দেশবরেণ্য ও জননন্দিত কন্ঠশিল্পী সুবীর নন্দী’র মৃত্যুবার্ষিকী আজ। সুবীর নন্দী ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ নভেম্বর, হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং থানার নন্দী পাড়ায়, এক সম্ভ্রান্ত কায়স্থ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা সুধাংশু নন্দী ছিলেন একজন চিকিৎসক ও সঙ্গীতপ্রেমী। তার মা পুতুল রানী গান গাইতেন। সঙ্গীতে হাতেখড়ি মায়ের কাছেই। তবে ভাই-বোনদের সঙ্গে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে তালিম নেন, ওস্তাদ বাবর আলী খানের কাছে।
তৃতীয় শ্রেণিতে থাকা অবস্থায়ই তিনি গান করতেন। ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে, প্রথম সিলেট বেতারে গান করেন সুবীর নন্দী। সেই সময়ে তার গানের ওস্তাদ ছিলেন গুরু বাবর আলী খান। লোকগান শিখাতেন বিদিত লাল দাশ।
সুবীর নন্দী ঢাকা রেডিওতে প্রথম গান গাওয়া শুরু করেন ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে। প্রথম গান ছিলো ‘যদি কেউ ধূপ জ্বেলে দেয়’, গীতিকার মোহাম্মদ মুজাক্কের এবং সুরকার ছিলেন ওস্তাদ মীর কাসেম। সুবীর নন্দীর গাওয়া কালজয়ী জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে আছে- ‘দিন যায় কথা থাকে’, ‘আমার এ দুটি চোখ পাথর তো নয়’, ‘পৃথিবীতে প্রেম বলে কিছু নেই’, ‘আমি বৃষ্টির কাছ থেকে কাঁদতে শিখেছি’, ‘হাজার মনের কাছে প্রশ্ন রেখে’, জীবনের গল্প এতো ছোট নয়’, ঐ রাত ডাকে ঐ চাঁদ ডাকে তুমি কোথায়’, ‘মনরে সুখ পাখি তোর হইলো না আপন’, ‘তুমি এমনই জাল পেতেছ সংসারে’, ‘বন্ধু হতে চেয়ে তোমার শত্রু বলে গণ্য হলাম’, ‘কতো যে তোমাকে বেসেছি ভালো’, ইত্যাদি।
সুবীর নন্দী তার কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ পাঁচবার পেয়েছেন, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দে শ্রেষ্ঠ পুরুষ কন্ঠশিল্পী ‘মহানায়ক’ ছবিতে, ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে শ্রেষ্ঠ পুরুষ কন্ঠশিল্পী ‘শুভদা’ ছবিতে, ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে শ্রেষ্ঠ পুরুষ কন্ঠশিল্পী ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ ছবিতে, ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে শ্রেষ্ঠ পুরুষ কন্ঠশিল্পী ‘মেঘের পরে মেঘ’ ছবিতে, ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে শ্রেষ্ঠ পুরুষ কন্ঠশিল্পী ‘মহুয়া সুন্দরী’ ছবিতে।
শিল্পকলায় অবদানের জন্য ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে পেয়েছেন ‘একুশে পদক’। এছাড়াও বাচসাস চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ আরো পেয়েছেন নানাধরণের পদক, ক্রেস্ট ও সম্মাননা। ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে তিনি সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।