মাধ্যমিক, মানে এসএসসি ও সমমানের পাবলিক পরীক্ষায় ইংরেজি ও গণিতই পাস-ফেলের নিয়ামক। গত দুই যুগ ধরে এমনটাই দেখে আসছি। ফল প্রকাশের পর বিষয়ভিত্তিক পাস-ফেলের খতিয়ানে নাড়া দিলে এমন চিত্রই দেখা যায়।
২০০৫ খ্রিষ্টাব্দ থেকে এসএসসি, এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাসের হারের ঊর্ধ্বগতিই দেখে আসছি। এই ঊর্ধ্বগতির নিয়ামকও গণিত আর ইংরেজি। এই দুই বিষয়ে বেশি পাস মানে গড় বা মোট পাসের হার বেশি। কিন্তু সেসিপসহ সরকারের বিভিন্ন শিক্ষা প্রকল্প, ব্যানবেইস এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মনিটরিং ও ইভ্যালুয়েশন উইং থেকে করা সমীক্ষায়/জরিপে দেখা যায়, ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির স্কুল ও মাদরাসার শিক্ষার্থীরা ইংরেজি ও গণিতে ভীষণ দুর্বলতা নিয়েই মাধ্যমিকের গণ্ডি পার হচ্ছেন। আবার এই দুই বিষয়ের শিক্ষকদের যোগ্যতা নিয়ে করা জরিপেও দেখা যায়, শিক্ষকদের অবস্থা করুণ।
বলে রাখতে চাই, সরকারি খরচে শিক্ষা নিয়ে সমীক্ষা ও জরিপগুলোর বেশিরভাগেরই দায়িত্বে থাকেন প্রকল্প ও অধিদপ্তরে এবং ব্যানবেইসে [শুধু মহাপরিচালক বাদ] কর্মরত বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত সরকারি কলেজের কর্মকর্তারাই। অন্যদিকে পাবলিক পরীক্ষা নেয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষাবোর্ডগুলোর চেয়ারম্যান, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, কলেজ ও বিদ্যালয় পরিদর্শকসহ সব গুরুত্বপূর্ণ পদে ক্যাডারভুক্ত শিক্ষকরাই আছেন। পাঠক, তাহলে এক যাত্রায় [পড়ুন একই শিক্ষার্থী] পৃথক ফলের ময়নাতদন্ত করে দেখি।
গত ২০ নভেম্বর শিক্ষা বিষয়ক দেশের একমাত্র জাতীয় পত্রিকা দৈনিক আমাদের বার্তায় ‘এক-পঞ্চমাংশ গণিত-ইংরেজি শিক্ষক স্নাতকে নিজ বিষয় পড়েননি’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনের কিছু অংশ এমন : ‘দেশের মাধ্যমিক পর্যায়ের ৯৬ হাজারের বেশি ইংরেজি শিক্ষকের মধ্যে ২২ শতাংশই স্নাতকে ইংরেজি পড়েননি। আর ৪ শতাংশ ইংরেজি শিক্ষক শুধু এইচএসসি পাস। অপরদিকে মাধ্যমিকের (ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি) ৬৭ হাজার ৯৭৫ জন গণিত শিক্ষকের ১২ শতাংশের বেশির স্নাতক বা এইচএসসিতে গণিত ছিলো না। আর প্রায় ২৪ শতাংশের স্নাতকে গণিত বিষয় ছিলো না। অর্থাৎ স্নাতকে গণিত ও ইংরেজি না পড়েই এক-পঞ্চমাংশ শিক্ষক গণিত ও ইংরেজি বিষয় পড়াচ্ছেন।
ব্যানবেইস-এর সদ্য প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ এডুকেশন স্ট্যাটিসটিকস-২০২১’ প্রতিবেদনের বরাতে লেখা প্রতিবেদনটিতে আরো বলা হয়, এমন পরিস্থিতিতে দেশের বেশিরভাগ শিক্ষার্থী গণিত ও ইংরেজিতে দুর্বলতা নিয়ে মাধ্যমিকের গণ্ডি পার হচ্ছেন।
২০২১ খ্রিষ্টাব্দে দেশের সরকারি-বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে ইংরেজি বিষয় পড়ান এমন শিক্ষক ছিলেন ৯৬ হাজার ৫৮ জন। এর মধ্যে কেবল ৬ হাজার ২৪১ জন শিক্ষক ইংরেজিতে স্নাতক। আর এ বিষয়ে স্নাতকোত্তর ছিলেন ৯ হাজার ৪১ শিক্ষক। সে হিসেবে দেশের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ইংরেজি বিষয়ের পাঠদানে নিয়োজিত শিক্ষকদের ৮৪ শতাংশেরই সংশ্লিষ্ট বিষয়ের ডিগ্রি নেই। ৯৬ হাজার ৫৮ জন ইংরেজি শিক্ষকের মধ্যে ২১ হাজার ৩৪০ জন বা ২২ দশমিক ২২ শতাংশের স্নাতকে ইংরেজি ছিলো না। আর ৩ হাজার ৮৫৭ জন বা ৪ দশমিক ০২ শতাংশ স্নাতকের গণ্ডি পার হতে পারেননি, তারা এইচএসসি পাস। এদের মধ্যে সরকারি স্কুলের ৪ হাজার ৫০৬ জন ইংরেজি শিক্ষকের মধ্যে ৬৯০ জনের স্নাতকে ইংরেজি ছিলো না, আর ১৪৬ জন এইচএসসি পাস। বেসরকারি স্কুলের ৯১ হাজার ৫৫২ জন ইংরেজি শিক্ষকের মধ্যে ২০ হাজার ৬৫০ জনের স্নাতকে ইংরেজি ছিলো না, আর ৩ হাজার ৭১১ জন এইচএসসি পাস।
