বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের উদ্দেশ্যে শিক্ষামন্ত্রণালয় গত ১২ জুন নতুন এমপিও নীতিমালা প্রকাশ করেছে। নীতিমালার ১১.৬ ধারায় এন্ট্রি লেভেলে শিক্ষক নিয়োগের বয়স ৩৫ বছর করা হয়। এই নীতিমালার আলোকে বাংলাদেশের সমস্ত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগ করার কথা বলা হয়। তবে নীতিমালাটি সনদধারী নাকি ১৫তম নিবন্ধনপ্রার্থীদের জন্য প্রযোজ্য, তা স্পষ্ট করা হয়নি। ফলে পঁয়ত্রিশোর্ধ নিবন্ধন সনদধারীদের বয়সের ব্যাপারে শঙ্কা কাটছে না।
হাইকোর্ট গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর প্রায় দুই শতাধিক দায়েরকৃত মামলার মধ্যে ১৬৬টি রিটের চূড়ান্ত রায়ে নিবন্ধনপ্রাপ্তদের নিয়োগের আদেশ প্রদান করে। রায়ের ১ নম্বর পয়েন্টে অনুসারে সনদধারীদের নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত সনদের মেয়াদ আজীবন করার কথা বলা হয়েছে। একইভাবে রায়ের ৫ নম্বর পয়েন্টে এনটিআরসিএ’কে রিট পিটিশনার এবং প্রত্যাশিত আবেদনকারীদের নাম জাতীয় মেধা তালিকার ভিত্তিতে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিদ্যমান শূন্যপদে সুপারিশ করার নির্দেশ প্রদান করা হয়। হাইকোর্ট রায় দেয়ার পর নব্বই দিনের মধ্যে বাস্তবায়ন করার কথা থাকলেও এনটিআরসিএ ই-রিকুইজিশনের নামে বারবার কালক্ষেপণ করে যায়।
এদিকে বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগে এতদিন কোন বাঁধাধরা বয়স না থাকলেও হাইকোর্ট তার রায়ের সাত নম্বর ব্যাখ্যায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের উদ্দেশ্যে আবেদনকারীদের বয়সসীমা অবিলম্বে নির্ধারণ করার একটি উপযুক্ত পদক্ষেপ নেয়া উচিত মর্মে সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু শিক্ষামন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এন্ট্রি লেভেলে শিক্ষক নিয়োগের বয়স সর্বোচ্চ পঁয়ত্রিশ করে। নীতিমালায় আরো বলা হয়, ৩৫ বছরের পরে কেউ এমপিওভুক্তির যোগ্য বিবেচিত হবে না। রায়ে হাইকোর্ট এন্ট্রি প্রসেসে শিক্ষক নিয়োগের বয়স নির্ধারণ করার কথা বলে। এন্ট্রি প্রসেস বলতে এখানে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের উদ্দেশ্যে এনটিআরসিএ আয়োজিত সনদ অর্জনের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার বয়স বোঝায়।
১ম থেকে ১৩তম অনেক নিবন্ধন সনদধারীর বয়স ৩৫ কিংবা ৩৫ বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেছে। সাম্প্রতিক চূড়ান্তভাবে সম্পন্ন হওয়া ১৪তম নিবন্ধন প্রার্থীদেরও অনেকের বয়স পঁয়ত্রিশ পার হয়েছে। তাহলে কি তারা পরীক্ষায় কৃতকার্য হওয়া সত্ত্বেও বয়সের সীমাবদ্ধতায় আটকে যাবেন? নাকি তাদের বয়সের কারণে বাদ দেয়া হবে? পঁয়ত্রিশ এবং পঁয়ত্রিশোর্ধ নিবন্ধনধারীরা শিক্ষাসচিবসহ এমপিও নীতিমালা প্রণয়ন কমিটির কাছে এ বিষয়ে স্পষ্টীকরণ আদেশ প্রার্থনা করেছেন।
পরীক্ষায় অবতীর্ণ অবস্থায় বয়সসীমা যদি কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জনে বাধা হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে বাকি জীবনটা তাদের বেকারত্বের অভিশাপ নিয়ে কাটাতে হবে। বয়সজনিত কারণে তাদের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা ছাড়া সরকারি অন্যান্য চাকরিতে আবেদন করার সুযোগ নেই। পঁয়ত্রিশোর্ধ নিবন্ধনধারীদের শিক্ষামন্ত্রণালয়কৃত এমপিও নীতিমালা/১৮ অভিশাপ না আশীর্বাদ তা এনটিআরসি’র গণবিজ্ঞপ্তি হলেই স্পষ্ট বোঝা যাবে।
লেখক: অধ্যক্ষ, সাইডীরিয়্যাল মডেল স্কুল এন্ড কলেজ, খানসামা, দিনাজপুর।