নদী দখলের সংবাদ কাভারেজ করা থেকে বিরত থাকবে মর্মে ৫ কেজি গোস্ত ঘুষ চেয়েছেন সাংবাদিক। সেই গোস্ত কিনে দিতে না পারায় হার্ট অ্যাটাক করেছেন কর্মী। এ মর্মে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে বগুড়ার একটি বেসরকারি এনজিও টিএমএসএস। এতে বগুড়ার সাধারণ মানুষের মধ্যে হাস্যরসের সৃষ্টি হয়েছে। সেইসঙ্গে সাংবাদিকদের মধ্যে মিশ্রপ্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে।
বগুড়ার এনজিও টিএমএসএস’র বিরুদ্ধে বহু মানুষের জমি দখলের অভিযোগ রয়েছে। রয়েছে একটি বিশ্ববিদ্যালয় দখলের অভিযোগও। সেইসঙ্গে এক সময়ের খরস্রোতা করতোয়া নদীর বড় একটা অংশ নানা কৌশলে দখল করেছে এনজিওটি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ওই নদীর একটি বড় অংশ ভরাট করে বিনোদন পার্ক তৈরি করেছে টিএমএসএস। নদী ভরাট করে একাধিক জায়গায় পাকা স্থাপনাও করেছে এনজিওটি।
এদিকে নতুন করে মম ইন বিনোদন পর্কের আশপাশে নদী ভরাটের অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। গত ১৮ই মার্চ মম ইন ইকো পার্কের বালা কৈগাড়ী কাঁঠালতলা ঈদগাহ মাঠসংলগ্ন এলাকায় মাটি ও বর্জ্য ফেলে নদীর মূলপ্রবাহ বন্ধ ও ভরাটের দায়ে টিএমএসএসকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করেন জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত।
যদিও এনজিওটি’র পক্ষ থেকে একটি স্থানীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে বলা হয়েছিল ওই ঘটনা ছিল প্রশাসনের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি।
এবার গত ১লা মে দিবাগত রাতে ঠিক একই জায়গায় গোপনে নদীতে মাটি ভরাট করার সময় মম ইন ইকো পার্কের বালা কৈগাড়ী কাঁঠালতলা ঈদগাহ মাঠসংলগ্ন এলাকা থেকে ৫টি ট্রাক জব্দ করেন জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। ওই সময় টিএমএসএসের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করার নির্দেশ দেন নির্বাহী হাকিম ও জেলা প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার মো. নুরুল ইসলাম। পরে ৪ঠা মে পাউবোর উপ-সহকারী প্রকৌশলী হাসানুজ্জামান বাদী হয়ে টিএমএসএসের বিরুদ্ধে বগুড়া সদর থানায় মামলা করেন।
ওই ঘটনাকে জনৈক সাংবাদিক শত্রুতাবশত করেছেন মর্মে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন। সেখানে টিএমএসএসের প্রধান নির্বাহী হোসনে আরা বেগম নিজেদের কর্মকাণ্ডগুলো দেশ, সমাজ এবং সমাজের মানুষের কল্যাণের জন্যই করা হয় মর্মে উল্লেখ করেছেন। নিজেদের পক্ষে সাফাই গাওয়া লম্বা ওই বিজ্ঞপ্তির একটি প্যারাতে টিএমএসএসের প্রধান নির্বাহী হোসনে আরা বেগম উল্লেখ করেছেন, ‘টিএমএসএস মিডিয়া বিভাগের নবীন জনবল রায়হান আহম্মেদ তালুকদার রানা হাসপাতালের সিসিইউতে ভর্তি থাকাবস্থায় আমাকে অবহিত করলেন, আমার হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম কারণ, গত মাসের ১৮ তারিখে এক বহুল পরিচিত সাংবাদিক আমাকে বলেছিলেন, তোমাদের জমি তোমরা ভরাট করছো এটা ঠিক আছে, কিন্তু এটা দিয়েই তোমাদের বারোটা বাজিয়ে দেয়া যাবে, আমাকে ৫ কেজি গরুর মাংস কিনে দাও, তোমাদের কাজ তোমরা করো। আমার হাতে টাকা ছিল না, আপনাকেও বলতে সাহস পাই নাই। তাই আপনার তথা টিএমএসএস’র বিরুদ্ধে এতকিছু হচ্ছে। আমি কেন কিছুই করতে পারলাম না, এই টেনশন করতে করতেই আমি আজ সিসিইউতে ভর্তি আছি।’
এদিকে গোস্ত ঘুষ চাওয়া সাংবাদিকের নাম উল্লেখ না করে এমন বিজ্ঞপ্তি পত্রিকায় প্রকাশের ঘটনায় বগুড়ার সাংবাদিক মহলে মিশ্রপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তাদের বেশির ভাগ বিষয়টিকে ভালোভাবে নেননি। সাধারণ মানুষের কাছে পুরো সাংবাদিক সমাজকে হেয় করা হয়েছে।
এ দিকে আরেক সাংবাদিক মহসিন আলী রাজু জানান, এমন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে টিএমএসএস কাণ্ডজ্ঞানহীন একটি কাজ করেছে। কোনো সাংবাদিক যদি এমন অনৈতিক ঘুষ চেয়ে থাকেন তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারতো। অথবা সেই সাংবাদিকের কর্মস্থলে বিষয়টি লিখিতভাবে অভিযোগ দিতে পারতো। তা না করে ঢালাওভাবে বগুড়ার সাংবাদিকদের হেয় করা হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় সাংবাদিক ইউনিয়ন বগুড়ার সাধারণ সম্পাদক গনেশ দাসের সঙ্গে। তিনি জানান, কিছু কিছু সাংবাদিক অনৈতিক কাজ করে থাকেন এটা সত্য। কিন্তু টিএমএসএস ওই সাংবাদিকের নাম উল্লেখ না করে এমন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করার পেছনে অন্য উদ্দেশ্য থাকতে পারে। প্রতিষ্ঠানটির অপকর্মের বিরুদ্ধে যাতে সাংবাদিকরা না লেখেন সেই জন্য একটা ভয় দেখানোর চেষ্টা করেছে। তাদের যদি সৎসাহস থাকে তাহলে গোস্ত ঘুষ চাওয়া ওই সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করে তার মুখোশ উন্মোচন করতে পারতো।
অপর আরেকটি ইউনিয়ন ‘বগুড়া সাংবাদিক ইউনিয়ন’র সাধারণ সম্পাদক জেএম রউফ বলেন, আমরা বিষয়টি নিয়ে প্রেস ক্লাবে বৈঠক করেছি। সেখানে ইউনিয়ন এবং ক্লাবের নেতৃবৃন্দ ছিল। আমরা যৌথভাবে টিএমএসএসের কাছে ব্যাখ্যা চাইবো। তারা কেন ঘুষ চাওয়া সাংবাদিকের নাম উল্লেখ না করে ঢালাওভাবে সাংবাদিক সমাজকে হেয় করলো? মূলত ওই এনজিওটি তাদের নানা অপরাধকে আড়াল করতে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।
সাংবাদিকদের নিয়ে এমন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা কতোটা দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছেন জানতে চাইলে টিএমএসএসের প্রধান নির্বাহী হোসনে আরা বেগম বলেন, আমি সব সাংবাদিককে জড়াইনি। একজন সাংবাদিক বলেছি। তার নাম উল্লেখ করেননি কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার নাম উল্লেখ করলে আমার সেই কর্মীর জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাবে। আমি সাংবাদিকদের জন্য একটা বাজেট রেখেছি। সবাইকে ডেকে তার নামটি বলে দেবো।