ব্যানবেইসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছর দেশের সরকারি-বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোয় গণিতের শিক্ষক ছিলেন সর্বমোট ৬৭ হাজার ৯৫৫ জন। যদিও এর মধ্যে মাত্র ৫ হাজার ৮৪৩ জন সংশ্লিষ্ট বিষয়ে স্নাতক ও ৭ হাজার ২৮৫ শিক্ষক গণিতে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। সে হিসেবে সংশ্লিষ্ট বিষয়টিতে ডিগ্রি রয়েছে কেবল ১৯ শতাংশ শিক্ষকের। বাকি ৮১ শতাংশই অন্য বিষয়ে ডিগ্রিধারী। এ ৬৭ হাজার ৯৫৫ জন গণিত শিক্ষকের মধ্যে ১৬ হাজার ২৫৬ জন বা ২৩ দশমিক ৯৩ শতাংশের স্নাতকে গণিত ছিলো না। আর ১২ দশমিক ১৫ শতাংশ বা ৮ হাজার ২৫৮ জন এইচএসসিতে গণিত পড়েননি, কিন্তু গণিতে শিক্ষকতা করেছেন।
পাঠক, এবার চোখ বুলাই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত মাধ্যমিক ও উচচশিক্ষা অধিদপ্তরের ‘ন্যাশনাল অ্যাসেসমেন্ট অব সেকেন্ডারি স্টুডেন্টস-২০১৯’ প্রতিবেদনটিতে। এতে দেখা যায়, ‘ষষ্ঠ শ্রেণির প্রায় ২৯ শতাংশ শিক্ষার্থীর ইংরেজির অবস্থা খুবই খারাপ, ৩২ শতাংশ খারাপ বা গড়পড়তা স্তরে আছে। এ দুই স্তর মেলালে ৬১ শতাংশ শিক্ষার্থীর অবস্থাই খারাপ বলা যায়। মোটামুটি ভালো স্তরে আছেন ১৮ শতাংশের মতো। বাকি শিক্ষার্থীরা ভাল ও খুবই ভাল স্তরে আছেন। অষ্টম শ্রেণিতে ইংরেজিতে ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর অবস্থা খারাপ। ২৮ শতাংশ মোটামুটি ভালো। সাড়ে ১২ শতাংশ খারাপ স্তরে। বাকিরা মোটামুটি ভালো ও খুবই ভাল।
অপর একটি গবেষণায় দেখা যায়, গণিতের গ্রাজুয়েট যারা, তাদের শিক্ষার্থীরা গণিতে ভাল করেছেন। যারা বিজ্ঞানের গ্রাজুয়েট তাদের শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞানে ভাল করেছেন। আর ম্যানেজমেন্ট পড়ে যারা গণিতে পড়াচেছন তাদের শিক্ষার্থীদের দক্ষতা অর্জনের হার কম। ভিন্ন বিষয়ের স্নাতকধারীরা গণিত কিংবা বিজ্ঞান পড়াতে গেলে কাঙ্খিত মান অর্জন কঠিন হবেই। প্রশিক্ষণের দিক দিয়েও বেশ পিছিয়ে রয়েছেন গণিত ও ইংরেজি শিক্ষকরা।
পাঠক, এবার অন্য প্রসঙ্গ। ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের আগস্টে দৈনিক প্রথম আলো ‘৬৮ শতাংশ শিক্ষক ফেল কেন?’ শিরোনামে আমার একটা উপ-সম্পাদকীয় প্রকাশ করেছিলো। তখন আমি ইংরেজি দৈনিক নিউ এইজের বিশেষ প্রতিবেদক এবং সংসদ ও শিক্ষা বিট দেখি। পাশাপাশি ডিজিটাল পত্রিকা দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করি। প্রথম আলোতে প্রকাশের পরদিন লেখাটা দৈনিক শিক্ষাডটকমে প্রকাশ করি। লেখাটির প্রতিক্রিয়ায় যুক্তি-তর্কের বদলে আমাকে ব্যক্তিগতভাবে গালমন্দ করেছিলেন কয়েকজন। প্রথম আলোতে প্রকাশিত সেই লেখাটির কয়েকটি অনুচ্ছেদ এরকম: “শিক্ষাসংশ্লিষ্ট সবার জানা, ইংরেজি ও গণিত বিষয় দুটো পাবলিক পরীক্ষায় পাস-ফেলের নিয়ামক। ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে ৯২ দশমিক ৬৭ শতাংশ পরীক্ষার্থী এসএসসি পাস করেছেন। সামান্য কয়েকজন বাদে এ শিক্ষার্থীরাই ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে দশম শ্রেণিতে, তার আগে ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে নবম, ২০১১-তে অষ্টম, ২০১০-এ সপ্তম ও ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে ষষ্ঠ শ্রেণি পড়ুয়া ছিলেন।
