আগামী নির্বাচনে নৌকায় ভোট দিয়ে আবারও আওয়ামী লীগকে জয়ী করার আহ্বান জানিয়ে দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নৌকা মার্কা সরকারে এলে দেশের উন্নতি হয়, মানুষ ভালো থাকে।
মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে কিশোরগঞ্জের মিঠামইন হেলিপ্যাড মাঠে উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ বছরের শেষে বা আগামী বছরে শুরুতে নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনে আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে জয়যুক্ত করে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দেবেন। আপনাদের কাছে এই আবেদন জানাই।’
এ সময় আওয়ামী লীগ সভাপতি উপস্থিত নেতাকর্মী ও জনতার উদ্দেশে বলেন, ‘দুই হাত তুলে ওয়াদা করুন আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন’। এ সময় উপস্থিত জনতা দুই হাত তুলে নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার কোনো চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। মা, বাবা, ভাই সব হারিয়েছি। আমি নিঃস্ব, রিক্ত। এ দেশের মানুষকে আমার বাবা ভালোবেসেছিলেন, তিনি তার জীবন দিয়ে গেছেন। জীবন দিয়ে গেছেন আমার মা, আমার ভাইয়েরা। আজকে আমি আপনাদের পাশে দাঁড়িয়েছি, আপনাদের ভাগ্য পরিবর্তন করবার জন্য। ’
টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ জাতির পিতার হাতে গড়া সংগঠন। এই সংগঠন যখন ক্ষমতায় আসে দেশের মানুষের কল্যাণ হয়। … মানুষ খেয়ে পরে ভালো থাকে। মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়। অন্তত ১৪ বছরে আজকের বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ বিশ্বে মর্যাদা পেয়েছে, বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।’
মঞ্চে উপস্থিত রাষ্ট্রপতির ছেলে কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসনের সংসদ সদস্য প্রকৌশলী রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিককে দেখিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘গত নির্বাচনে রাষ্ট্রপতির ছেলেকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। আপনাদের প্রতি কতৃজ্ঞতা জানাই। আগামীতেও একমাত্র নৌকা মার্কা সরকারে এলে আপনাদের উন্নতি হবে, দেশের উন্নতি হবে। এই হাওর অঞ্চলের উন্নয়নে যে সার্বিক কর্মসূচি আমরা বাস্তবায়ন করছি, সেগুলো বাস্তবায়িত হবে। ’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘নৌকা আমাদের প্রতীক। নদীমাতৃক বাংলাদেশ, এই নৌকায় ভোট দিয়ে দেশের মানুষ স্বাধীনতা পেয়েছে। এই নৌকায় ভোট দিয়েছে বলেই আজকে কিশোরগঞ্জ অবহেলিত নেই। আজকে উন্নত একটি জেলায় উন্নীত হয়েছে। প্রতিটি উপজেলা উন্নত হচ্ছে। ’
তিনি বলেন, ‘এই নৌকায় ভোট দিয়েছে বলেই এদেশের মানুষ শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে, স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি। সেই সুযোগটা সকলে পাচ্ছে। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাদের আপনাদের সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন। তাই আপনাদের পাশে আমরা সব সময় আছি। ’
আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে অন্য সরকারগুলোর কাজের তুলনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘লুটপাট, অর্থপাচার, জঙ্গিবাদ, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, মানুষ হত্যা, আর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর ওপর অকথ্য নির্যাতন তারা চালায়। মানুষের ওপর অত্যাচার আর মানুষকে শোষণ করা ছাড়া আর কিছু তারা দিতে পারে নাই, পারবেও না। তার কারণ হচ্ছে যাদের হাতে এই দলটি সৃষ্টি তারা কখনো জনগণের ভোট নিয়ে ক্ষমতায় যায় না। ’
তিনি বলেন, ‘অবৈধভাবে, সংবিধান লঙ্ঘন করে যারা ক্ষমতায় আসে, যে ক্ষমতা উচ্চ আদালত বলেছে অবৈধ, অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীর হাতে তৈরি সংগঠন; এরা তো জনগণের কথা চিন্তা করে না। এরা বাংলাদেশের কথাই চিন্তা করে না। এরা আসে লুটপাট করে নিতে। তাই যখনই এরা ক্ষমতায় এসেছে এদেশের মানুষের সম্পদ লুট করেছে, বিদেশে পাচার করে এখন আরাম আয়েশে দিন কাটায়। ’
উপজেলা আওয়ামী সভাপতি আবদুল হক নুরুর সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জিল্লুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক এম এ আফজাল, সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক প্রমুখ।
দীর্ঘ দুই যুগেরও বেশি সময় পর মঙ্গলবার সকালে মিঠামইনে আসেন জাতির পিতার কন্যা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমনকে ঘিরে উৎসবের আমেজ মিঠামইনসহ গোটা কিশোরগঞ্জে। তোরণ, ব্যানার, ফেস্টুনে সাজানো হয় এ জেলার বিভিন্ন সড়ক, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। জনসভা মাঠে বিশাল নৌকা আকৃতির মঞ্চ নির্মাণ করা হয়।
মঙ্গলবার ভোর থেকে ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম, করিমগঞ্জ, নিকলী, বাজিতপুরসহ কিশোরগঞ্জের অধিকাংশ উপজেলার নেতাকর্মীরা সড়ক পথে, বাস, পিক-আপ, মাইক্রোবাস, অটোরিকশা ও নৌ-পথে নৌকা, ট্রলার ও লঞ্চ যোগে জনসভায় আসেন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। মাঠসহ আশপাশের সড়কগুলোতে বিপুল সংখ্যক মানুষের উপস্থিতি দেখা গেছে।
বেলা ১১টা ৫ মিনিটের দিকে ঢাকা থেকে সরাসরি হাওর অধ্যুষিত মিঠামইনে আবদুল হামিদের বাড়ির পাশে ঘোড়াউত্রা নদীর চরে নবনির্মিত ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হামিদ সেনানিবাসে’ আসেন শেখ হাসিনা। সেখানে তিনি আবদুল হামিদের নামে নতুন এই সেনানিবাস উদ্বোধন করেন।
সেনানিবাস উদ্বোধনের পর দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বাড়ি যান। সেখানে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও তার পরিবারের সদস্যরা তাকে স্বাগত জানান। মধ্যাহ্নভোজে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে রাষ্ট্রপতির বাড়িতে সাদা ভাতের সঙ্গে ১৬ পদের হাওরের মাছ, ডাল, রসমালাই দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়।