সারাদেশে শত শত স্কুল-কলেজ সরকারিকরণ করা হয়েছে। তাতে শিক্ষার মনোন্নয়ন, শিক্ষকদের পেশাগত বঞ্চনা ও বৈষম্যের পীড়াদায়ক অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটলেও এমপিওভুক্তরা থেকে গেছেন উপেক্ষিত।
এমন বাস্তবতায় শিক্ষক ব্যাংক গঠন করা খুবই জরুরি। এতে শিক্ষকদের দাবিপূরণ ও কল্যাণের পথ সুগম হবে। এমপিওভুক্তদের কর্মকাল অবসানের পর তাদের কল্যাণভাতা ও অবসর সুবিধার সবকিছু শিক্ষক ব্যাংকের মাধ্যমে সম্পন্ন হতে পারে। শিক্ষক ব্যাংকের কর্মপদ্ধতি হতে পারে অনেকটা কর্মসংস্থান ব্যাংক, আনসার ব্যাংক ইত্যাদির মতো। শিক্ষক ব্যাংক যুক্তরাষ্ট্রে প্রচলিত ও বিকশিত ইউনিট ব্যাংকের পদ্ধতিতেও কার্যক্রম শুরু করতে পারে। শিক্ষক ব্যাংকের মাধ্যমে শিক্ষকদের বেতনের সরকারি অংশের টাকা (্এমপিও) লেনদেন, বোর্ড-বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি, ফরম পূরণসহ শিক্ষা ও শিক্ষক সংশ্লিষ্ট সবকিছু পরিচালিত হতে পারে। শিক্ষক ব্যাংক গঠনে প্রারম্ভিক মূলধন হিসেবে শিক্ষকদের বেতনের সরকারি অংশ থেকে কেটে রাখা প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা বিনিয়োগ করা যেতে পারে। এ জন্য সূচনাপর্বে যে সব ব্যাংকের শাখায় শিক্ষকদের বেতনের সরকারি অংশের টাকা লেনদেন হয়, ওই সব ব্যাংকে ‘শিক্ষক ব্যাংকিং উইং’ চালু করে শিক্ষক ব্যাংক ধারণা বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। এমন কী যথাযথ পরীক্ষা-নিরীক্ষা সাপেক্ষে আঞ্চলিকভাবে গড়ে ওঠা শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ সমিতিগুলোকেও শিক্ষক ব্যাংক হিসেবে আত্তীকরণ করে শিক্ষকদের সন্তানদের যোগ্যতানুসারে পোষ্যকোটায় শিক্ষক ব্যাংকে নিয়োগ দেয়া গেলে শিক্ষকের মর্যাদার স্বীকৃতি নিশ্চিত হবে। এভাবেই হয়তো শিক্ষক ব্যাংকের মুনাফা দিয়ে শিক্ষকদের দাবিপূরণ ও অধিকতর কল্যাণ নিশ্চিত সহজ হবে।
শিক্ষকদের দাবিপূরণ ও কল্যাণে দেশের অর্থনৈতিক অসামর্থ্য এবং যথাসময়ে অর্থায়নের অপ্রতুলতাই দায়ী। অথচ ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে প্যারিস সন্মেলনে ১৩টি অধ্যায় ও ১৪৬টি ধারা-উপধারায় শিক্ষকের মর্যাদা ও অধিকারের সুপারিশ প্রণীত হয়েছিল, যাতে শিক্ষকের চিকিৎসা-স্বাস্থ্যসেবা, ছুটি-বেতন-ভাতা ও মর্যাদার ক্ষেত্রে বলা আছে (ক) সম্মানজনক পারিতোষিক নিশ্চিতকরণ, (খ) যুক্তিসঙ্গত জীবনমান বিধান কল্পে সুবিধাদি নিশ্চিতকরণ, (গ) স্কেল অনুযায়ী নিয়মিত বেতন-ভাতাদি প্রাপ্তির নিশ্চয়তা, (ঘ) জীবনধারণের ব্যয়বৃদ্ধির সঙ্গে বেতন কাঠামো পূণঃবিন্যাস ও বর্ধিত বেতন প্রাপ্তির নিশ্চয়তা ইত্যাদি।
সারাদেশের এমপিওভুক্তদের মধ্যে অসংখ্য প্রত্যাশার ঝিলিক অসীম শূন্যতায় মিলিয়ে গেছে। বেতন স্কেলে প্রত্যাশিত ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ও বৈশাখী ভাতা নিয়ে জিজ্ঞাসার কোনো উত্তর মেলেনি। ২০১৫ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় বেতনস্কেলের নিদের্শনায় রয়েছে নতুন করে পাঁচ বছর অন্তর অন্তর বেতন স্কেল হবে না বরং বছর শেষে প্রতি জুলাই মাসে জাতীয় বেতনস্কেলভুক্তরা ৫ শতাংশ বার্ষিক প্রবৃদ্ধি সুবিধা পাবেন এবং তা চক্রবৃদ্ধি হারে অব্যাহত থাকবে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে ২০ শতাংশ বৈশাখী ভাতা চালু হয়। বাংলা নববর্ষের ঐতিহ্য রক্ষায় বৈশাখী ভাতা একটি সৎ, সাহসী এবং নিঃসন্দেহে বলা চলে ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। অথচ জাতীয় বেতনস্কেলভুক্ত সবাই সুবিধা দু’টি এরই মধ্যে পেয়ে গেলেও শুধু বঞ্চিত রয়ে গেছেন এমপিওভুক্তরা।
বেতনস্কেলে ৫ শতাংশ বার্ষিক প্রবৃদ্ধি সুবিধা যদি এমপিওভুক্তরা না-ই পান, তবে কি তারা যে স্কেল ও সুবিধা পেয়ে চাকরিতে যোগ দেবেন, শুধু সেটুকু নিয়েই অবসরে যাবেন? অথচ বছর শেষে মূদ্রাস্ফীতির হারও স্ফীত হয় এ ভাবনা থেকেই তো স্বয়ংক্রিয়ভাবে ৫ শতাংশ বার্ষিক প্রবৃদ্ধি সুবিধা এবং তা চক্রবৃদ্ধি হারে অব্যাহত থাকার কথা ২০১৫ জাতীয় বেতনস্কেলে বলা হয়েছে।
পরিশেষে বলতে হয়, এমপিওভুক্তদের আক্ষেপ ও অনন্ত অপেক্ষার অবসানের জন্য শিক্ষক ব্যাংক হতে পারে যুগান্তকারী পরিকল্পনা ও সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ইসলামিক স্টাডিজ কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ, কাপাসিয়া, গাজীপুর
[মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন]