পুলিশ সুপারের (এসপি) বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন (এসিআর) প্রদানের ক্ষমতা ফের ডিসিদের হাতে দেওয়া হচ্ছে। উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্ত পেলে যে কোনো মুহূর্তে ডিসিদের এই ক্ষমতা প্রদান করা হতে পারে। সংস্কারের অংশ হিসেবে এই উদ্যোগ হাতে নেওয়া হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অতীতে বাংলাদেশে এই বিধান বলবৎ ছিল। পরে ব্রিটিশ আমলের এই বিধান স্থগিত করে এসপিদের এসিআর ডিআইজিকে লেখার ক্ষমতা দেওয়া হয়। পর্যায়ক্রমে পুলিশকে স্বাধীন করা হয়। সরকারের উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্ত পেলে আইটির স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করলেই আবার ডিসিদের হাতে এসিআর লেখার ক্ষমতা চলে যাবে। তবে বিকল্প আরেকটি প্রস্তাব রয়েছে। সেক্ষেত্রে এসপিদের এসিআর ডিআইজিকে দেওয়ার ক্ষমতা বহাল রেখে তাতে বিভাগীয় কমিশনারকে প্রতিস্বাক্ষর প্রদানের সুযোগ রাখা হতে পারে। অর্থাৎ এসপির এসিআর লিখবেন ডিআইজি। আর তাতে প্রতিস্বাক্ষর করবেন বিভাগীয় কমিশনার। একই সঙ্গে ওসিদের এসিআর লিখবেন এসপি। আর তাতে প্রতিস্বাক্ষর করবেন ডিসি। এতে 'চেক অ্যান্ড ব্যালান্স' থাকবে এবং কেউ স্বেচ্ছাচারী হতে পারবেন না। এ লক্ষ্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কাজ করছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
জেলা প্রশাসনের প্রধান হিসেবে' জেলা প্রশাসক আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত জেলা কমিটির সভাপতি। তার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় জেলার সব সদস্যদের উপস্থিত থাকতে হয়। কিন্তু অধিকাংশ জেলায় জেলার পুলিশ সুপাররা (এসপি) সভায় উপস্থিত থাকেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে সভা অনেকাংশে ফলপ্রসু হয় না। এমন অভিযোগ
কারণে জেলা প্রশাসক কমিটির প্রধান হয়েও জেলার আইনশৃঙ্খলা সম্পর্কে অনেক ক্ষেত্রে পরিপূর্ণ অবগত থাকতে পারেন না। অথচ জেলার সকল উন্নয়ন অগ্রগতিসহ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সংক্রান্ত প্রতিবেদন বিভাগীয় কমিশনারের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে উপস্থাপন করতে হয়। অতীতে দেখা গেছে, প্রতিটি জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনে ডিসিরা সংক্ষিপ্ত বিচারসহ ফৌজদারি কার্যবিধির (সিআরপিসি) কয়েকটি ধারার ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার জন্য প্রস্তাবও দিয়ে এসেছেন।
পাশাপাশি তারা আরও উল্লেখ করেন, অতীতে জেলা প্রশাসকরা পুলিশ সুপারের বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন (এসিআর) লিখতেন। যে কারণে জবাবদিহিতা থাকত। অন্যদিকে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের পর মাঠপর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখাসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সমস্যা হচ্ছে। এ বিষয়ে সংস্কারসহ আরও করণীয় সম্পর্কে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নীতি নির্ধারকদের মধ্যে আলাপ- আলোচনা চলছে। অতীতের মতো পুলিশ সুপারের বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন জেলা প্রশাসকের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া যায় কিনা সেটি বিবেচনায় আনার দাবি করেছেন তারা। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। এ সরকারের মেয়াদকালে কিভাবে প্রশাসন, পুলিশ ও বিচার বিভাগের সংস্কার হতে পারে বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।