কনডেম সেলের রায় স্থগিত চেয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক: মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে আসামিকে কনডেম সেলে না রাখা সম্পর্কিত হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ।

মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ আপিল আবেদন জমা দেয়া হয় বলে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন জানান।

আপিল বিভাগের চেম্বার জজের আদালতে বুধবার বিষয়টির শুনানি হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

  

মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে আসামিকে নির্জন কারাবাসে (কনডেম সেল) রাখা যাবে না বলে রায় দিয়েছে হাই কোর্ট।

একটি রিট মামলার চূড়ান্ত শুনানি শেষে সোমবার বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. বজলুর রহমানের বেঞ্চ পর্যবেক্ষণ ও নির্দেশনাসহ এ রায় দেয়।

ওইদিন রায়ের পর অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন আপিলের ব্যাপারে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছিলেন।

কনডেম সেলে থাকা তিন আসামিকে নিয়ে ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ জুন একটি জাতীয় দৈনিকে সংবাদ প্রকাশিত হয়। সেই প্রতিবেদন যুক্ত করে ওই বছরের ৩ সেপ্টেম্বর এ রিট আবেদন করেন অ্যাডভোকেট শিশির মনির।

সে সময় প্রাথমিক শুনানি নিয়ে রুল জারি করেছিল হাই কোর্ট। মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে আসামিদের কনডেম সেলে বন্দি রাখা কেন বেআইনি ঘোষণা হবে না এবং কেন জেলকোডের ৯৮০ বিধি অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছিল সেখানে।

একইসঙ্গে কনডেম সেলে থাকা বন্দিদের বিষয়ে ছয় মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

সেই রুলের ওপর শুনানি শেষে সোমবার রায় ঘোষণা করা হয়।

রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, ফৌজদারি কার্বিধিতে কোনো আসামিকে নির্জন কারাবাসে রাখা যাবে, তবে তা ৩০ দিনের বেশি নয়। এর মধ্যে টানা ১৪ দিন এবং মাসে ৭ দিনের বেশি নয়। কাজেই মৃত্যুদণ্ডের রায়ে পর কনডেম সেলে রাখা হলে তা দুইবার সাজার সমতুল্য।

রায়ের নির্দেশনায় আদালত বলেছে, সরকার কারাবিধি সংস্কারের যে কাজ করছে, সেখানে যেন এই রায় ও পর্যবেক্ষণের প্রতিফলন থাকে।

যদি কেউ তথ্য অধিকার আইনে কারাবন্দি সম্পর্কে কোনো কিছু জানতে চায়, তাহলে সে তথ্য দিতে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেওয়া হয় রায়ে।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের জামিন আবেদন নিয়েও আদালত নির্দেশনা দিয়েছে।

বর্তমান মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের জামিন আবেদন যে হাই কোর্টে গ্রহণ করা হয় না, সে কথা তুলে ধরে আদালত আপিল চলমান থাকা অবস্থায় তাদেরও অন্য আসামিদের (যাদের মৃত্যুদণ্ড হয়নি) মত জামিন আবেদন করার সুযোগ দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে।

পর্যবেক্ষেণে আরও বলা হয়, হাই কোর্টে ডেথ রেফারেন্স নিষ্পত্তির জন্য ছয় বছর অপেক্ষা করতে হয়। এরপর আপিল হলে লেগে যায় আরও অন্তত আট বছর। আপিলের রিভিউ আবেদন হলে তা নিষ্পত্তিতে লাগে আরও দুই বছরের মত। অর্থাৎ চূড়ান্ত নিষ্পত্তির জন্য ১৫-২০ বছর লেগে যায়।

বর্তমান ব্যবস্থায় এই পুরো সময়টাই আসমিকে নির্জন কারাবাসে (কনডেম সেল) থাকতে হয়।

এই প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে এক যুগ আগে খুন হওয়া সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যায় এখনও তদন্ত শেষ না হওয়াকে বিচারিক দুর্বলতার উদাহরণ হিসেবে বর্ণনা করা হয় রায়ের পর্বেক্ষণে।

‘মৃত্যুদণ্ডের আসামি’ কখন বলা যাবে, সেই সিদ্ধান্ত দিতে গিয়ে ভারতের আদালতের ‘সুনীল বাত্রা বনাম দিল্লি প্রশাসন (১৯৮০)‘ মামলা প্রাসঙ্গিক বলে রায়ের পর্বেক্ষণে উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, “কখন একজন আসামিকে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি করা হবে? বিচারিক আদালত সাজা ঘোষণার পর নাকি রাষ্ট্রপতি ক্ষমার আবেদন গ্রহণ না করার পর? ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ওই মামলার রায়ে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, রাষ্ট্রপতি ক্ষমার আবেদন গ্রহণ না করার পর দণ্ডিত ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি বলা হবে।

“অর্থাৎ সব ধরনের আইনগত অধিকার সম্পন্ন হওয়ার পরই কেবল কোনো ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি বলা যাবে এবং তাকে কনডেম সেলে রাখা যাবে।“

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দিদের কনডেম সেল থেকে সাধারণ সেলে স্থানান্তরের জন্যও কারা কর্তৃপক্ষকে উদ্যোগ নিতে বলেছে আদালত। সেজন্য সর্বোচ্চ দুই বছর সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
সরকার পরিচালনায় ভুলত্রুটি থাকলে ধরিয়ে দিন, সম্পাদকদের ড. ইউনূস - dainik shiksha সরকার পরিচালনায় ভুলত্রুটি থাকলে ধরিয়ে দিন, সম্পাদকদের ড. ইউনূস এইচএসসি ফল তৈরি: পরীক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় তথ্য চেয়েছে বোর্ড - dainik shiksha এইচএসসি ফল তৈরি: পরীক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় তথ্য চেয়েছে বোর্ড শিক্ষকদের পদত্যাগে বাধ্য ও হেনস্তা নয়: শিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha শিক্ষকদের পদত্যাগে বাধ্য ও হেনস্তা নয়: শিক্ষা উপদেষ্টা স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের আগস্ট মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের আগস্ট মাসের এমপিওর চেক ছাড় এনটিআরসিএর চেয়ারম্যান পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের ডিজি হলেন - dainik shiksha এনটিআরসিএর চেয়ারম্যান পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের ডিজি হলেন ছাত্রী হয়রানির অভিযোগ, উত্তরা ইউনিভার্সিটি উত্তপ্ত - dainik shiksha ছাত্রী হয়রানির অভিযোগ, উত্তরা ইউনিভার্সিটি উত্তপ্ত ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের হাত ভাঙলেন বরখাস্ত প্রধান শিক্ষক - dainik shiksha ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের হাত ভাঙলেন বরখাস্ত প্রধান শিক্ষক সাংবাদিক নিপীড়নের আইনগুলো এখনই বাদ দেয়ার প্রস্তাব - dainik shiksha সাংবাদিক নিপীড়নের আইনগুলো এখনই বাদ দেয়ার প্রস্তাব মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার চলতি দায়িত্ব দিতে আবেদন আহ্বান - dainik shiksha মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার চলতি দায়িত্ব দিতে আবেদন আহ্বান শিরীন শারমিনের পদত্যাগে স্পিকার পদে কি শূন্যতা তৈরি হলো - dainik shiksha শিরীন শারমিনের পদত্যাগে স্পিকার পদে কি শূন্যতা তৈরি হলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0055270195007324