এফডিআর ভাঙতে তৎপর প্রভাবশালী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মালিকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক |

কতিপয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাবশালী মালিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে ব্যাংকে জমা রাখা ফিক্সড ডিপোজিট-এফডিআর ভাঙতে চায়। এসব মালিকরা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে প্রভাবশালী হলেও তাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দূর্বল আর নানা অভিযোগে অভিযুক্ত। এফডিআর ভাঙানোর এ কাজে সহায়তা করার জন্য কতিপয় সাংবাদিককে দিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করানো হচ্ছে। যেসব পত্রিকা-টিভিতে এফডিআর ভাঙানোর পক্ষে প্রতিবেদন প্রকাশ হচ্ছে সেসব পত্রিকার মালিকদের  কারো কারো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে।  

কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় দেউলিয়া বা সনদ বিক্রির অভিযোগে সরকারি যদি বন্ধ করে দেয় তাহলে এফডিআরএর টাকা দিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর ক্ষতি পোষানোর কথা।  দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হওয়ার পর তাদের এফডিআর থেকে  টাকা নিয়ে শিক্ষার্থীদের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ব্যবস্থা করার সুপারিশ করা হয়েছিলো। 

এফডিআর ভাঙানো নিয়ে আজ  একটি জাতীয় পত্রিকার প্রতিবেদন পড়ুন: 

“করোনার প্রাদুর্ভাবে বড় সংকটে পড়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। এই সময়টায় একদিকে শিক্ষার্থী ভর্তি কমে গেছে; অন্যদিকে বিদ্যমান শিক্ষার্থীরা নিয়মিত টিউশন ফি পরিশোধ না করায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আয় কমে গেছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে অনেক প্রতিষ্ঠান জনবল কমাচ্ছে। আবার কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন কমাচ্ছে। এমনকি একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় তাদের নিজস্ব ফিক্সড ডিপোজিট-এফডিআর ভাঙতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) কাছে অনুমতি চেয়েছে।

জানা যায়, ঢাকা মহানগরীতে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন পেতে পাঁচ কোটি টাকার এফডিআর করতে হয়। আর জেলা পর্যায়ে তিন কোটি এবং মফস্বল বা উপজেলা পর্যায়ে দেড় কোটি টাকার এফডিআর থাকতে হয়। করোনাজনিত সংকটে পড়ে এসব এফডিআর ভাঙতে চাইছে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়। রাজশাহীর বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, রাজধানীর বনানীতে অবস্থিত একটি বিশ্ববিদ্যালয় এরই মধ্যে এ ব্যাপারে ইউজিসিতে আবেদনও করেছে।

করোনার মধ্যে গত জুলাই থেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শুরু হয় ‘সামার’ সেমিস্টার। এই সময়টায় বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে তেমন কোনো সমস্যায় পড়তে না হলেও ছোট ও মাঝারি মানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তি ব্যাপকভাবে কমেছে। যেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গত বছরের সামার সেমিস্টারে গড়ে ৪০০ শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছিল, সেখানে এবার দুই শর কম শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। আর যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে কমবেশি ২০০ শিক্ষার্থী ভর্তি হতো, সেখানে ভর্তি হয়েছে এক শর কম। রাজধানীর সোবহানবাগের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গত বছরের সামার সেমিস্টারে এক হাজার ৬০০ শিক্ষার্থী ভর্তি হলেও এবার হয়েছে মাত্র ৪৫০ জন। আগামী অক্টোবর থেকে ‘ফল’ সেমিস্টার শুরু হবে। কিন্তু এখনো যেহেতু এইচএসসি পরীক্ষাই গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি, তাই আসন্ন সেমিস্টার নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দুশ্চিন্তা বাড়ছে।

তবে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি (আইইউবিএটি), ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) মতো বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে করোনার মধ্যেও শিক্ষার্থী ভর্তির সংখ্যা গত বছরের চেয়ে খুব বেশি হেরফের হয়নি।

এ ব্যাপারে জানাতে চাইলে ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ বলেন, ‘এফডিআরের টাকা তুলে নেওয়ার জন্য দু-একটি বিশ্ববিদ্যালয় যোগাযোগ করেছে। তবে আমরা জানি না, এই ধরনের কোনো সুযোগ আছে কি না? আবেদন পেলে আমরা আইনি দিক পর্যালোচনা করব। এরপর তা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব।’

বর্তমানে দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১০৬। এর মধ্যে শিক্ষা কার্যক্রম চালু আছে ৯৬টির। করোনার মধ্যে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় রয়েছে অস্থায়ী ক্যাম্পাসে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। কারণ শিক্ষার্থী থাকুক আর না-ই থাকুক, তাদের মাস শেষে বড় অঙ্কের ভবন ভাড়া পরিশোধ করতে হয়। নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নানা ধরনের সংকটে পড়েছে। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের অনেকেই নিয়মিত টিউশন ফি পরিশোধ করছে না। ফলে যা আয় হয়, তা দিয়ে ব্যয় নির্বাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ই স্বল্পসংখ্যক জনবল কমালেও রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী ও ধানমণ্ডিতে ক্যাম্পাস থাকা একটি বিশ্ববিদ্যালয় বড় ধরনের জনবল কমিয়েছে।

জানা যায়,  বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির সভাপতি শেখ কবির হোসেন বলেন, করোনায় সমস্যায় পড়ে কেউ কেউ তাদের এফডিআর ভাঙার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। ব্যাপারটি ইউজিসি বা মন্ত্রণালয়ের ভেবে দেখা উচিত। তবে আমরা এই সংকটময় মুহূর্তে সরকারের কাছে প্রণোদনা হিসেবে সুদবিহীন ঋণ চেয়েছিলাম; কিন্তু কোনো সাড়া পাইনি। আমরা যদি ঋণ পাই, তাহলে কারো এফডিআর ভাঙার প্রয়োজন পড়বে না।’ দেশে করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। বন্ধের মেয়াদ আগামী ৩ অক্টোবর পর্যন্ত বাড়িয়েছে সরকার। শুরুর দিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধই ছিল। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত মে মাস থেকে অনলাইনে ক্লাস, মূল্যায়ন, ভর্তিসহ সব শিক্ষা কার্যক্রম চালানোর অনুমতি দেয় সরকার। আর জুলাই থেকে অনলাইনে শুরু হয় সামার সেমিস্টারের ক্লাস।” 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0022499561309814