নেপালের এক স্কুলে ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্পের প্রায়োগিক পাঠ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। দেশটির রোলপার ধাবাং গ্রামের ওই স্কুলটিতে একাডেমিক কোর্সের পাশাপাশি স্থানীয় হস্তশিল্পে শিশুদের দক্ষ করে তুলতেই এমন উদ্যোগ।
স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ওই এলাকার ঐহিত্যবাহী হস্তশিল্প পণ্যের কদর রয়েছে দেশজুড়ে। কিন্তু নানা কারণে স্থানীয় সম্প্রদায়ের ভেতরে এর চর্চা কমে যাচ্ছে। তাই প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলে আসা হস্তশিল্পের উৎপাদন অব্যাহত রাখার স্বার্থে শিশুদের কারুশিল্পের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের হাতে কারুকাজ করা ঝাড়ু, ঝুড়ি, পশুপালন ও গৃহস্থালির কাজে ব্যবহৃত পাটের পণ্য ছাড়াও সোয়েটার তৈরি করতে শেখানো হচ্ছে। এজন্য এরই মধ্যে প্রশিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি ঐতিহ্যবাহী ফোক গানও শেখানো হচ্ছে শিশুদের।
বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ বিশাল কেসি বলেন, নতুন প্রজন্মের কাছে দক্ষতা পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে ধাবাং গ্রামের ঐতিহ্যবাহী কারুশিল্প সংরক্ষণের জন্য এই প্রোগ্রামটি চালু করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, বুনন (ওয়েভিং ও নিটিং) ওই অঞ্চলের প্রাচীন পেশা, যা অতীতে বেশ জনপ্রিয় ছিল। তবে নানাকারণে তারা ঐতিহ্যগত দক্ষতা ভুলে যাচ্ছে। তাই আমাদের স্কুলের শিক্ষার্থীদের এ বিষয়ে দক্ষ করে তোলা হচ্ছে। এতে তাদের বুনন সংস্কৃতি বিলুপ্তি থেকে রক্ষা পাবে। এ উদ্যোগ আমাদের সংস্কৃতির অনুস্মারক হিসাবে কাজ করবে।
বিদ্যালয়টিতে নার্সারি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় চারশ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন। প্রতি শুক্রবার ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের হস্তশিল্পের পাঠ দেওয়া হয়। এছাড়া ছেলেমেয়েরা ঐতিহ্যবাহী ফোক গানেরও তালিম নিচ্ছেন।
বুননের প্রশিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া হিমা বালি বলেন, আমাদের শিশুরা দরকারি দক্ষতা শিখছেন। তারা আনুষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ করছেন। তারা এমন দক্ষতাও শিখছেন যা কেবল আমাদের ঐতিহ্য রক্ষায় সহায়কই হবে না, বরং পরবর্তী জীবনে তাদের আয়-উৎপাদনের সুযোগও দেবে।
সঙ্গীত শিক্ষক মাগার বলেন, আমরা শিশুদের পুরনো লোকগান শিখতেও সাহায্য করছি, যা স্থানীয় সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। আমি তাদের কিছু ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্র বাজাতে শেখাচ্ছি। তারা যদি নৈপুণ্যটি রপ্ত করে নেয়, তাহলে আমরা তরুণ প্রজন্মের মাধ্যমে আমাদের ইতিহাস ও সংস্কৃতি সংরক্ষণ করতে সক্ষম হবো।
স্কুলটির গ্রেড অষ্টমের ছাত্রী হিম কুমারী বালি বুনন ক্লাসে ভর্তি হয়েছেন। তিনি বলেন, আমি কখনোই বাড়িতে বুনন শিখতে আগ্রহী ছিলাম না কিন্তু এখন এটি আমাদের স্কুল পাঠ্যক্রমের একটি অংশ। আমি এখন খুবই উৎসাহী। আমার বন্ধুরাও ক্লাসের জন্য সাইন আপ করেছে। তাদের সঙ্গে এমন কিছু শেখা মজাদার। আমি এখন বুনন উপভোগ করি। (কাঠমান্ডু পোস্ট অবলম্বনে)
দৈনিক শিক্ষা ডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।