দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক : এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন থেকে অবসর সুবিধার খাতে মাসে মাসে কেটে নেয়া চাঁদার টাকার ওপর করের বোঝা বৃদ্ধি করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। বেসরকারি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের মতো উৎসে কর ২০ শতাংশ বৃদ্ধি করেছে এনবিআর। এতে ভোগান্তী আরও বাড়বে অবসরের পর টাকার জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষায় থাকা শিক্ষক-কর্মচারীদের। বেকায়দায় পড়েছে চরম আর্থিক সংকটে থাকা বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ড। এনবিআর-এর নতুন সিদ্ধান্তে বোর্ডকে প্রতি বছর ১৩ কোটি টাকার বেশি দিতে হবে এনবিআরকে।
এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা পেনশন পান না। তারা কর্মজীবনে অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের দুই খাতে বেতন-ভাতার সরকারি অংশের মোট দশ শতাংশ হারে চাঁদা দেন। অবসরের পর দুই খাত থেকে এককালীন কিছু টাকা পান। অবসর সুবিধা বোর্ডের খাতে বেতন থেকে ছয় শতাংশ হারে চাঁদা কর্তন করা হয়। সেটােই এখন পর্যন্ত তাদের অর্থ পরিশোধের বড় উৎস, যা দিয়ে বিশাল চাহিদা মেটানো যায় না। সংকট কাটাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫০০ কোটি টাকা (সিড মানি) দিয়েছিলেন। যার এফডিআর থেকে মেটানো হয় শিক্ষকদের অবসরের টাকা। আর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ভর্তির সময় ১০০ টাকা করে চাঁদা নেয়া শুরু হয়েছে। এতে অবসর ও কল্যাণ খাতে এক বছরে মাত্র ১৩ কোটি টাকা পাওয়া গেছে।
এমন চরম আর্থিকভাবে নাজুক অবসর সুবিধা বোর্ডেও বেসরকারি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের মতো উৎস কর ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করেছে এনবিআর। এমন সিদ্ধান্তে শিক্ষকদের অবসরের পর টাকা পেতে আরও বেশি দিন অপেক্ষা করতে হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অবসর সুবিধা বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ৩৪ হাজার শিক্ষক এখনো অবসর ভাতার অপেক্ষায় আছেন। এসব শিক্ষকের টাকা পরিশোধ করতে প্রয়োজন ৪ হাজার কোটি টাকা। প্রতি মাসে আবেদন ও টাকার পরিমাণ বাড়ছে। মাসে গড়ে বোর্ডে ৯০০টির বেশি আবেদন জমা পড়ে। অবসরের এই আবেদন নিষ্পত্তি করতে মাসে প্রয়োজন ১০৬ কোটি টাকা। শিক্ষকদের এমপিও কর্তন থেকে জমা পড়ে ৭০ কোটি টাকা। প্রতি বছর ঘাটতি থাকে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা।
জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর এককালীন ৫০০ কোটি টাকা ছাড়াও অল্প কিছু টাকা ছিল বোর্ডের। সেই অর্থ ও সিড মানির পরিমাণ বেড়ে এখন ৬৭০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। প্রতি বছর ব্যাংক থেকে সাড়ে সাত শতাংশ লাভ পায় বোর্ড। এই আয় থেকে আগে ১০ শতাংশ উৎস কর এনবিআরকে দিতে হতো। কিন্তু এখন তা আরও ২০ শতাংশ বাড়াতে চাইছে এনবিআর। এতে প্রতি বছর ১৩ কোটি টাকার বেশি উৎস কর তাদেরকে দিতে হবে। অথচ এই বাড়তি টাকা দিয়ে শত শত শিক্ষক-কর্মচারীর এককালীন অবসর সুবিধা মেটানো সম্ভব।
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ডের সচিব অধ্যক্ষ শরীফ আহমদ সাদী দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, অবসর সুবিধা বোর্ড কোনো লাভজনক প্রতিষ্ঠান নয়। বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের সারাজীবন চাকরি শেষে এককালীন কিছু টাকা বোর্ড থেকে দেয়া হয়। সেখানে শিক্ষকদের বেতন থেকে কেটে নেয়া চাঁদাও রয়েছে। এরপরও যদি এখান থেকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানের জন্য করের বোঝা চাপায়, তা দুঃখজনক। এ বিষয়ে বোর্ড থেকে আইনজীবীর মাধ্যমে এনবিআরকে চিঠি দেয়া হয়েছে। কোনো জবাব আসেনি।
যা আছে কর নীতিতে : আরকর রিটার্ন দাখিলের ক্ষেত্রে সেকশন ৭৫-এর সাবসেকশন (২) প্রতিস্থাপনের কথা বলা হয়েছে। সেখানে স্বীকৃত ভবিষ্য তহবিল, অনুমোদিত গ্র্যাচুইটি তহবিল, পেনশন তহবিল ও অনুমোদিত বার্ধক্য তহবিলে রিটার্ন বাধ্যতামূলক নয়। ইনকাম ট্যাক্স অডিন্যান্স-১৯৮৪ এর সেকশন ২ এর (৪৬) এ ব্যক্তি হিসেবে যা বলা হয়েছে, এটিও তার সাংঘর্ষিক। কোম্পানি আইন-১৯৯৪ এর ১৮ নম্বর আইনে সংজ্ঞাতেও স্পষ্ট করা হয়েছে। সঞ্চয়ী আমানতের ক্ষেত্রে কর কর্তনের বিষয়ে কোম্পানির জন্য ২০ ভাগ ও কোম্পানি ব্যতীত অন্যদের জন্য ১০ শতাংশ কর কর্তনের হার রয়েছে। সেক্ষেত্রে ৩০ ভাগ উৎস কর আরোপ যথাযথ নয়।
সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অবসর সুবিধা বোর্ড জানিয়েছে বোর্ডকে কোম্পানি আইনের বাইরে রেখে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখিয়ে উৎসে করমুক্ত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের। একই সঙ্গে করের বোঝায় শিক্ষকদের দুর্ভোগের বিষয়টি তুলে ধরা হয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব বলেছেন, এনবিআরের চিঠি বা উৎস কর বৃদ্ধির বিষয়টি আমরা জানি না। শিক্ষকদের টাকা এভাবে যদি নেয়া হয়, তাহলে এনবিআরকে জানাতে বা বোঝাতে হবে। এ বিষয়ে অবশ্যই মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নেবে।