এসএসসি পরীক্ষা দেয়ার বদলে ছয় ছাত্রী বিয়ের পিঁড়িতে

পটুয়াখালী প্রতিনিধি |

মেয়েটির বয়স সবে ১৬ ছুঁই ছুঁই বাবা কৃষক। দুমকির নাসিমা কেরামত আলী বালিকা বিদ্যালয় থেকে সদ্যসমাপ্ত এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল তার। এর আগেই প্রেমে জড়ায় এক বেকার যুবকের সঙ্গে। পরীক্ষার আগে বিয়ের পিড়িতে বসেছে তারা। পরিবারের মান-সম্মানের কথা ভেবে বাবা-মা বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন তাদের। ফলে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া হয়নি মেয়েটির। মোবাইল ফোন ও ফেসবুকের মাধ্যমে এমন অসম প্রেমের পর বাল্যবিয়েতে বসেছে দুমকি উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছয় ছাত্রী।

কিশোরী বয়সে পড়াশোনার পরিবর্তে তারা এখন সংসার সামলাচ্ছে। তারা দুমকি নাসিমা কেরামত আলী বালিকা বিদ্যালয়, উত্তর শ্রীরামপুর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, লতিফ মোহসেনা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, জলিশা মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও আঙ্গারিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী। প্রত্যেকের বয়স ১৫ থেকে ১৬ বছর। লতিফ মোহসেনা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এক এসএসসি পরীক্ষার্থীর বাবাও কৃষক। ওই এসএসসি পরীক্ষার্থী এক যুবকের প্রেমে পড়ে যায়। প্রেমিক শহরের একটি রংয়ের দোকানের কর্মচারী। দীর্ঘদিন প্রেমের পর এসএসসি পরীক্ষার আগে প্রেমিকের বাড়িতে চলে যায় মেয়েটি। অপর চার ছাত্রীরও এমন অসম প্রেম থেকে বিয়ে হয়েছে। অনেকের সঙ্গে পরিবারের কোনো যোগাযোগ নেই। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ছাত্রীর ভাষ্য, "ভালোবেসেছি-প্রেম করেছি, অপরাধ করিনি। ভালোবাসার মানুষটিকে বিয়ে করে সংসার করছি। অনেক সুখে-শান্তিতে আছি।' আরেকজন বলছিল, “প্রেম করেছি। আগে বিয়ে, তারপর পরীক্ষা।

পরীক্ষা আগামী বছরও দিতে পারব। মনের মানুষটি হারিয়ে গেলে তাঁকে কোথায় খুঁজে পাব?' এক ছাত্রীর মা বলছিলেন, মেয়েটিকে নিয়ে তাঁদের অনেক স্বপ্ন ছিল। কখন লেখাপড়া বাদ দিয়ে প্রেমে জড়িয়েছে, তা বুঝতে পারেননি। পরীক্ষা শুরুর আগে তাঁদের কিছু না জানিয়ে ছেলের বাড়ি চলে গেছে। তার সঙ্গে এখন তাঁদের কোনো সম্পর্ক নেই। আরেক ছাত্রীর সঙ্গে ফেসবুকে পরিচয় হয়েছিল সিলেটের এক ছেলের। সে পরিচয় থেকে জড়িয়ে পড়ে প্রেমে। মেয়েটির মা বলেন, ছেলেটির সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন। সে স্বামীর বাড়ি চলে যাওয়ায় এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া হয়নি। আরেক পরীক্ষার্থীর স্বজন বলেন, প্রেমিকের সঙ্গে বিয়ে না দিলে আত্মহত্যার হুমকি দেয় তাঁর ভাগনি। শেষ পর্যন্ত তারাও বিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন। বয়স কম হলেও আরেক ছাত্রী লেখাপড়া বাদ দিয়ে প্রেমিককে বিয়ের দাবিতে ছিল অনড়।

পরে মান-সম্মানের ভয়ে এফিডেভিট করে বয়স বাড়িয়ে বিয়ে দিয়েছেন বলে জানান তার বাবা। আঙ্গারিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. বাবুল লস্কর বলেন, তাঁর বিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে স্বামীর বাড়ি থেকে এনে পরীক্ষায় বসানোর জন্য বাবার বাসায় কয়েকবার গিয়েছেন। পরিবারের অবাধ্য হয়ে বিয়ে করায় মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছেন বাবা-মা। দুমকি নাসিমা-কেরামত আলী বালিকা বিদ্যালয়ের দুই এসএসসি পরীক্ষার্থী প্রেমিকের সঙ্গে বিয়ের পিঁড়িতে বসেছে।

প্রধান শিক্ষক কাজী মাকসুদুর রহমান বলেন, মেয়ে দুটি স্বামীর বাড়ি থেকে আসতে চায়নি। পরীক্ষা দেওয়ার জন্য তাদের আনার অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বদরুন নাহার ইয়াসমিন বলেন, অভিভাবকদের অসচেতনতা এর মূল কারণ। প্রত্যেক অভিভাবকের উচিত ছেলেমেয়েদের গতিবিধির দিকে খেয়াল রাখা। ইউএনও মো. আল-ইমরান বলেন, অবাধ তথ্যপ্রবাহের যুগে উঠতি বয়সী ছেলেমেয়েরা স্মার্টফোনের মাধ্যমে নৈতিকতা হারাচ্ছে।

অভিভাবকদের উচিত, এ বয়সের সন্তানের হাতে ফোন না দেওয়া। বাল্যবিয়ের খবর পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কিছু অভিভাবক গোপনে এ কাজ করেন। এ কাজ থেকে তাঁদের বিরত থাকা উচিত।

 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারো ভর্তি পরীক্ষা চালু হবে - dainik shiksha জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারো ভর্তি পরীক্ষা চালু হবে সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি: দুই দিনে আবেদন প্রায় দুই লাখ - dainik shiksha সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি: দুই দিনে আবেদন প্রায় দুই লাখ শিক্ষক নিয়োগেও নামকাওয়াস্তে মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা হয়: গণশিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha শিক্ষক নিয়োগেও নামকাওয়াস্তে মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা হয়: গণশিক্ষা উপদেষ্টা পাঠ্যপুস্তক থেকে শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার বিষয়বস্তু অপসারণের দাবি - dainik shiksha পাঠ্যপুস্তক থেকে শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার বিষয়বস্তু অপসারণের দাবি এসএসসির ফরম পূরণ শুরু ১ ডিসেম্বর - dainik shiksha এসএসসির ফরম পূরণ শুরু ১ ডিসেম্বর কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের গল্প - dainik shiksha পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের গল্প কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক পাঠ্যপুস্তকে একক অবদান তুলে ধরা থেকে সরে আসার আহ্বান হাসনাতের - dainik shiksha পাঠ্যপুস্তকে একক অবদান তুলে ধরা থেকে সরে আসার আহ্বান হাসনাতের ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ - dainik shiksha ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0027198791503906