এমপিও নীতিমালায় প্রধান শিক্ষক পদের অভিজ্ঞতা নিয়ে বিড়ম্বনা

রুম্মান তূর্য |

বেসরকারি স্কুল ও কলেজের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা জারির পর থেকে প্রধান শিক্ষক পদে আবেদনে অভিজ্ঞতার যোগ্যতা নিয়ে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন শিক্ষকরা। প্রতিষ্ঠান প্রধান হবার স্বপ্ন মাঠে মারা গেছে অনেক শিক্ষকের।

 উল্লেখ্য, গত ১২ জুন জারি হওয়া বেসরকারি স্কুল ও কলেজের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালার ‘পরিশিষ্ট ঘ’তে বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিয়োগের অভিজ্ঞতার যোগ্যতা হিসেবে বলা হয়েছে, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেতে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক অথবা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে ৩ বছরের অভিজ্ঞতাসহ সহকারী শিক্ষক হিসেবে ১২ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।     

এ নীতিমালা জারির পর অনেক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন শিক্ষকের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠান প্রধান হবার স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছে। সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে ১৫ থেকে ২০ বছর কর্মরত থেকেও এমপিও নীতিমাল ও জনবল কাঠামো মতে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান পদে নিয়োগ প্রাপ্তির অভিজ্ঞতার যোগ্যতা নেই এ অভিজ্ঞ শিক্ষকদের। দেশের একমাত্র শিক্ষা বিষয়ক পত্রিকা দৈনিক শিক্ষাকে নিজেদের এ দুরবস্থার কথা জানিয়েছেন এমন অনেক শিক্ষক।

এমনি একজন শিক্ষকনিখিল চন্দ্র রায়। রাজধানীর রামপুরায় অবস্থিত ‘খালেদ হায়দার মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়’ সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন ১৯ বছর। কিন্তু ১৯ বছর শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থাকলেও, সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে অভিজ্ঞতা না থাকায় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগপ্রপ্তির যোগ্যতা নেই তার।

এ ব্যাপারে তিনি বলেন, অনেক যোগ্য শিক্ষক নতুন নীতিমালা অনুযায়ী প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগের আবেদন করতে পারছেন না। ১৫ থেকে ২০ বছর কোন কোন ক্ষেত্রে ২৪-২৫ বছর শিক্ষকতা করেও সামাজিক মর্যাদা পাচ্ছেন না এ শিক্ষকরা। প্রতিষ্ঠান প্রধান হবার স্বপ্ন মাঠে মারা গিয়েছে তাদের। 

জানা গেছে, ১৯৭৯ খিস্টাব্দে প্রকাশিত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-কর্মচারী চাকরি বিধির প্রবিধান ৪ এ প্রধান শিক্ষক পদের অভিজ্ঞতার যোগ্যতা হিসেবে বলা হয়েছিল, ১৫ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা। 

কিন্তু ১৯৯৫ খিস্টাব্দে জারি করা নীতিমালায় প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগপ্রাপ্তির যোগ্যতার অভিজ্ঞতা পরিবর্তন করা হয়।   

১৯৯৬ খিস্টাব্দের ১৬ জানুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক পরিপত্রে জানানো হয়, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক কর্মচারীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্তপূর্ববৎ অবস্থায় বিদ্যমান থাকবে।  

জানা গেছে, ২০০৯ খিস্টাব্দের ৩১ মে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে ২০০৫ খ্রিস্টাব্দে জারি করা এমপিও নীতিমালায় প্রধান শিক্ষক পদে অভিজ্ঞতার যোগ্যতা হ্রাস করা হয়। এ প্রজ্ঞাপনে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগপ্রাপ্তির অভিজ্ঞতার যোগ্যতা হিসেবে বলা হয়েছে, মাধ্যমিক বা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ১২ বছর শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা। এ প্রজ্ঞপনে জানানো হয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক এবং নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদের জন্য বিদ্যমান অভিজ্ঞতা সম্পন্ন প্রার্থীর অভাবে অভিজ্ঞতার যোগ্যতা হ্রাস করা হয়েছিলো।       

কিন্তু এরপর ১২ জুন ২০১৮ খিস্টাব্দে জারি করা এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামোর ‘পরিশিষ্ট ঘ’তে বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিয়োগের অভিজ্ঞতার যোগ্যতা হিসেবে বলা হয়েছে, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেতে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক অথবা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে ৩ বছরের অভিজ্ঞতাসহ সহকারী শিক্ষক হিসেবে ১২ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এতে বিপাকে পড়েছেন অনেক শিক্ষক। 

দৈনিকশিক্ষায় করা অভিযোগে অনেক শিক্ষক জানান, এমপিও নীতিমালায় প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগের অভিজ্ঞতার যোগ্যতা পরিবর্তনে ২০০৯ খ্রিস্টাব্দের মতো প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে যোগ্য প্রার্থীর সংকটে পড়বে।    

এ ব্যাপারে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের অনুসন্ধান চালালে জানা যায়, শিক্ষা কর্মকর্তা (মাধ্যমিক ২) আফসার উদ্দিন এ নীতিমালা তৈরিতে সম্পৃক্ত ছিলেন।

নীতিমালায় প্রধান শিক্ষকের অভিজ্ঞতার বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা কর্মকর্তা আফসার উদ্দিন দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক কাজ পরিচালনার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন শিক্ষকদের প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগের কথা ভেবেই নীতিমালায় এমন পরিবর্তন আনা হয়েছে। এসকল বঞ্চিত সহকারী শিক্ষকদের কথা ভেবেই তাদের দুইটি টাইমস্কেল দেওয়া হয়েছে। অভিজ্ঞতা অনুযায়ী তারা বেতন ভাতা পাবেন। 

নীতিমালা সংশোধনের বিষয়ে জানতে চাইলে এ শিক্ষা কর্মকর্তা জানান, ‘এমপিও নীতিমালা সংশোধনের ব্যপারে চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে জানানো হয়েছে। তারা সময় দিলে আমরা এ বিষয়ে বসব।’ 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা - dainik shiksha ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা এসএসসি পরীক্ষার ফল ১০ বা ১১ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল ১০ বা ১১ মে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে - dainik shiksha প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0056581497192383