট বইয়ে থাকলে এবং সেটি ছাপা হলে তাদের সমস্যা হতে পারে। তাই তারা প্রথম কনটেন্ট কী হবে সেটি আগে চাচ্ছেন। তা ছাড়া ছাপাখানা মালিকরা টেন্ডারের শিডিউল কিনে রাখায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে জানা যায়। তাই তারা খুব বেশি পরিবর্তন না করে কিছু কনটেন্ট বাদ দিয়ে বাকিগুলো ঠিক রেখে প্রশ্ন যোগ করে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন। আমাদের প্রস্তাব হচ্ছে, ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের প্রেস মালিকদের কাছে থাকার কথা। না থাকলেও এনসিটিবিতে আছে। সেই বইগুলো অনুসরণ করা হলে অনেক জটিলতা কমে যাবে। কারণ,  ওই সময়কার সিলেবাস, বইয়ের কনটেন্ট ও মূল্যায়ন পদ্ধতি সবই শিক্ষকদের জানা। তাদের এ বিষয়ে প্রশিক্ষণও রয়েছে। এনসিটিবি তথা সরকারকে যেটি করতে হবে, মূল্যায়নের ধরনটি পরিবর্তন করতে হবে। মূল্যায়ন পদ্ধতিটি এমনভাবে করতে হবে যাতে শিক্ষার্থীদের আসলেই বই পড়তে হয়, ক্লাস করতে হয়, নিজ থেকে লিখতে হয় এবং বর্ণনা করার ক্ষমতা অর্জন করতে হয়। প্রতিটি বিষয়ের বইয়ের সঙ্গে প্রশ্নের স্যাম্পল কমপক্ষে দুই ধরনের দিতে হবে যাতে বিদ্যালয়গুলো সেগুলো সরাসরি অনুসরণ করে মূল্যায়ন কাজ করতে পারে। প্রশ্ন যদি এনসিটিবি থেকে কবে ধরন আসবে, আসতে আসতে বছর কেটে গেল যেটি হয়েছিলো নতুন শিক্ষাক্রমের নামে সেটি যাতে না হয়। এবার যারা নবম শ্রেণিতে পড়েন এবং তাদের দশম শ্রেণরি বই যদি ইতোমধ্যে তৈরি হয়ে থাকে তাহলে একদল বিশেষজ্ঞ কমিটি দ্বারা সেগুলো চেক করাতে হবে যাতে নবম শ্রেণির বইয়ের সঙ্গে অনেকটা মিল থাকে। শুধুমাত্র মুল্যায়ন প্রক্রিয়াটি যাতে নতুন কারিকুলামে উল্লিখিত অবাস্তব ও এলোমেলো না হয়। সেটি করলেই দশম শ্রেণির অর্থাৎ এসএসসি পর্যন্ত সমাধান হয়ে যাবে। 

