এবার মরণোত্তর কর্নিয়া দান করলেন শিক্ষক

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

এবার মরণোত্তর চক্ষুদান করলেন রাজধানীর অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক জামাল উদ্দিন। তিনি ৬২ বছর বয়সে গতকাল শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কো-অপারেটিভ সোসাইটির অরুণা পল্লীর বাসায় মারা যান। তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী মৃত্যুর পরপরই সন্ধানী ইন্টারন্যাশনাল আই ব্যাংক দুটি কর্নিয়া সংগ্রহ করে।

জামাল উদ্দিন ছিলেন মিরপুর-১৪তে অবস্থিত রোটারি স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক। তিনি এই প্রতিষ্ঠানে ১৯৮২-৮৩ সালের দিকে শিক্ষকতা শুরু করেন এবং গত ২০২১ সালের নভেম্বরে অবসরে যান। জামাল উদ্দিনের স্ত্রী গত বছর ২০২২ সালের ৮ জানুয়ারি মারা যান। তিনি ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন। তার তিন ছেলে জাহিন, জাহিদ ও রনিত। বড় ছেলে জাহিন জামাল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগ থেকে পাস করেছেন এবং ছোট ছেলে বর্তমানে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে পড়ছেন।

বাবার চক্ষুদানের ব্যাপারে বড় ছেলে জাহিন জামাল গতকাল শুক্রবার রাতে বলেন, বাবা মারা গেছেন সকাল ৮-৯টার দিকে (গতকাল), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কো-অপারেটিভ সোসাইটির অরুণা পল্লীর বাসায়। তিনি মাসখানেক আগে থেকেই বলছিলেন, মারা যাওয়ার পর তার চোখ দুটি ও শরীরের অন্যান্য অঙ্গ এবং দেহটা যদি দান করা সম্ভব হয়, সেটা যেন করি। তা হলে ওনার ভালো লাগবে। মারা যাওয়ার পর বিষয়টি ভাইদের জানালাম। তখন জানতে পারি অন্য ভাইদের কাছেও বাবা তার ইচ্ছার কথা বলে গেছেন। প্রত্যেকে তার শেষ ইচ্ছার প্রতি সহমত জানিয়েছেন। পরে আমরা সন্ধানীর সঙ্গে যোগাযোগ করি। সন্ধানী দ্রুততম সময়ের মধ্যে এসে দুটি কর্নিয়া সংগ্রহ করে নিয়ে গেছে। বাবাকে মাগরিবের কিছুক্ষণ পরে অরুণা পল্লীর কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

কর্নিয়া সংগ্রহ ও প্রতিস্থাপনের ব্যাপারে কথা হয় সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতির কো-অর্ডিনেটর সাইফুল ইসলাম চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ফোন পেয়ে খুব দ্রুত টিম নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে যাই। টিমের যারা কর্নিয়া সংগ্রহ করেন, তাদের সবারই প্রশিক্ষণ আছে। আমারও ইউরোপ ও ইরান থেকে ট্রেনিং করা আছে। আরেকজন আছেন ইমরান, তারও ইউরোপ থেকে ট্রেনিং করা আছে। সারা ইসলামের কর্নিয়াও আমি রাত ২টার সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে সংগ্রহ করেছি। নন্দিতা বড়ুয়ার কর্নিয়াও আমি সংগ্রহ করেছি।’

সাইফুল ইসলাম চৌধুরী আরও বলেন, কর্নিয়া সংগ্রহ খুবই স্পর্শকাতর ও টেকনিক্যাল বিষয়। এ ধরনের কর্নিয়া সংগ্রহের জন্য সন্ধানী ইন্টারন্যাশনাল আই ব্যাংক খুবই দক্ষ ও সক্ষম। পাশাপাশি এই আই ব্যাংক আমেরিকার ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব আই ব্যাংকের নিবন্ধনভুক্ত সদস্য। ফলে কর্নিয়া সংগ্রহে আমরা আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখি। ফোন পেলেই আমরা খুব দ্রুত সেখানে পৌঁছে যাই।

কেউ মারা গেলে সেই মৃত ব্যক্তির সন্তান বা বাবা-মা, অর্থাৎ মরদেহের যিনি আইনগত স্বত্বাধিকারী, তারা যখন দান করতে চান, তখন আমরা কর্নিয়া সংগ্রহ করে নিয়ে আসি। দান করা কর্নিয়ার জায়গায় আরেকটা কৃত্রিম কর্নিয়া প্রতিস্থাপন করে আসি। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বাসায় গিয়ে কর্নিয়া সংগ্রহ করি। কর্নিয়া দান করা ব্যক্তির পরিবার খুবই প্রগতিশীল।

জামাল উদ্দিনের দান করা কর্নিয়া আজ দুজন অন্ধ মানুষের চোখে প্রতিস্থাপন করা হবে বলে জানান সাইফুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেন, সংগৃহীত কর্নিয়া ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যাবে। কিন্তু আমরা এত দেরি করব না। আমরা আগামীকালই (আজ শনিবার) অপারেশন করে দুজন অন্ধ মানুষের চোখে একটি করে কর্নিয়া প্রতিস্থাপন করব। অপারেশন দুটি করবেন কর্নিয়াবিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. সৈয়দ এ হাসান ও জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের কর্নিয়া ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আব্দুল কাদের। যারা কর্নিয়ার জন্য আবেদন করেছেন, তাদের চারজনকে ডেকেছি। সেখান থেকে দুজনকে দেওয়া হবে। প্রত্যেকে একটি করে কর্নিয়া পাবেন। একটি করে দিলেই তো উনি দেখতে পাবেন এবং স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবেন। দুটি অপারেশনই হবে রাজধানীর নীলক্ষেতের সন্ধানী চক্ষু হাসপাতালে।

জামাল উদ্দিনের কর্নিয়া সংগ্রহের আগের দিন গত বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) অ্যানাটমি বিভাগের পক্ষে উপাচার্য অধ্যাপক শারফুদ্দিন আহমেদ ঢাকার বাসাবোর বাসিন্দা নন্দিতা বড়ুয়ার মরণোত্তর দেহ গ্রহণ করেন। বিএসএমএমইউর আইসিইউতে চিকিৎসাধীন নন্দিতা বড়ুয়ার মৃত্যু হয় ৩০ জানুয়ারি রাত আড়াইটার দিকে। দীর্ঘদিন ধরে তিনি কিডনিজনিত জটিল রোগে ভুগছিলেন। কিডনি রোগের পাশাপাশি এসএলই ও ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত ছিলেন। মরণোত্তর দেহদানের বিষয়ে সন্তানদের বলে গিয়েছিলেন তিনি।

গত ৩১ জানুয়ারি আবদুল আজিজের চোখে বিএসএমএমইউর চক্ষুবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ শীষ রহমান নন্দিতার একটি কর্নিয়া সফলভাবে প্রতিস্থাপন করেন। একই দিনে প্রতিষ্ঠানের অপথালমোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রাজশ্রী দাস আরেকটি কর্নিয়া প্রতিস্থাপন করেন জান্নাতুল ফেরদৌসীর চোখে।

এর আগে গত ১৯ জানুয়ারি মরণোত্তর কিডনি ও কর্নিয়া দান করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন ২০ বছর বয়সী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী সারা ইসলাম। তার দুটি কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয় দুই নারীর শরীরে। আর কর্নিয়া প্রতিস্থাপন করা হয় আরও দুজনের চোখে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা - dainik shiksha মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা - dainik shiksha দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0025019645690918