উচ্চশিক্ষার গবেষণা ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী শিক্ষকদের দ্বারা বছরের পর বছর ধরে অন্যায় ঘটে যাচ্ছে। সেই অন্যায়টি তারা করছেন এমফিল-পিএইচডি গবেষণার্থে আগ্রহীদের যোগ্যতা নিরূপণে। খোলাসা করে বলি :
বর্তমানে ঢাবি, জাবি, রাবি, চবিসহ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এমফিল ও পিএইচডি গবেষকদের আবেদনের যোগ্যতা বিবেচনায় পূর্বতন শ্রেণী-পদ্ধতির ক্ষেত্রে মাধ্যমিক/সমমান ও উচ্চমাধ্যমিক/সমমান পরীক্ষার যে কোনো একটিতে প্রথম বিভাগ ও অন্যটিতে দ্বিতীয় বিভাগ (ন্যূনতম ৫০ শতাংশ নম্বর) এবং গ্রেডিং পদ্ধতির ক্ষেত্রে মাধ্যমিক/সমমান ও উচ্চমাধ্যমিক/সমমান পরীক্ষার যে কোনো একটিতে জিপিএ-৪.০ এবং অন্যটিতে জিপিএ-৩.৫০কে ন্যূনতম গ্রেড-পয়েন্ট হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে।
এক্ষেত্রে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে গ্রেডিং শুরুর প্রথমবার অর্থাৎ ২০০১ ও ২০০৩ সালের সঙ্গে এর পরবর্তী বছরগুলোতে প্রযুক্ত গ্রেডিংয়ের সমন্বয়করণে বিভিন্ন সময়ে যে সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সেগুলো মানা হচ্ছে না। অর্থাৎ ২০০১ থেকে শুরু করে ২০১৬ সাল পর্যন্ত মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক উতরানো সব শিক্ষার্থীর প্রাপ্ত গ্রেডকে ‘এক’ করে দেখছে তারা। অথচ গ্রেডিং পদ্ধতি চালুর বছরে (২০০১) এসএসসি/সমমানের পরীক্ষায় সারা দেশে জিপিএ-৫ পেয়েছিল যেখানে মাত্র ৭৬ জন, সেখানে ২০১৬ সালে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৯ হাজার ৭৬১ জন এবং এইচএসসি/সমমান পরীক্ষার গ্রেডিং পদ্ধতি চালুর বছরে ২০০৩ সালে জিপিএ-৫ ( চতুর্থ বিষয় ছাড়া) পেয়েছিল যেখানে মাত্র ২০ জন শিক্ষার্থী, সেখানে সদ্যবিদায়ী ২০১৬ সালে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫৮ হাজার ২৭৬ জন শিক্ষার্থী। এ বিভেদটা বুঝে নিতে কাণ্ডজ্ঞানের সাধারণ প্রয়োগই যথেষ্ট ছিল। যা হোক, সেটার অভাব থাকে বলেই সরকারকে একাধিকবার প্রজ্ঞাপন জারি করে এ গ্রেডিং বৈষম্যের মুসাবিদা করতে হয়েছে। উল্লেখ্য, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন নং শিম/শাঃ ১১/১৯-১/২০০৭/১৭৪ অনুযায়ী বর্তমান প্রচলিত জিপিএ বা ক্ষেত্রমতো সিজিপিএ’র বিপরীতে আগের এসএসসি বা সমমান এবং এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষার ফলাফলের ক্ষেত্রে জিপিএ-৩.০০ বা তদূর্ধ্ব প্রথম বিভাগ, জিপিএ-২.০০ থেকে ৩.০০-এর কম দ্বিতীয় বিভাগ, জিপিএ-১.০০ থেকে ২.০০-এর কম তৃতীয় বিভাগ নির্ধারণ করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে জিপিএ’র ক্ষেত্রে মানবণ্টনে ভিন্নরকম পদ্ধতির প্রয়োগে বৈষম্যের সৃষ্টি হলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা ০২.০৬.২০০৯ তারিখের প্রজ্ঞাপন ও গেজেটে ২০০১, ২০০২ ও ২০০৩ সালের এসএসসি/সমমান ও ২০০৩ সালের এইচএসসি/সমমান পরীক্ষায় জিপিএ-৩.৫কে প্রথম বিভাগের সমমান ধরা হয়েছে। এরপর ০২.০৩.২০১০ তারিখে জারি করা সংশোধিত গেজেটে সব সালের জন্য জিপিএ-৩কে প্রথম শ্রেণীর সমমান ধরা হয়েছে।
তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের এমফিল-পিএইচডি গবেষকদের জন্য গ্রেডিং পদ্ধতিতে যে ন্যূনতম ৩.৫ নির্ধারণ করেছে, সেখানে ৩.৫ কে পূর্বতন শ্রেণী-পদ্ধতির নিরিখে কোন্ মানের ক্যাটাগরিতে বিবেচনা করা হচ্ছে? শ্রেণী পদ্ধতিতে যেখানে এসএসসি ও এইচএসসির একটিতে ১ম শ্রেণী আর অন্যটিতে ২য় শ্রেণী পেলেই যোগ্য বিবেচনা করা হচ্ছে, সেখানে গ্রেডিং পদ্ধতিতে কেন সরকারি প্রজ্ঞাপন শিম/শাঃ ১১/১৯-১/২০০৭/১৭৪ অনুযায়ী শ্রেণীর বিপরীতে গ্রেডকে বিবেচনা করা হচ্ছে না? সরকারি বিবেচনায় গ্রেড-৩ (৫১-৫৯ শতাংশ)-এর বেশি পেয়েও কেন শিক্ষার্থীরা (২০০১ ও ২০০৩ সালের) এমফিল-পিএইচডিতে আবেদনের যোগ্যতা রাখবে না?
পুনরাবৃত্তির সুরে বলি, বর্তমানের লাখ লাখ জিপিএ-৫-এর সঙ্গে ২০০১ ও ২০০৩ সালে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক উতরানো শিক্ষার্থীদের জিপিএ’র তুলনা চলে না। সেজন্য এমফিল-পিএইচডির আবেদনপত্রে তাদের ক্ষেত্রে গ্রেডিং যোগ্যতার আলাদা বিধান উল্লেখ করার বিকল্প থাকে না। আবার এটি না করলে এ বিষয়ক সরকারি প্রজ্ঞাপনকেও অমান্য করা হয় এবং সে কারণে গবেষণায় আগ্রহী অসংখ্য মানুষের উচ্চশিক্ষার অধিকারকে তুচ্ছজ্ঞান করা হয়, যা মোটেই প্রত্যাশিত নয়।
চারু হক : লেখক, অনুবাদক