বন্ধ সব শ্রেণিকক্ষের দরজা। দেখা নেই শিক্ষার্থীদের। তালাবদ্ধ মাদরাসা সুপারসহ শিক্ষকদের কক্ষ। কোনো ধরনের ছুটি না থাকলেও গত সোমবার বেলা ১১টায় সিরাজগঞ্জের চৌহালীর খাসকাউলিয়া দক্ষিণ জোতপাড়া দাখিল মাদরাসায় গিয়ে এ চিত্রই দেখা যায়। এ সময় কথা হলে মাদরাসার আয়া সেলিনা বলেন, মাত্র তিনজন ছাত্র এসেছিল। ছাত্র কম আসায় মাদরাসা বন্ধ করে শিক্ষকরা চলে গেছেন।
স্থানীয়রা জানান, খাসকাউলিয়া দক্ষিণ জোতপাড়া দাখিল মাদরাসায় কাগজে-কলমে শিক্ষার্থীর সংখ্যা দেড়শতাধিক। এছাড়া শিক্ষক রয়েছেন ১৫ জন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এখানে শিক্ষার্থী ১০-১৫ জনের বেশি হবে না। আর শিক্ষকের সংখ্যা ৮-১০ জন। তাদের অভিযোগ, শিক্ষার্থী ও শিক্ষক সংখ্যা বেশি দেখিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্তির সুবিধা ভোগ করছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন বলেন, এ মাদরাসায় এমনিতেই শিক্ষার্থী কম। তার ওপর শিক্ষকদের উদাসীনতায় যারা আছে, তারাও মাদরাসামুখী হচ্ছে না। শিক্ষকরা সরকারি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেও নিয়মিত পাঠদান করেন না। ফলে আমরা আমাদের সন্তানদের এ মাদরাসায় ভর্তি করি না।
এ বিষয়ে মোবাইল ফোনে কথা হলে মাদরাসার সুপার লুৎফর রহমান বলেন, প্রতিষ্ঠান চালু রাখতে রেজিস্টারে যা প্রয়োজন, তা দেখানো হয়। তবে সরকারি টাকা আত্মসাৎ করা হয় না। বাস্তবতা হলো, মাদরাসাটি নানা প্রতিকূলতার মধ্যে রয়েছে। তাছাড়া এ এলাকার মানুষ হতদরিদ্র। তারা তাদের সন্তানদের পড়াশোনা বাদ দিয়ে যমুনায় মাছ ধরতে নিয়ে যায়। তবে প্রতিদিন মাত্র ৫-১০ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত হওয়ার বিষয়টি তিনি স্বীকার করেন।
সুপার আরো জানান, রেজিস্টার অনুযায়ী তার প্রতিষ্ঠানে এখন ১৬৬ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। মোট শিক্ষক রয়েছেন ১৫ জন। কিন্তু প্রকৃত শিক্ষার্থী ও শিক্ষক সংখ্যার বিষয়ে তিনি কিছু বলেননি।
এ বিষয়ে চৌহালী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কাশেম ওবায়েদ জানান, মাদরাসাটিতে দীর্ঘদিন ধরে পরিদর্শনে যাওয়া হয়নি। তবে শিক্ষার্থী উপস্থিতির হার কম হলেও শিক্ষকরা নিয়মিত উপস্থিত থাকেন। তিনিও এ মাদরাসার প্রকৃত শিক্ষার্থী ও শিক্ষক সংখ্যা সম্পর্কে অবগত নন বলে জানান।
কথা হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবু তাহির বলেন, কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমন দুরবস্থা মেনে নেয়া যায় না। আমি সদ্য যোগদান করেছি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। কারো দায়িত্বে অবহেলা পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।