এসএসসি-এইচএসসিতে উত্তরপত্র মূল্যায়নে নতুন কৌশল

নিজস্ব প্রতিবেদক |

এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার খাতায় নম্বর দেয়ার ক্ষেত্রে নতুন কৌশল নিতে যাচ্ছে সরকার। মূলত উত্তরপত্রে নম্বর দেয়ার বৈষম্য নিরসনের জন্য এ উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে। জেসএসসি পরীক্ষা কোন মন্ত্রণালয়ের অধীনে হবে তা এখনো নিশ্চিত না হওয়ায় জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষার ফল ও খাতা মূল্যায়ন নিয়ে কোনো নতুন সিদ্ধান্ত বা কৌশল নেই।

নতুন কৌশল অনুযায়ী পরীক্ষকদের প্রশ্নের নমুনা উত্তর দেয়া হবে। প্রশ্ন অনুযায়ী উত্তর দেয়ার কাঠামোও পুনর্বিন্যস্ত করা হবে। ফলে প্রশ্নের আলাদা উত্তরের জন্য আলাদা নম্বর দিতে হবে। দেয়া হবে উত্তরপত্র মূল্যায়নের চেকলিস্ট এবং খাতা দেখার ম্যানুয়াল। এছাড়া আগের মত হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ থাকছেই। উত্তরপত্র বিতরণেও কঠোর নিয়ম-নীতি আসছে। বর্তমান অনলাইন পদ্ধতিতে বাংলার শিক্ষক ইংরেজি খাতা পাওয়ার সুযোগ থাকছে। বছরের পর বছর চলে আসা ওই অন্যায় সুযোগও বন্ধ হচ্ছে।

পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল ও খাতা মূল্যায়ন নিয়ে পরীক্ষার্থীদের আপত্তি ও অসন্তোষ পুরনো। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এ ব্যাপারে আপত্তি বাড়ছেই। গত কয়েকটি এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফল পর্যালোচনায় দেখা গেছে, দিন দিন ফল চ্যালেঞ্জকারীর সংখ্যা বাড়ছে। এসব কারণেই শিক্ষার্থীর পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নে বৈষম্য ও ত্রুটি দূর করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সাংবাদিকদের বলেন পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়ন ব্যবস্থা উন্নত করতে আমরা নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। আপাতত নম্বর দেয়ার বৈষম্য নিরসনে বিভিন্ন কৌশল গ্রহণ করা হবে। আর এ কৌশল এবারের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা থেকেই বাস্তবায়িত হবে। পরবর্তীতে সব শিক্ষার্থীকে সমমানে মূল্যায়নের ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিশ্বব্যাপী এটা ‘স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন’ পদ্ধতি নামে পরিচিত। এবারের এসএসসি পরীক্ষা শেষে কিছু উত্তরপত্র আলাদা করে তাতে পরীক্ষামূলকভাবে ‘স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন’ পদ্ধতি প্রয়োগ করা হবে। তবে এই পদ্ধতিতে প্রণীত ফল শিক্ষার্থীকে দেয়া হবে না। এটা পদ্ধতি উন্নয়নের কাজে ব্যবহার করা হবে।

জানা যায়, পরীক্ষার খাতায় যৌক্তিক নম্বর নিশ্চিত করতে একটি ম্যানুয়াল তৈরির কাজ চলছে। এ লক্ষ্যে যশোরে ৫ দিনব্যাপী একটি কর্মশালা চলছে। কর্মশালায় প্রণীত ম্যানুয়াল খাতা মূল্যায়নের জন্য সারাদেশে পরীক্ষকদের দেয়া হবে। আগামী এসএসসি পরীক্ষা শেষে খাতা বিতরণের সময় প্রধান পরীক্ষক ও পরীক্ষকদের এটি দেয়া হবে। এর আগে সারা দেশের জন্য ২ হাজার প্রধান পরীক্ষক তৈরি করা হবে। তাদের বৈষম্যহীন নম্বর দেয়ার ওপর প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। পাশাপাশি নির্ভরযোগ্য নম্বর দেয়ার চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করা হবে। এসব চ্যালেঞ্জ এবং কার্যকর নম্বর দেয়ার সূত্র সাধারণ পরীক্ষকদের জানানো হবে। এছাড়া পরীক্ষকদের জন্য যথাযথভাবে খাতা মূল্যায়নে একটি চেকলিস্ট তৈরি করা হবে।

