দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতির কারণে সংসার চালাতে গলদঘর্ম এমপিও শিক্ষকরা। এ পরিস্থিতিতে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের ৫০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা দেয়ার দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বিটিএ)। একইসঙ্গে মাধ্যমিক শিক্ষা সরকারিকরণ, শিক্ষকদের বদলি ও পেনশন প্রথা চালুর দাবি জানিয়েছে সংগঠনটির নেতারা। মঙ্গলবার রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর সবুজ বিদ্যাপীঠ স্কুল অ্যান্ড কলেজে অনুষ্ঠিত সমিতির এক সভায় এসব দাবি জানান শিক্ষক নেতারা।
সমিতির সভাপতি অধ্যক্ষ মো. বজলুর রহমান মিয়ার সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শেখ কাওছার আহমেদের সঞ্চালনায় সভায় মোট ১১ দফা দাবি জানায় বিটিএ। এসব দাবি বাস্তবায়ন না হলে রাজধানী ঢাকায় মহাসমাবেশসহ কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সংগঠনটির নেতারা।
আরও পড়ুন : সংসার চালাতে গলদঘর্ম এমপিও শিক্ষকরা
বিটিএর দাবিগুলো হলো, মাধ্যমিক শিক্ষা সরকারিকরণ করা, সরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের মতো পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা, বাড়ি ভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা দেয়া, পূর্ণাঙ্গ পেনশন প্রথা চালুকরণ এবং পেনশন প্রথা চালু না হওয়া পর্যন্ত অবসর গ্রহণের ৬ মাসের মধ্যে অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের পাওনা পরিশোধ করা ও শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন থেকে অতিরিক্ত ৪ শতাংশ কর্তন বন্ধ করা।
বিটিএর দাবিগুলোর মধ্যে আরও আছে, স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা, সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতো বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষকের বেতন স্কেল যথাক্রমে ৬ষ্ঠ ও ৭ম গ্রেডে করা, এমপিওভূক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বদলি প্রথা চালু করা, শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরির বয়সসীমা ৬৫ বছরে উন্নীত করা, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মতো শিক্ষক নিয়োগ কমিশন গঠন এবং শিক্ষাপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে আনুপাতিক হরে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পদায়ন দেয়া, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির করণে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের ৫০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা দেয়া, ম্যানেজিং কমিটি-গভর্নিং বডির সদস্যদের ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ এবং শিক্ষা ক্ষেত্রের সব বৈষম্য দূর করতে জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ এর দ্রুত বাস্তবায়ন করা।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিটিএর উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য বাবু রঞ্জিত কুমার সাহা, সিনিয়র সহ সভাপতি অধ্যক্ষ মো. আবুল কাশেম, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ইকবাল হোসেনসহ অন্যান্য শিক্ষক নেতারা।
সভায় নেতারা বলেন, এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা মাত্র ২৫ শতাংশ উৎসব ভাতা, ১ হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া, এবং ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পান। শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসরে যাবার পর অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাসেটর টাকা পেতে বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়। ফলে অনেক শিক্ষক-কর্মচারী টাকা পাওয়ার আগেই অর্থাভাবে বিনা চিকৎসায় মৃত্যুবরণ করেন। তাছাড়া কয়েক বছর ধরে কোন সুবিধা না দিয়েই অবসর ও কল্যাণ ট্রাস্টে অমানবিকভাবে শিক্ষক-কর্মচারীদর বেতন থেকে অতিরিক্ত ৪ শতাংশ কর্তন করা হচ্ছে। বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের কোন বদলি এবং পদেন্নতির সুবিধা নাই। একই কারিকুলামের সিলেবাস, একই একাডেমিক সময়সূচি, একইভাবে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও উত্তরপত্র মূল্যায়ণের কাজে নিয়োজিত থেকেও আর্থিক সুবিধার ক্ষেত্রে সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারী ও বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে পাহাড়সম বৈষম্য রয়েছে। তাছাড়া বেসরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষকদের বেতন সরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষকদের একধাপ নিচে দেয়া হয়। ইতোমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চাকরির বয়স ৬৫ বছর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। কিন্তু স্কুল ও কলেজের শিক্ষকদের চাকরির বয়স আগের মতই রয়েছে।
নেতারা আরও বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি-গভর্নিং বডির সদস্যদের শিক্ষাগত যোগত্য নির্ধারণ না করায় প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় নানারূপ সমস্যা বিরাজ করছে। শিক্ষক নিয়োগে স্বচ্ছতা আনায়নের লক্ষ্যে শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের দাবি পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মতো শিক্ষক নিয়োগ কমিশন গঠন এবং শিক্ষা প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে অনুপাতিক হারে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পদায়ন দেয়ার দাবি জানানো হয়। একইসঙ্গে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির করণে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের ৫০ শতাংশ মহার্ঘভাতা দেয়াসহ মাধ্যমিক শিক্ষা সরকারিকরণের দাবি জানান।
নেতারা বলেন, ১১ দফা দাবি বাস্তবায়ন করা না হলে সারাদেশের বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরা ঢাকায় মহাসমাবেশসহ কঠোর থেকে কঠোরতর কর্মসূচি পালনে বাধ্য হবেন।
শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।