দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালনা পর্ষদ এমপিদের পরিবর্তে তাদের স্ত্রী, পুত্র, কন্যারা দখল করছেন। কোন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির সভাপতি হচ্ছেন ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতারা। গত মঙ্গলবার একটি জাতীয় দৈনিক এ নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
জানা গেছে, সভাপতি পদে আগের মতোই মনোনয়ন প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হচ্ছে। এ কারণে খেয়াল-খুশিমতো যাকে ইচ্ছা তাকে সভাপতি করার সুযোগ রয়ে গেছে। সভাপতি পদে প্রত্যক্ষ নির্বাচন করার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রবিধানমালা সংশোধন না হওয়ায় এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সভাপতি পদে এমপিদের স্বজন বা স্থানীয় নেতারা আসায় স্কুল-কলেজ পরিচালনায় আগের চেয়ে অনিয়ম-বিশৃঙ্খলা বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
গত ১ জুন হাইকোর্টের এক রায়ে বলা হয়, স্থানীয় সংসদ সদস্যরা কোন স্কুল-কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি হতে পারবেন না। এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়। আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন। আদালতের রায়ে গভর্নিং বডির সভাপতির পদ হারাতে না হারাতেই সেখানে নিজেদের স্বজন বা অনুগত নেতাদের বসিয়ে দিচ্ছেন এমপিরা। প্রশ্ন হচ্ছে, স্কুল-কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতির পদ দখলে রাখতে তারা এত মরিয়া কেন? অভিযোগ রয়েছে_ ভর্তি বাণিজ্য, উন্নয়ন ফান্ডের টাকা নয়-ছয় করা প্রভৃতি কাজে জড়িত হওয়ার জন্য একশ্রেণীর লোক গভর্নিং বডির সভাপতি হতে চান। তাদের কারণে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা ভোগান্তিতে পড়ছেন।
আদালতের রায়ের পর আশা করা গিয়েছিল, এবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো স্থানীয় এমপিদের হস্তক্ষেপমুক্ত হয়ে স্বাধীনভাবে পরিচালিত হবে। বাস্তবে সেটা হয়নি। গভর্নিং বডির সভাপতি পদে নির্বাচনের প্রক্রিয়া অনুসরণ না করা পর্যন্ত এই সমস্যার সমাধান হবে বলে মনে করার কোন কারণ নেই। বলা হচ্ছে, আদালতের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ না হওয়ায় সংশ্লিষ্ট প্রবিধানমালা সংশোধন করা যাচ্ছে না। আমরা আশা করব, আদালতের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর অনতিবিলম্বে সংশ্লিষ্ট প্রবিধানমালা সংশোধন করা হবে। সেই সঙ্গে আমরা জানতে চাই, আদালতের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের আগে কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির সভাপতি পদে এমপিদের স্বজন বা তাদের অনুগতরা মনোনীত হলো কী করে?
আমরা মনে করি, এ ধরনের অনুমোদন অনৈতিক। আমরা আশা করব, অনৈতিকভাবে দখল করা পদ তারা স্বেচ্ছায় ছেড়ে দেবেন। কেউ স্বেচ্ছায় পদ ছাড়তে না চাইলে তাদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় যৌক্তিক পদক্ষেপ নেবে বলে আমরা আশা করি।
সূত্র: দৈনিক সংবাদের সম্পাদকীয়