এবার উপ-সচিবের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনলেন হাজী নাছির কলেজের সেই শিক্ষকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক |

জালিয়াতির মাধ্যমে  নিয়োগ পাওয়া হাজী নাছির উদ্দিন কলেজের দশজন শিক্ষক এবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব নুসরাত জাবীন বানুর বিরুদ্ধে চাপ প্রয়োগ করে শুনানি গ্রহণের অভিযোগ এনেছেন। কথিত চাপ প্রয়োগের অভিযোগ এনে এমপিও স্থগিত থাকা ওই দশজন শিক্ষক নিজেদের পছন্দের অতিরিক্ত সচিবের কাছে শুনানী করিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

যথাযথ শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকাসহ বিভিন্ন অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ২০১৫ খ্রিস্টাব্দে সাতক্ষীরার কলারোয়ার সলিমপুরের হাজী নাছির উদ্দিন কলেজের সাধারণ ও কারিগরি শাখার মোট ১৪ জন শিক্ষকের এমপিও স্থগিত করা হয়। এদের মধ্যে চার জন কারিগরি শাখার।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুসরাত বানুর বিরুদ্ধে কথিত অভিযোগকারীরা কলেজটির সাধারণ শাখার শিক্ষক। কলেজের অধ্যক্ষ মো: আব্দুল আলীমসহ এমপিও স্থগিত থাকা ১০জন শিক্ষক  লিখিত অভিযোগে জানান, শুনানির জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটির প্রধান নুসরাত জাবীন চাপ প্রয়োগ করে শুনানীতে তাদের [অভিযুক্তদের] বক্তব্য গ্রহণ করেন। গত ১৩ জুলাই ওই শিক্ষা অধিদপ্তরে ওই শুনানী অনুষ্ঠিত হয়। কমিটির অপর দুই সদস্য শিক্ষা অধিদপ্তর ও পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের দুইজন উপ-পরিচালক। মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের একাধিক সূত্র দৈনিক শিক্ষাডটকমকে এ খবর নিশ্চিত করেছেন।

উপ-সচিবের বিরুদ্ধে শুনানিতে চাপ প্রয়োগের অভিযোগের কোনো তদন্ত না করেই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে কর্মরত একজন অতিরিক্ত সচিব ফের শুনানি গ্রহণ করেন। ৩ অক্টোবর অনুষ্ঠিত ওই শুনানির আগে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী দুটি জাতীয় পত্রিকায় দুটি প্রতিবাদ বিজ্ঞাপন প্রকাশ করেন অভিযুক্ত ওই দশজন শিক্ষক। অভিযুক্ত শিক্ষকদের মধ্যে কয়েকজনের বিরুদ্ধে জামাত ও আহলে হাদীস সংশ্লিষ্টতার তদন্ত চলছে। ১১ নভেম্বর তারা সবাই ঢাকায় অবস্থান করছেন বলে জানা যায়। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের আইন শাখায় কর্মরত শিবিরপন্থী শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা আল আমিন সরকার ও আবদুস সালামের সঙ্গে গোপন বৈঠক করারও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, যথাযথ শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকাসহ বিভিন্ন অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায়  ২০১৫ খ্রিস্টাব্দে কলেজটির সাধারণ ও কারিগরি শাখার মোট ১৪ জন শিক্ষকের এমপিও স্থগিত করা হয়। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে ২০১৩ খ্রিস্টাব্দে মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর অভিযোগ তদন্ত করে সত্যতা পায়।  নতুন অভিযোগে অধিদপ্তরের দুই সদস্যের তদন্ত কমিটিও অভিযোগের সত্যতা পায়। এরপর নিয়ম মেনে এমপিও স্থগিত করা হয়। এরপর আদালতের দ্বারস্থ হন এমপিও স্থগিত হওয়া  শিক্ষকরা। এক পর্যায়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সদ্য বিদায়ী অতিরিক্ত সচিব রুহী রহমানও কয়েকমাস আগে শুনানি গ্রহণ করেন। গোপণে অভিযুক্ত শিক্ষকদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে এমপিও ছাড় করার উদ্যোগের খবর প্রকাশ হয় দৈনিকশিক্ষায়। থেমে যায় অশুভ উদ্যোগ। এমপিও ছাড়ের বিষয়ে কারিগরি অধিদপ্তরকে জানালে তারা মন্ত্রণালয়কে সাফ জানিয়ে দেন যে, এমপিও ছাড়ের কোনো সুযোগ নেই। এমপিও স্থগিত হওয়া যর্থাথ হয়েছে বলে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে  কারিগরি অধিদপ্তর।

