এমসি কলেজে অগ্নিসংযোগ: ২৯ জনের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে তদন্ত কমিটি

নিজস্ব প্রতিবেদক |

২০১২ সালে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী এমসি কলেজের ছাত্রবাস পোড়ানোর ঘটনায় ২৯ জনের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেয়েছে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি। তাদের গ্রেপ্তারের প্রস্তুতি চলছে। আর ছাত্রলীগ ও ছাত্র শিবিরের বিরোধের কারণেই মূলত এই নাশকতা চালানো হয়েছে বলেও তদন্তে জানা গেছে।

সিলেট চিফ মেট্রোপলিটন আদালতে গত বুধবার (১৫ নভেম্বর) প্রতিবেদন দাখিল করে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি। পরদিন বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) সিলেটের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন আদালতের বিচারক উম্মে সরাবন তহুরা আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন আদালতের বেঞ্চ সহকারী মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘এমসি কলেজের ছাত্রাবাস পোড়ানোর ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি ২৯ জনের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেয়েছে। এদের বিরুদ্ধে আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। পরোয়ানাগুলো সংশ্লিষ্ট থানায় পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে।’

তদন্তে যে ২৯ জনের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে তারা হলেন- সিলেট সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও বর্তমানে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক দেবাংশু দাস মিঠু, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক (বরখাস্ত) সভাপতি পংকজ পুরকায়স্থ, আবু সরকার (বহিরাগত, শ্রমিক লীগের সাবেক সভাপতি), জাহাঙ্গীর আলম (জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক), মৃদুল কান্তি সরকার, কামরুল ইসলাম, আলমগীর হোসেন (সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও বর্তমানে আইনজীবী ও বিশ্বনাথ উপজেলার রামপাশা ইউপি চেয়ারম্যান), বাবলা, মো. আতিকুর রহমান, লায়েক আহম্মেদ, সিদ্দিক আহম্মেদ ইউসুফ, জহিরুল ইসলাম, আক্তারুল ইসলাম, জসিম উদ্দিন, আসাদুজ্জামান শাহিন, মোহাম্মদ বিন মামুন বুলবুল, আউলাদ, আছরাফ আহমেদ শিপন, নজরুল ইসলাম, অলিউল্লাহ ওরফে ওলিউর রহমান, খুরশেদ আলম, বাছিদ ওরফে আবদুল বাছিদ, আবদুস সালাম, ইমতিয়াজ রফিক চৌধুরী, আবদুল্লাহ ফারুক, কয়েছ ওরফে কয়েছুজ্জামান তালুকদার, আবু রেহান, রুবেল ও জ্যোতির্ময় দাস সৌরভ।

তদন্তের পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, ‘ছাত্রাবাস পোড়ানোর ঘটনায় মামলার বাদীসহ সাক্ষীদের জবানবন্দি ফের গ্রহণ করা হয়। ফলে সাক্ষীদের মৌখিক সাক্ষ্য, ভিডিও ফুটেজ, স্থিরচিত্র, জেলা প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পর্যালোচনায় এটাই প্রমাণিত হয় যে, এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ছাত্রলীগ ও ছাত্র শিবিরের বিরোধের কারণেই সংঘটিত হয়। প্রথমত ছাত্রলীগের কর্মী উজ্জ্বল আহমদকে ছাত্র শিবিরের কর্মীরা গুরুতর জখম করায় তাৎক্ষণিক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরে ছাত্রাবাসে অগ্নিসংযোগ করা হয়। মৌখিক ও দালিলিক সাক্ষ্য বিচার বিশ্লেষণে এটা সুষ্পষ্টভাবে প্রমাণিত।’

তদন্ত প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, ছাত্রাবাসে আগুন দিতে গ্যালনে করে পেট্রোল ব্যবহার করা হয়। পরে ছাত্রাবাস কক্ষ লুটপাটও হয়। এ ব্যাপারে এক সাক্ষী বলেছেন, ‘ছাত্রাবাস যখন আগুনে পুড়ছিল, তখন রামদা উঁচিয়ে মিছিল করেছিলেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পুলিশ ছাত্রাবাসের ফটকের সামনে উপস্থিত থাকলেও নীরব ছিল। পরে ছাত্রলীগের একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশও হয় ছাত্রাবাস ফটকে।’
আদালত সূত্রে জানা গেছে, আলোচিত এ মামলার রহস্য উদঘাটন করতে আদালতের নির্দেশে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় সিলেটের পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি)। এরপর সিআইডি ২০১৩ সালের ৩১ অক্টোবর আদালতে প্রথমবার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। তবে আদালত এ প্রতিবেদন গ্রহণ না করে পুনরায় তদন্তের নির্দেশ দেন। এরপর আবার তদন্ত করে সিআইডি ২০১৫ সালের ৯ আগস্ট ফের আদালতে প্রতিবেদন জমা দেয়। ওই প্রতিবেদনও আদালত গ্রহণ না করে পুলিশের একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের মাধ্যমে পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন।

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) দুই বার ও বিশেষায়িত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তদন্তে অপরাধী শনাক্ত না হওয়ায় আলোচিত এ মামলার ভবিষৎ নিয়ে সংশয় দেখা দেয়। সর্বশেষ এ মামলার জট খুলতে গত ৩১ মে বিচার বিভাগীয় তদন্তের আদেশ দেন সিলেটের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট উম্মে সারাবন তহুরা।

উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ৮ জুলাই শিবির ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষের জের ধরে ছাত্রবাসে দেওয়া আগুনে ৪২টি কক্ষ পুড়ে যায়। এ ঘটনায় হল সুপার বশির আহমদ বাদী হয়ে সিলেট মহানগর পুলিশের শাহপরান থানায় ২০১২ সালের ১৩ জুলাই মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে এ ঘটনায় আরও দুটি মামলা করা হয়।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান - dainik shiksha সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! - dainik shiksha শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! হিটস্ট্রোকে শিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে শিক্ষকের মৃত্যু লিখিততে প্রক্সি দিয়ে পার, মৌখিক পরীক্ষায় এসে ধরা - dainik shiksha লিখিততে প্রক্সি দিয়ে পার, মৌখিক পরীক্ষায় এসে ধরা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষক কেনো বদলি চান - dainik shiksha শিক্ষক কেনো বদলি চান ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে - dainik shiksha ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.00319504737854