সবচেয়ে বড় উদ্যোগ থাকছে নমুনা উত্তর ও উত্তরপত্র তৈরির ক্ষেত্রে। ২০১৫ খ্রিস্টাব্দের এসএসসি পরীক্ষায় যশোর বোর্ডে নমুনা উত্তর ছাড়াই খাতা বিতরণ করা হয়েছিল। এ কারণে ওই বছর যশোর বোর্ডের ফল বিপর্যয় ঘটেছিল। এ অভিজ্ঞতা সামনে রেখে নমুনা উত্তর তৈরির দিকটি বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। এতে প্রশ্নের উত্তর দেয়ার কাঠামো পুনর্বিন্যস্ত থাকবে।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান জানান, সাম্প্রতি সময়ে উত্তরপত্র মূল্যায়ন নিয়ে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের একটি উল্লেখ যোগ্য অংশের আপত্তি আছে। গবেষণায় আমরাও নম্বর দেয়ার ক্ষেত্রে বড় রকমের বৈষম্য বিষয়ে সত্যতা পেয়েছি। দেখা গেছে, কোনো উত্তরে শিক্ষার্থী হয়ত নম্বর পাওয়ার যোগ্য নয়, কিন্তু দেয়া হয়েছে। আবার যেখানে নম্বর বেশি পাওয়ার কথা, সেখানে কম দেয়া হয়েছে। এসব নিরসনের লক্ষ্যে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি।

তিনি আরো বলেন, ইতিমধ্যে রোববার যশোরে ম্যানুয়াল তৈরির লক্ষ্যে ৫ দিনব্যাপী আবাসিক কর্মশালা শুরু হয়েছে। এই ম্যানুয়ালসহ অন্যান্য উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা গেলে সব শিক্ষার্থীকে নির্ভরযোগ্য ও মানসম্মত নম্বর দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা যাবে। নম্বর দেয়ায় বড় রকমের হেরফের আর ঘটবে না। জানা গেছে, ম্যানুয়ালটি করা হবে বিষয়ভিত্তিক। অর্থাৎ বাংলা, ইংরেজি, গণিতসহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর খাতা দেখার নির্দেশনা থাকবে এতে। পাশাপাশি কর্মশালায় শিখন ফল নির্ধারণ এবং প্রশিক্ষণের রোডম্যাপ তৈরি করা হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ভুইফোঁড় শিক্ষক সমিতি নেতাদের এমপিও বাতিল হতে পারে - dainik shiksha ভুইফোঁড় শিক্ষক সমিতি নেতাদের এমপিও বাতিল হতে পারে শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের জাপান টিকিট ৩০ লাখ! - dainik shiksha ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের জাপান টিকিট ৩০ লাখ! যৌন হয়রানি: ঢাবি শিক্ষক নাদির জুনাইদকে অব্যাহতি - dainik shiksha যৌন হয়রানি: ঢাবি শিক্ষক নাদির জুনাইদকে অব্যাহতি জাল সনদধারী শিক্ষকের এমপিও বাতিল - dainik shiksha জাল সনদধারী শিক্ষকের এমপিও বাতিল অভিযুক্ত শিক্ষা সাংবাদিকদের পক্ষে জোর তদবির - dainik shiksha অভিযুক্ত শিক্ষা সাংবাদিকদের পক্ষে জোর তদবির কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে যৌ*ন হয়*রানি: ঢাবি শিক্ষক নাদির জুনাইদকে অব্যাহতি - dainik shiksha যৌ*ন হয়*রানি: ঢাবি শিক্ষক নাদির জুনাইদকে অব্যাহতি দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে ষষ্ঠ-নবম শ্রেণিতে ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের সূচি - dainik shiksha ষষ্ঠ-নবম শ্রেণিতে ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের সূচি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0028140544891357