এখানে আর একটি বিষয় উল্লেখ না করলেই নয়। আমরা দেখি প্রতিবছর ৩৬-৩৭ কোটি বই ছাপা হয়। এনসিটিবির সব কর্মকর্তা ও কর্মচারী বিষয়টি নিয়ে ব্যস্ত এবং মহাব্যস্ত থাকেন। এনসিটিবিতে গিয়ে দেখা যায় কর্মকর্তারা নেই, তাদের চেয়ার ফাঁকা। কারণ কী? তারা সবাই কোথায় বই ছাপা হচ্ছে, কোথায় প্যাকিং হচ্ছে, কীভাবে ট্রাক ভাড়া করা হচ্ছে, কোথায় কোথায় বই পাঠানো হচ্ছে ইত্যাদি নিয়ে মহাব্যস্ত। কারণ, ৩৬ কোটি বই ঠিক করা, কাগজ ক্রয় এবং ছাপানো এবং মাঠ পর্যায়ে পৌঁছে দেয়া চাট্টিখানি কথা নয়। আমার প্রশ্ন হচেছ, বই ছাপানো, কাগজ ক্রয় করা, প্রেস ভিজিট করা কি এনসিটিবির মূল কাজ? তাদের মূল কাজ হচ্ছে জাতির জন্য একটি সময়োপযোগী ও বাস্তবমুখী কারিকুলাম উপহার দেয়া। সেই কারিকুলাম অনুযায়ী সঠিকভাবে গ্রাম-গঞ্জে শিক্ষাদান হচ্ছে কি না সেটি পেশাগতভাবে মনিটরিং করা। স্কুল ঘুরে ঘুরে চা-বিস্কুট খেয়ে হাট বাজার করে ফেরা নয়। সেটি গভীরভাবে দেখা, শিক্ষার্থীরা ডাইজেস্ট করতে পারছেন কি না। শিক্ষকেরা ঠিকভাবে ডেলিভার করতে পারছেন কি না। সমস্যা কোথায়। সেগুলো সমাধানের বাস্তবমুখী পদক্ষেপ কী কী হতে পারে ইত্যাদি নিয়ে ব্যস্ত থাকার কথা। এনসিটিবিতে উন্নতমানের এবং পেশাগত একটি গবেষণা সেল থাকতে হবে। প্রতিটি বিষয় নিয়ে নিরন্তর গবেষণাপরিচালনা করতে হবে। 

প্রথম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সকল শিক্ষার্থীদের সকল বিষয়ের বই বিনামূল্যে দেয়ার প্রয়োজন আছে কি? এনসিটিবির যে লোকবল বা কাঠামো তাতে আমরা এই কাজ সঠিকভাবে করতে পারি কি? আমাদের প্রাথমিক শিক্ষা যেহেতু অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক তাই বিনামূল্যের বই শুধুমাত্র প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের সরবরাহ করতে পারি এবং সেটি করবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। মাধ্যমিকের বই বিনামূল্যে দেয়ার প্রয়োজন নেই, যেভাবে উচ্চ মাধ্যমিকে খোলা বাজারে শিক্ষার্থীরা বই কেনে, সেভাবে করা উচিত। বিনামূল্যে বই দিলে যে সমস্যাগুলো হয় সেগুলো হলো।

ক. এনসিটিবির ওপর পুরো চাপ পড়ে ফলে প্রতিবছরই বই এলোমেলো হয়। যেমন-বাংলা বইয়ের সঙ্গে ইসলামিয়াত, ইংরেজির সঙ্গে গণিত বইয়ের কিয়দংশ চলে আসে। 
খ. বইয়ে প্রচুর মুদ্রণজনিত ও তথ্যগত ভুল থাকে। ভুল দেখার কোনো সময় কেউ পান না। কারণ, টার্গেট হচ্ছে জানুয়ারির প্রথম দিন কিংবা প্রথম সপ্তাহ বই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছানো অথচ কোনো বছরই বই মার্চের আগে শিক্ষার্থীদের হাতে সব এলাকায় পৌঁছে না। কোনোভাবেই বইয়ের মান নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না। 
ঘ. বই খোলা বাজারে না পাওয়ার ফলে একজন শিক্ষার্থী বই ছিঁড়ে ফেললে বা হারিয়ে ফেললে বছরের বাকি মাসগুলোতে বই ছাড়া তাদের বিদ্যালয়ে যেতে হয়। তাই বই হতে হবে সবার জন্য উন্মুক্ত।
ঙ. শিক্ষকতার বাইরেও যারা বই পড়েন, বই নিয়ে ক্রিটিক্যাল কিছু চিন্তা করেন, গবেষণা করেন তারা স্বাচ্ছন্দ্যে এনসিটিবির বই ব্যবহার করতে পারেন না। অনলাইনে বই সব সময় সঠিকভাবে পাওয়া যায় না। 
চ. এনসিটিবি কর্তৃক দুই তিনশত টাকার বইয়ের জন্য মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের পড়া থেমে থাকবে না বরং এতে আরো সমস্যা হচ্ছে। তারা এসব ঝামেলার কারণে কোচিংয়ে, প্রাইভেটে ও নোট গাইডের পেছেন এনসিটিবির বইয়ের কয়েকগুণ বেশি অর্থ খরচ করে। একান্ত প্রয়োজন হলে হার্ড-টু-রিচ এবং বস্তি এলাকার শিক্ষার্থীদের বিনামূলে বই দেয়া যেতে পারে। সবার জন্য প্রয়োজন নেই। 

এনসিটিবি উন্নতমানের কারিকুলাম ঠিক করে বিভাগ ওয়ারি এক একটি বড় কোম্পানিকে বা সংস্থাকে বই ছাপা ও বিতরণের দায়িত্ব দিলে তাদের মধ্যে এক ধরনের কম্পিটিশন তৈরি হবে কে কতো ভালোভাবে, আগে এবং মানসম্মত বই তৈরি করতে পারেন। এনসিটিবিতে শুধামাত্র সরকারি কলেজ বা স্কুলের একজন শিক্ষক লোক ধরাধারি করে কিংবা ঘুস দিয়ে ঢাকায় আসবেন আর ঢাকায় বসানোর জায়গা নেই তাই এনসিটিবিতে পোস্টিং এই প্রথা চিরতরে বন্ধ করতে হবে। কারণ, এনসিটিবি হেলাফেলা বা তামাশা করার জায়গা নয় যে, অমুক অধ্যাপক, অমুকের শ্যালক বা দুলাভাই বা বন্ধু তাই তাকে এনসিটিবির চেয়ারম্যান বা মেম্বার হতে হবে। নির্দিষ্ট অভিজ্ঞতাসম্পন্ন শিক্ষকদের পরীক্ষার মাধ্যমে পদায়নের ব্যবস্থা করতে হবে। শুধু সরকারি শিক্ষকদের ডেপুটেশনে আসার ব্যবস্থাও পরিবর্তন করতে হবে। কারণ, এনসিটিবি স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান। দেশের সব ধরনের শিক্ষক, শিক্ষাবিদ, শিক্ষা গবেষকদের একটি আদর্শ আলয়ে পরিণত করতে হবে এনসিটিবিকে। 

লেখক: ক্যাডেট কলেজের সাবেক শিক্ষক


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
পিকনিকের বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আইইউটির ৩ ছাত্রের মৃত্যু - dainik shiksha পিকনিকের বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আইইউটির ৩ ছাত্রের মৃত্যু অনার্স কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণি বাদ দেয়া উচিত - dainik shiksha অনার্স কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণি বাদ দেয়া উচিত ভিকারুননিসা নূন স্কুলে ১ম থেকে ৯ম শ্রেণিতে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha ভিকারুননিসা নূন স্কুলে ১ম থেকে ৯ম শ্রেণিতে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রাথমিকে ২০ হাজার শিক্ষকের পদ সৃষ্টি হচ্ছে - dainik shiksha প্রাথমিকে ২০ হাজার শিক্ষকের পদ সৃষ্টি হচ্ছে স্কুল শিক্ষাকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বর্ধিত করা উচিত - dainik shiksha স্কুল শিক্ষাকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বর্ধিত করা উচিত নতুন পাঠ্য বইয়ে থাকছে শহীদ আবু সাঈদ ও মুগ্ধের বীরত্বগাথার গল্প - dainik shiksha নতুন পাঠ্য বইয়ে থাকছে শহীদ আবু সাঈদ ও মুগ্ধের বীরত্বগাথার গল্প শিক্ষাক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে আছি - dainik shiksha শিক্ষাক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে আছি ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো - dainik shiksha ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে গুচ্ছভুক্ত ২৪ বিশ্ববিদ্যালয়ে পঞ্চম পর্যায়ের ভর্তি আজকের মধ্যে - dainik shiksha গুচ্ছভুক্ত ২৪ বিশ্ববিদ্যালয়ে পঞ্চম পর্যায়ের ভর্তি আজকের মধ্যে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0057799816131592