কিন্তু থেমে নেই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক শাখা ও মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের কলেজ শাখা।  চলতি বছরের জুলাই মাসে মন্ত্রণালয়ের  উপ-সচিব নুসরাত জাবীন বানুকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে শুনানির জন্য। ১৩ জুলাই শুনানীতে অংশ নিয়ে প্রায় সব শিক্ষক তাদের নিজ নিজ দোষ স্বীকার করেছেন।  শুনানির সারাংশ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেয়া হয়। কপি দৈনিকশিক্ষার হাতেও রয়েছে।

ঘুষের বিনিময়ে সর্বদা তথ্যের গোপনীয়তা বজায় রাখতে চাওয়া  হাজী নাছির কলেজের সর্বশেষ অবস্থা  জানতে চাইলে শিক্ষা অধিদপ্তরের বেসরকারি কলেজ শাখার সহকারি পরিচালক মো: হেলাল উদ্দিন বলেন, মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব চৌধুরী মুফাদ আহমেদের নেয়া শুনানীর সিদ্ধান্ত না পাওয়া পর্যন্ত কোনো কিছুই বলা যাচ্ছেনা। স্যার বিদেশে রয়েছেন। এমপিও ফেরত পেতে আবেদনকারী শিক্ষকদের আবেদনের সর্বশেষ অবস্থা জানিয়ে ১ নভেম্বর কলেজটির অধ্যক্ষ ও পরিচালনা কমিটির সভাপতিকে চিঠি দেয়া হয়েছে। চিঠির কপি অধিদপ্তরের আইন শাখায়ও পাঠানো হয়েছে।

এলাকাবাসীর মতে, বাল্যবিবাহপ্রবণ ও শিক্ষা-দীক্ষায় পিছিয়ে পড়া কলোরোয়া এলাকার কোটিপতি ব্যবসায়ী ও শিক্ষানুরাগী এনাম হক তাঁর বাবার নামে কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠাতা ও দাতা সদস্যরা নিজেদের কোনো আত্মীয়-স্বজনকে এই কলেজে শিক্ষকতা বা অন্যকোনো পদে চাকরি দেননি।

অনুসন্ধানে জানা যায়, এমপিওস্থগিত হওয়া ১৪ জন শিক্ষকরা ব্যস্ত থাকেন অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ে তদবিরে।  অন্যান্যদের মধ্যে অনেকেই থাকেন অন্য কাজে ব্যস্ত। সব মিলিয়ে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার অবস্থা ক্রমাগত খারাপের দিকে। সাধারণ উচ্চ মাধ্যমিক, কারিগরি ও ডিগ্রি শাখায় মাত্র চারশত শিক্ষার্থী রয়েছে। তিন বছর আগেও তিন হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ছিলো বলে জানা যায়।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
একাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু ৩০ জুলাই - dainik shiksha একাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু ৩০ জুলাই অবসর কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার ফের তাগিদ - dainik shiksha অবসর কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার ফের তাগিদ সুধা রানী হাদিসের শিক্ষক পদে : এনটিআরসিএর ব্যাখ্যা - dainik shiksha সুধা রানী হাদিসের শিক্ষক পদে : এনটিআরসিএর ব্যাখ্যা শরীফ-শরীফার গল্প বাদ যাচ্ছে পাঠ্যবই থেকে - dainik shiksha শরীফ-শরীফার গল্প বাদ যাচ্ছে পাঠ্যবই থেকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে শূন্যপদের ভুল চাহিদায় শাস্তি পাবেন কর্মকর্তা ও প্রধান শিক্ষক - dainik shiksha শূন্যপদের ভুল চাহিদায় শাস্তি পাবেন কর্মকর্তা ও প্রধান শিক্ষক এক রুমে ৩৫ ছাত্রী অসুস্থ, পাঠদান বন্ধ - dainik shiksha এক রুমে ৩৫ ছাত্রী অসুস্থ, পাঠদান বন্ধ যৌ*ন হয়রানির অভিযোগে প্রধান শিক্ষক কারাগারে - dainik shiksha যৌ*ন হয়রানির অভিযোগে প্রধান শিক্ষক কারাগারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.00335693359375