দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক: শিক্ষাবোর্ডের চোখ ফাঁকি দিয়ে সংসদ সদস্য পরিচয় লুকিয়ে বছরের পর বছর তিনি রাজধানীর খিলগাঁওয়ের গোড়ান আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি পদে রয়েছেন। তিনি একাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসন-২৫ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য নার্গিস রহমান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষাবোর্ড ও স্কুল সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা ও ব্যক্তি দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলছেন, এমপি নার্গিস রহমান স্কুলের কোনো কাগজপত্রে এমপি পদবি ব্যবহার করেন না। এমনকি তার বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতির সিলেও নামের পাশে এমপি নেই। সভাপতি হিসেবে মনোনয়নের জন্য ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে যে কাগজপত্র পাঠানো হয়েছে, তাতেও শুধু নার্গিস রহমান লেখা হয়েছে। ফলে ঢাকা বোর্ড থেকে গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর নার্গিস রহমানকে বিদ্যালয়ের সভাপতি করে যে আদেশ জারি করা হয়েছে, তাতেও নামের পাশে এমপি লেখা হয়নি। তবে স্কুলসংশ্লিষ্ট কাজ বাদে অন্য যেকোনো কাগজপত্রে তিনি এমপি পদবি ব্যবহার করেন।
বিদ্যালয়টির শিক্ষকরা জাননা, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতি হওয়া নিয়ে আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকায় তিনি এমপি পদবি ব্যবহার করছেন না। তবে তিনি কয়েক মেয়াদ ধরেই এই বিদ্যালয়ের সভাপতি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগে একজন সংসদ সদস্য সর্বোচ্চ চারটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতি পদে থাকতে পারতেন। কিন্তু ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে আদালত এক আদেশে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কমিটি প্রবিধানমালার সংশ্লিষ্ট ধারা অবৈধ বলে রায় দেয়। ওই রায় অনুযায়ী মনোনীত হয়ে সভাপতি পদে থাকতে পারবেন না সংসদ সদস্যরা। সভাপতি হতে হলে তাকে পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আসতে হবে।
উচ্চমাধ্যমিক বা তার পরবর্তী পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সাধারণত যেগুলো কলেজ নামে পরিচিত, সেগুলোর পরিচালনা পর্ষদকে বলা হয় গভর্নিং বডি। এই গভর্নিং বডির সভাপতি মনোনীত হন। ফলে কলেজ পর্যায়ে এমপিদের সভাপতি হওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি নির্বাচিত হন সদস্যদের ভোটে। ফলে সেখানে সংসদ সদস্যরা যদি নির্বাচিত হন, তাহলে তাদের সভাপতি হিসেবে থাকতে আইনগত কোনো বাধা নেই। কিন্তু গভর্নিং বডির সভাপতি না থাকতে পারায়, সংসদ সদস্যরা স্কুলের সভাপতি হিসেবেও সাধারণত থাকেন না।
জানা গেছে, বিদ্যালয়ের সভাপতি নার্গিস রহমানের অনিয়মের ব্যাপারে আদালতে একটি রিট পিটিশন দাখিল করেন একজন অভিভাবক। তাতে আদালত সভাপতির কার্যক্রম তিন মাসের জন্য স্থগিত করে। এরপর সভাপতি নিজে একটি ভ্যাকেট পিটিশন দাখিল করেন। এতে চেম্বার জজ আদালত স্ট্যাটাস-কো দেয়। ফলে কার্যক্রম স্থিতাবস্থায় থাকার কথা। কিন্তু এরই মধ্যে গত ২৫ সেপ্টেম্বর প্রধান শিক্ষক পদের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পাশাপাশি নিয়োগ কমিটি গঠন করেন সভাপতি। এরপর ১৫ দিনের আবেদনের সময় শেষ হওয়ার আগেই মামলাসংক্রান্ত তথ্য না জানিয়ে নিয়োগে ডিজির প্রতিনিধি চেয়ে আবেদন করা হয়। যদিও শেষ পর্যন্ত ডিজির প্রতিনিধি পাঠানোর কার্যক্রম স্থগিত করেছে ঢাকা জেলা শিক্ষা অফিস। কিন্তু এরপরও যেকোনোভাবেই হোক নিয়োগ-প্রক্রিয়া শেষ করার চেষ্টা চলছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সংসদ সদস্য নার্গিস রহমান বলেন, ‘আমি যেহেতু সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য, এ জন্য আমি স্কুলের কাগজপত্রে এমপি শব্দটি ব্যবহার করছি না। আমি স্কুল সংশ্লিষ্টদের বারবার বলেছি, আমাকে মুক্তি দেন, আমি আর সভাপতি পদে থাকতে চাই না।’
তিনি আরও বলেন, ‘কমিটির মিটিংয়ে গেলে নাশতা পর্যন্ত আমি নিজের টাকাতে খাওয়াই। আমি কোনো অনিয়মের সঙ্গে নেই। তবে যারা চুরি করতে চায়, অনিয়ম করতে চায়, তাদের আমি ছাড়ব না। আর আদালতের স্থগিতাদেশ আমরা আইনিভাবে মোকাবিলা করব।’