খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষক ড. সেলিম হোসেনের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কবর থেকে তোলার আবেদন জানানো হয়েছে। গতকাল রোববার দুপুরে পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য কবর থেকে মরদেহ উত্তোলনের জন্য খুলনার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে আবেদন জানায়। এ ছাড়া গতকাল বিকেল থেকে কাজ শুরু করেছে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি।
খানজাহান আলী থানার ওসি প্রবীর কুমার বিশ্বাস জানান, যেহেতু এ ঘটনায় এখনও মামলা হয়নি, সে কারণে আদালত লাশ উত্তোলনের অনুমতি দেননি। আদালত থেকে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আবেদনের নির্দেশনা দেওয়া হয়। এরপর তারা খুলনা জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আবেদন জানান। মরদেহ যেহেতু কুষ্টিয়ায় দাফন করা হয়েছে, তাই খুলনার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবেদনটি কুষ্টিয়ার জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে পাঠিয়েছেন।
ময়নাতদন্ত ছাড়াই গত ১ ডিসেম্বর ড. সেলিমের মরদেহ কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার বাঁশগ্রামে দাফন করা হয়েছিল।
এদিকে রোববার দুপুরে তদন্ত কমিটিতে দু'জন প্রতিনিধি দিয়েছে খুলনা জেলা প্রশাসন ও মেট্রোপলিটন পুলিশ। ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী আনিছুর রহমান ভূঁইয়া জানান, ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি তদন্ত কাজ শুরু করেছে। বিকেলে কমিটির সদস্যরা বৈঠক করেন। ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
কুয়েট শিক্ষক সমিতির শোকসভা :গতকাল সকালে কুয়েট শিক্ষক সমিতির উদ্যোগে শিক্ষক ক্লাবে শোকসভার আয়োজন করা হয়। সভায় বক্তারা বলেন, ড. সেলিমের মৃত্যুর জন্য দায়ীদের স্থায়ীভাবে বহিস্কার না করা পর্যন্ত ক্লাসে ফিরবেন না তারা। সভায় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. প্রতীক চন্দ্র বিশ্বাস, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক তামান্না কামালসহ অন্য শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন। ড. সেলিম হোসেনের স্ত্রী সাবিনা খাতুন রিক্তা শোকসভায় ভিডিও কলের মাধম্যে সংযুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন। এ সময় তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার স্বামী কোনো রাজনীতি করতেন না। তিনি কেমন মানুষ ছিলেন তা আপনারাই ভালো জানেন। এখন আমি সাড়ে ছয় বছরের একমাত্র মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস অনিকাকে নিয়ে কোথায় যাব?
তিনি তার স্বামী মারা যাওয়ার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য কুয়েট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, বর্তমানে তাকে নানাভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তাই তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে তার একমাত্র মেয়ের ভবিষ্যতের জন্য তার যোগ্যতা অনুয়ায়ী তাকে কুয়েটে নিয়োগ দেওয়ার অনুরোধ জানান।
কুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজান তার মনোনীত ছাত্রকে সম্প্রতি লালন শাহ হলের ডাইনিং ম্যানেজার নিযুক্ত করার জন্য হলের প্রভোস্ট ড. সেলিমকে চাপ দেন। গত ৩০ নভেম্বর সেজান ৪০-৪২ নেতাকর্মী নিয়ে আবারও ড. সেলিমকে চাপ দেন এবং তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। এই চাপ সহ্য করতে না পেরে বাসায় গিয়ে হার্ট অ্যাটাকে ড. সেলিমের মৃত্যু হয়।