তারাই ষষ্ঠ শ্রেণিতে থাকাকালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ও জেলা প্রশাসক এবং জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত ১০০ নম্বরের প্রাক-মূল্যায়ন সমীক্ষায় বসেছিলেন। পরীক্ষার নম্বর বিভাজন- বাংলা, ইংরেজি ও গণিতে মোট ৬০ এবং সমাজ ও বিজ্ঞানে ৩০ এবং ধর্মে ১০। পঞ্চম শ্রেণির পাঠ্যবই থেকে তৈরি করা প্রশ্নে ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত প্রাক-মূল্যায়ন সমীক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল, শিক্ষার্থীরা কী ধরনের দুর্বলতা নিয়ে মাধ্যমিক শ্রেণিতে ভর্তি হয়, তা জানা।
আমার ব্যক্তিগত সংগ্রহে থাকা প্রায় সব জেলার মূল্যায়ন সমীক্ষার সমন্বিত ফলাফলের সারাংশ থেকে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি জেলার উদাহরণ দিচ্ছি। ওই সমীক্ষায় ঢাকা মহানগরসহ ঢাকা জেলার মোট ২৬টি থানা/উপজেলার ষষ্ঠ শ্রেণির প্রায় ৭৫ হাজার শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে ৩৯ শতাংশের বেশি ফেল করেছেন। অর্থাৎ ১০০ নম্বরের পরীক্ষায় বসে ২৯-এর কম নম্বর পেয়েছেন।
সমীক্ষায় শূন্য থেকে ২৯ নম্বরধারীদের ফেল ও ৩০-এর বেশি পেলে পাস ধরা হয়েছিল। পাঠক, মিলিয়ে দেখুন, ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে এসএসসিতে ঢাকা বোর্ডের পাসের হার ৯৩ দশমিক ৯৪ শতাংশ। মাত্র ৬ শতাংশ ফেল। আর এরাই যখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে ছিলেন, তখন ফেলের হার ৩৯ শতাংশের বেশি। তা-ও আবার ঢাকা মহানগরসহ ঢাকা জেলায় যেখানে ভালো প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকের সংখ্যা বেশি বলে ধরা হয়। এবার দেখুন, চট্টগ্রাম মহানগরসহ এ জেলার প্রায় ৭৭ হাজার শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে ফেল করেছেন ৪৪ শতাংশ।
শিক্ষানগর হিসেবে খ্যাত রাজশাহী মহানগরসহ ১০ উপজেলার প্রায় ৩৫ হাজার শিক্ষার্থীর ৪৬ শতাংশই ফেল। নানা বিবেচনায় গুরুত্বপূর্ণ কুমিল্লা জেলা থেকে ৬৭ হাজার অংশ নিয়ে ফেল করেছেন প্রায় ৪৮ শতাংশ। বরিশাল জেলার প্রায় ৩০ ও কিশোরগঞ্জের ৪৪ শতাংশ ফেল।”
পাঠক, গতকাল সোমবার প্রকাশিত চলতি বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় মোট জিপিএ-৫ পেয়েছেন ২ লাখ ৬৯ হাজার ৬০২ জন। গতবার জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন ১ লাখ ৮৩ হাজার ৩৪০ জন। এবার গড় পাস করেছেন ৮৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ শিক্ষার্থী। গতবার এই পাসের হার ছিল ৯৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ। এবার এসএসসিতে পাসের হার কমলেও জিপিএ-৫ বেড়েছে। প্রতিবছর বোর্ডভিত্তিক ও বিষয়ভিত্তিক পাসের শতকরা হারের একটি তুলনামূলক চিত্র তৈরি করে সাংবাদিকদের সরবরাহ করা হয়। বরাবরের মতো এবারও ওই কাগজগুলো পেতে চাইলাম। ঢাকার দুটি শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শাখা থেকে আমাকে বলা হলো : ‘ঢাকার বাইরের বোর্ডগুলো এবার এমন হিসেব বের করেনি। তাই আমরাও করিনি।’ কারণ, জানতে চাইলে এক কথায় জবাব দিলেন এমন: বেশিরভাগই তো পাস, তাই ফেলের কারণ অনুসন্ধান করে লাভ কী? এটা তো জানাই যে, যারা ফেল তারা ইংরেজি ও গণিতেই।
