কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীদের ঢাবি দর্শন

নিজস্ব প্রতিবেদক |

শোকরানা মাহফিলে অংশ নিতে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আসা কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীদের অনেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় এসেছেন প্রথমবারের মত। দেশের প্রাচীন এই বিদ্যাপীঠের বিভিন্ন এলাকা তারা ঘুরে দেখলেন, স্বোপার্জিত স্বাধীনতা আর রাজু ভাস্কর্যের সামনে দাঁড়িয়ে মোবাইলে তুললেন ছবি।

কওমি মাদরাসার সনদের স্বীকৃতি উদযাপনে রোববার এই শোকরানা মাহফিলে যোগ দিতে ভোর থেকেই দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বাসে করে ঢাকায় পৌঁছাতে থাকেন মাদরাসা শিক্ষার্থীরা।

আজিমপুর বা মতিঝিলে বাস থেকে নেমে পায়ে হেঁটে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পৌঁছানোর আগে তাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা পার হতে হয়।  

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রের প্রাঙ্গণে তাদের একজনকে বলতে শোনা যায়, “এইটা টিএসসি, এইটাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি। চল দেখে আসি।”

সোহরাওয়ার্দীতে শোকরানা মাহফিল শুরুর আগে সকালে টিএসসির ভেতরে গিয়ে দেখা যায় মাদরাসা শিক্ষার্থী ঘুরছেন ফিরছেন, কেউ কেউ শুয়ে-বসে বিশ্রাম নিচ্ছেন। টিএসসির ক্যাফেটেরিয়াতেও দেখা গেল তাদের সরব উপস্থিতি।

ফেনী জেলার পরশুরাম থেকে আসা মহিউদ্দিন জানালেন, মাদরাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সঙ্গে বাসে করে ঢাকায় এসেছেন তিনি।

তিনি বলেন, “আগে কখনও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আসিনি। টিএসসিতে মানুষ ঘুরতে আসে, এটা শুনেছি অনেকের কাছে।”

ফেনী সদরের মাওলানা আবুল কালাম বললেন, তিনি আগেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছেন, টিএসসিও দেখেছেন। সকালে এখানে এসেছেন মাহফিলে যাওয়ার আগে বিশ্রাম নিতে আর নাস্তা করতে।

মাহফিল শেষেও দেখা গেল টিএসসির রাস্তায় মাদরাসা পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের স্রোত। তাদের অনেকে রাজু ভাস্কর্য আর স্বোপার্জিত স্বাধীনতার সামনে দাঁড়িয়ে মোবাইল ফোনে ছবিও তুলছিলেন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সকল গণতান্ত্রিক ছাত্র আন্দোলনের পাদপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মাদরাসা শিক্ষার্থীদের এই সরব উপস্থিতি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদেরও মনোযোগ কেড়েছে।

পাঁচ বছর আগে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে গড়ে ওঠা গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনেরও সূচনা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ও শাহবাগকে কেন্দ্র করে। কওমি মাদরাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম এর বিরোধিতা করে নাম দিয়েছিল ‘নাস্তিকদের মঞ্চ’।

নারী নীতির বিরোধিতায় ২০১৩ সালের মে মাসে মতিঝিলে অবস্থান নিয়ে দিনভর তাণ্ডব চালিয়েছিল হেফাজতে ইসলাম। তাদের আপত্তির মুখেই সুপ্রিম কোর্টের সামনে থেকে লেডি জাস্টিসের ভাস্কর্য সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল।

বিভিন্ন মহলের আপত্তির পরও কওমি মাদরাসার দাওরায়ে হাদিসের সনদকে সাধারণ শিক্ষার স্নাতকোত্তর ডিগ্রির স্বীকৃতি দিয়ে সংসদে আইন পাস করেছে সরকার।

এই স্বীকৃতির উদযাপনে রোববার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এই শোকরানা মাহফিলের আয়োজন করে কওমির ছয় বোর্ডের সমন্বিত সংস্থা আল-হাইয়াতুল উলয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়্যাহ বাংলাদেশ। এর চেয়ারম্যান হেফাজতে ইসলামের আমির শাহ আহমদ শফীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

যানজটে ভোগান্তি

কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীদের শোকরানা মাহফিলে ব্যাপক সমাগম আর যান চলাচলের রুট পাল্টে দেওয়ায় যানজটে ভোগান্তি পোহাতে হয় রাজধানীবাসীকে।

রোববার সকালে রাজধানীর নিউমার্কেট, এলিফ্যান্ট রোড, শাহবাগসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষের মুখে দুর্ভোগের কষ্টের কথা শোনা যায়।

ঢাকার বাইরে থেকে আসা মাদরাসা শিক্ষার্থীদের বাস রাখার জায়গা ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার বিভিন্ন স্থান, আজিমপুর ও মতিঝিলে।

এসব বাসের কারণে সকালে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীদের পৌঁছাতে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটি স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী রুবায়েত জানায়, এত ভিড়ের মধ্যে হেঁটে আসতেও তার বেগ পেতে হয়েছে।

এই কর্মসূচির কারণে হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টাল মোড়, কাঁটাবন মোড়, মৎস্য ভবন মোড়, কদম ফোয়ারা, শিক্ষা ভবন মোড়, দোয়েল চত্বর, নীলক্ষেত মোড় থেকে যানবাহন ঘুরিয়ে দেয় পুলিশ। ফলে আশপাশের অন্যান্য সড়কে দেখা দেয় তীব্র যানজট। 

শাহবাগ থানার ওসি আবুল হাসান বলেন, “সারা দেশের বিভিন্ন উপজেলা থেকে অসংখ্য লোক এসেছে। এত লোক সমাগমের কথা চিন্তা করে সেভাবেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”

সকাল সাড়ে ১০টায় নিউ মার্কেট যানজটে আটকে থাকা একটি বাসের হেলপার মোহাম্মদ সালাম বলেন, “সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মিটিং, সারা শহরে জ্যাম। মানুষের অবস্থাতো দেখছেনই।”

গণপরিবহন কম থাকায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হাসপাতাল, সাকুরা হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের সামনে দিয়ে সাধারণ মানুষকে হেঁটে চলাচল করতে দেখা যায়।

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা নাফিউল হক বলেন, “দিনের পর দিন সাধারণ মানুষকে সমস্যায় ফেলে এসব মিটিং মিছিল করা হচ্ছে। এদের মধ্যে কবে বিবেক কাজ করবে সেটা আল্লাহ ভাল বলতে পারবেন।”

গুরুত্বপূর্ণ ওই এলাকায় যান চলাচল বন্ধ থাকায় ফার্মগেইট, শুক্রবাদ, কলাবাগান ও আসাদগেইট এলাকাতেও গাড়ি চলেছে ধীরগতিতে। চলতি পথের যানবাহনগুলোকে কোনো কোনো সিগন্যালে দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় থাকতে হয়েছে।

মিরপুর থেকে নিউ মার্কেটগামী বাসযাত্রী ফয়সাল জানান, শ্যামলী থেকে আসাদগেইট পর্যন্ত পৌঁছাতে তার দীর্ঘ সময় জটে আটকে থাকতে হয়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ মুরাদ আলি বলেন, “মাহফিলকে কারণে রোড ডাইভারশন করা হয়েছে। আমরা চেষ্টা করেছি যাতে ‘আটকা জট’ কোথাও না হয়। ধীর গতিতে হলেও গাড়ি চলেছে।”


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0025079250335693