অবশেষে ৭৭০ জন ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষক এমপিওভুক্ত হচ্ছেন। ২০১০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বিভিন্ন কলেজে গভর্নিং বডির মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া এসব শিক্ষককে এমপিওভুক্ত করার ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। অধিদপ্তর থেকে আঞ্চলিক উপপরিচালকদের এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এসব শিক্ষককের অনলাইনে এমপিওভুক্তির আবেদন করতে হবে। গতকাল সোমবার এসব শিক্ষকের তালিকা প্রকাশ করা হয়। কিন্তু তালিকা প্রকাশের পর থেকেই শিক্ষকরা নানা অসংগতির অভিযোগ তুলছেন। শিক্ষকদের অনেকেরই অভিযোগ সঠিকভাবে তথ্য পাঠানোর পরেও তাদের নাম তালিকায় আসেনি।
তালিকায় অসংগতির অভিযোগ :
এদিকে তালিকা প্রকাশের পর থেকেই বেশ কিছু কলেজের শিক্ষক দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানিয়েছেন বিধিমোতাবেক নিয়োগ পেয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে তথ্য পাঠানো হলেও তালিকায় তাদের নাম আসেনি।
আরও পড়ুন : এমপিওভুক্ত হচ্ছেন ৭৭০ ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষক, তালিকা প্রকাশ
বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলা শেরে বাংলা ডিগ্রি কলেজের শিক্ষকরা জানান তাদের কলেজের তিন জন ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষক আছেন। সবার তথ্য পাঠানো হয়েছে। কিন্তু কলেজের কোনো শিক্ষকের নাম তালিকায় আসেনি। এদিকে রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার মৃগী শহীদ দিয়ানত ডিগ্রি কলেজের শিক্ষকরাও একই কথা জানিয়েছেন। সারাদেশের আরও কিছু কলেজের শিক্ষকরা এসব অভিযোগ তুলেছেন। শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা বুধবার সকালে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে গিয়ে অসংগতির বিষয়ে জানাবেন।
এনটিআরসিএর সুপারিশ পাওয়া ৭১ তৃতীয় শিক্ষকের বিষয়ে কিছুই জানায়নি অধিদপ্তর :
জানা গেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বিভিন্ন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ডিগ্রিস্তরে নিয়োগপ্রাপ্ত ৮৪১ জন তৃতীয় শিক্ষককে শর্ত পূরণ সাপেক্ষে এমপিওভুক্ত করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে অনুরোধ করা হয়েছিল। এ তালিকায় গভর্নিং বডির মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া ও এনটিআরসিএর সুপারিশ করা শিক্ষকরা ছিলেন।
কিন্তু মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর বলছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা ও শর্ত অনুসারে, ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নিয়োগপ্রাপ্তদের এমপিওভুক্ত করা হবে। সে মোতাবেক ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের ৪ ফেব্রুয়ারির পর ও ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত গভর্নিং বডি কর্তৃক নিয়োগ পাওয়া ৭৭০ জন ডিগ্রি পর্যায়ে তৃতীয় শিক্ষককে অনলাইনে এমপিওতে অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আঞ্চলিক পরিচালকদের আদেশে নির্দেশনা দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। কিন্তু এনটিআরসিএর মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া ৭১ জন ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকের কি হবে সে বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে কিছু জানায়নি।
অসংগতির অভিযোগ নিয়ে যা বলছে শিক্ষা প্রশাসন :
অসংগতির বিষয়ে জানতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সাধারণ প্রশাসন শাখার উপপরিচালক বিপুল চন্দ্র বিশ্বাস দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, এ তালিকা তৈরির কাজটি কলেজ-২ শাখা থেকে করা হয়েছে। আমাদের শাখা থেকে শুধু তালিকাটি প্রকাশ করা হয়েছে। কলেজ-২ শাখার সংশ্লিষ্টরা অসংগতির বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন।
তবে এ বিষয়ে কথা বলতে কলেজ-২ শাখার উপ-পরিচালক এনামুল হক হওলাদারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি।
৭৭০ শিক্ষককে এমপিওভুক্তিতে যত শর্ত :
৭৭০ শিক্ষককে এমপিওভুক্ত করার বিষয়ে কয়েক দফা শর্ত দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। শর্ত হিসেবে বলা হয়েছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ডিগ্রি স্তর এমপিওভুক্ত থাকতে হবে। তৃতীয় শিক্ষকদের নীতিমালা অনুযায়ী নিয়োগকালীন কাম্যযোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করতে হবে। তৃতীয় শিক্ষক নিয়োগ করা হয়নি এমন প্রতিষ্ঠানের নতুনভাবে তৃতীয় শিক্ষক নিয়োগ করা যাবে না।
শর্ত হিসেবে আরও রয়েছে, কলেজে নিয়োগ থেকে নিরবিচ্ছিন্ন ও ধারাবাহিকভাবে কর্মরত থাকার বিষয়টি অধ্যক্ষের প্রত্যয়নের মধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে। নিয়োগ প্রক্রিয়ার কাগজপত্রে স্নাতক (পাস) স্তরে তৃতীয় শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের প্রমাণক থাকতে হবে। কলেজের অনার্স মাস্টার্স পর্যায় অথবা তৃতীয় শিক্ষক ছাড়া অন্য কোনো পদে নিয়োগপ্রাপ্তদের এমপিওভুক্ত করা যাবে না। নিয়োগ নিষেধাজ্ঞা থাকায় সদ্য সরকারিকৃত কোন কলেজের তৃতীয় শিক্ষক এমপিওভুক্ত করা যাবে না। এমপিওভুক্তির অন্যান্য শর্তগুলো যথারীতি প্রতিপালন করতে হবে।