পাবলিক পরীক্ষায় এখন গণটোকাটুকি বা গণ নকল না থাকলেও নানারকম জালিয়াতি আছে। এবং সেগুলো ইংরেজি ও গণিত পরীক্ষা কেন্দ্র করেই, তার একটি উদাহরণ দেই। গত ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া এসএসসি পরীক্ষার প্রথম দিন থেকে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করা হয়েছে শিক্ষা প্রশাসনের নাকের ডগায় রাজধানীর মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে। স্কুলটির ম্যানেজিং কমিটির একাধিক সদস্যের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ। এই কেন্দ্রে পরীক্ষা দেন মতিঝিল আইডিয়ালের শিক্ষার্থীরা। গণিত ও ইংরেজি বিষয়ের পরীক্ষা চালকালে সলভড প্রশ্ন নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে একাধিক ব্যক্তির অনুপ্রবেশ ঠেকাতে গিয়ে লাঞ্ছিত হয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ ও বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা ড. মুন্সী শরীফ-উজ্জামান। দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদন প্রকাশ করে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিবের নির্দেশে এই ঘটনার তদন্ত করে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। অভিযোগ প্রমাণিত হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়ার মুরোদ দেখাতে পারেনি শিক্ষা বোর্ড। কারণ অনুসন্ধানে জানা গেছে, অভিযুক্ত পরিচালনা পর্ষদের সদস্য শাহ আলম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির ভালো ফলে পেছনে ভূমিকা রেখে আসছেন বহু বছর ধরে! শাহ আলম একটি সরকারি অফিসের কেরানি। তার সঙ্গে সদ্য বদলিকৃত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও আরেক বড় কর্তারা বড় সখ্য!
জিপিএ ফাইভ বিক্রি, খাতা না দেখেই ফল প্রকাশসহ নানা অভিযোগ ঢাকাসহ প্রায় সবগুলো শিক্ষাবোর্ডগুলো বিরুদ্ধে। আজকে শুধু ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের সদ্য বিদায়ী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এস এম আমিরুল ইসলাম পলাশের হালকা কাহিনী লিখছি। নানা অভিযোগে তাকে রাজধানীর মিরপুরের সরকারি বাঙলা কলেজে বদলি করা হয়েছে গত আগস্টে। বোর্ডের সবাই জানেন, আমিরুল স্যার রাজধানীর ডেমরার সামসুল হক খান স্কুল এন্ড কলেজ ও মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের মালিক মাহবুবুর রহমান মোল্লার একটি দামী গাড়ী ব্যাবহার করেছেন প্রায় দুই বছর। আমির সাহেবের বাসার সব নতুন ফার্নিচার, ফুলের টবসহ অনেক কিছু কিনে দিয়েছেন হঠাৎ গজিয়ে উঠে এসএসসিতে প্রচুর গোল্ডেন জিপিএ ফাইভ পাওয়া ঢাকার অপর একটি স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা। আমিরুলের প্রিয় স্কুলগুলোর শিক্ষার্থীরা কোন কেন্দ্রে পরীক্ষা দিলে গণিত ও ইংরেজি পরীক্ষায় ফেভার পায় তা সবার জানা। যেমন অষ্টম শ্রেণির জেএসসি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীর জানা ‘আই এ্যাম জিপিএ ফাইভ’। পরীক্ষা আর সমীক্ষার পার্থক্য জানতে কোনো সদ্য এসএসসি উত্তীর্ণর কাছে যেতে চাই না।
লেখক : সম্পাদক, দৈনিক শিক্ষাডটকম এবং নির্বাহী সম্পাদক, দৈনিক আমাদের বার্তা