আগামী এপ্রিল মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্থগিত হওয়া জাপান সফর হতে পারে। গতকাল বুধবার (১১ জানুয়ারি) প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের পর এই নতুন সময় প্রস্তাব করেছেন জাপানের নতুন রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি। ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান তার বক্তৃতা লেখক এম নজরুল ইসলাম।
গত বছর ২৯ নভেম্বর থেকে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফরের কথা ছিল। তবে শেষ মুহূর্তে তা স্থগিত হয়েছিল।
নজরুল ইসলাম বলেন, জাপানি রাষ্ট্রদূত শেখ হাসিনাকে আগামী মার্চ-এপ্রিলে দেশটি সফরের প্রস্তাব দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী এপ্রিলে যাওয়ার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
বাংলাদেশ মিশনে দায়িত্ব নেওয়ার পর গতকাল সৌজন্য সাক্ষাতে গণভবনে যান জাপানের নতুন রাষ্ট্রদূত। তিনি দুই দেশের বিদ্যমান সুসম্পর্কের কথা উল্লেখ করে তা নতুন মাত্রায় নিতে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন বলে প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার জানান।
রাষ্ট্রদূত বলেন, ভবিষ্যৎ সম্পর্ক হবে কৌশলগত সম্পর্ক। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশে পরিণত করতে জাপান সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।
এ সাক্ষাৎ সম্পর্কে নজরুল ইসলাম আরও জানান, দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং বিনিয়োগ বাড়াতে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন তারা। জাপানের রাষ্ট্রদূত রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে জাপানের পক্ষ থেকে বিষয়টিকে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় এবং আসিয়ান ফোরামে তোলার প্রতিশ্রুতিও দেন।
আগামী বছর উদ্বোধন হতে যাওয়া ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণের জন্যও জাপানকে ধন্যবাদ দেন প্রধানমন্ত্রী। ওই টার্মিনালের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বও একটি জাপানি কোম্পানিকে দেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ এম জিয়াউদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে শেখ হাসিনা বলেন, গত ১৪ বছরে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। কারণ তার সরকার বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে এবং দেশবাসী বর্তমানে এর সুফল পাচ্ছে। শেখ হাসিনা বাঙালির অগ্রযাত্রায় চীনের সহযোগিতাকে স্বাগত জানিয়ে ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে দেশটির সহায়তা আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতু ও দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বপ্রথম কর্ণফুলী ট্যানেলের মতো বিভিন্ন মেগা প্রকল্পে চীনের সহায়তার কথা স্মরণ করেন। তিনি দেশে বিশেষ করে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরীতে বড় আকারের চীনা বিনিয়োগের আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী সারা বিশ্বে মানুষের দুর্ভোগ লাগবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করতে বিশ্বনেতাদের প্রতি আবারও আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই।’
চীনের মন্ত্রী বলেন, তার দেশ ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ গড়তে প্রত্যাশা অনুযায়ী বাংলাদেশকে সব ধরনের সহায়তা দেবে। তিনি আরও বলেন, তার দেশ ‘সকলের সাথে বন্ধু, কারো সাথে বৈরিতা নয়’ বাংলাদেশের এই বৈদেশিক নীতির প্রতি সমর্থন জানায়। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করতে একটি কার্যকর ব্যবস্থা নেবে।
চেন ঝোয়া বলেন, চীন ও বাংলাদেশের মধ্যকার সম্পর্ক ২০১৬ সালে তার দেশের প্রেসিডেন্টের সফরকালে একটি কৌশলগত অবস্থানে পৌঁছেছে। বাংলাদেশ সফরকালে তার দেশের প্রেসিডেন্টের দেওয়া সব প্রতিশ্রুতি পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে।
চীনের মন্ত্রী সিপিসি এবং তাদের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংয়ের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগের সভাপতি পুনর্নির্বাচিত হওয়ায় শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানান। তিনি সিপিসি ও আওয়ামী লীগের মধ্যকার সম্পর্ক জোরদারের মাধ্যমে দল দুটির মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নে আগ্রহ প্রকাশ করেন। অনুষ্ঠানে অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ এম জিয়াউদ্দিন এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মোহাম্মদ সালাউদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।