জন্ম থেকেই নেই দুই হাতের আঙুল। কব্জি দিয়েই চলছে শিক্ষা জীবনের সিঁড়ি বেয়ে উপরে ওঠা। জীবনের সব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়েছে কব্জির জোরে। কব্জিতে কলম ধরে আসতে হয়েছে এইচএসসির বারান্দায়। বসতে হচ্ছে পরীক্ষা কেন্দ্রে।
রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী পৌরসভার গোচর গ্রামের আকছেদ আলীর ছেলে মেহেদী হাসান রকি। আজ মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) আড়ানী আলহাজ্ব এরশাদ আলী ডিগ্রি মহিলা কলেজ কেন্দ্রের ৩০২ নম্বর কক্ষের এইচএসসি বাংলা দ্বিতীয়পত্র বিষয়ে পরীক্ষা দেয়।
রকি প্রতিবন্ধী হয়েও থেমে থাকেনি। সে শিক্ষাগ্রহণ করে প্রসাশনিক কর্মকর্তা হতে চায়। মেহেদী হাসান রকি জন্মগত প্রতিবন্ধী। কিন্তু তার বাবা-মায়ের প্রচেষ্টায় প্রতিবন্ধী হয়েও সে সকল কাজে সফলভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। রকির দু’টি হাত থাকলেও সাধারণ মানুষের চেয়ে অনেকাংশে ছোট এবং আঙুলবিহীন। তার আঙুলবিহীন ছোট হাত দিয়ে সব ধরনের কাজ করতে সক্ষম।
রকি আড়ানী মনোমোহীনি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে এসএসসি পাস করে। পরে আড়ানী ডিগ্রি কলেজে মানবিক বিভাগে ভর্তি হয়। শুধু তাই নয়, সে দ্বিতীয় শ্রেণি হতে একাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ভালো রেজাল্ট করে আসছে। রকি পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে জিপিএ-৫ পেয়েছিল।
আড়ানী ডিগ্রী কলেজের উপাধ্যক্ষ শেখ সামসুদ্দিন দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, রকি প্রতিবন্ধী হলেও তার মেধা অন্য ছাত্র-ছাত্রীদের চেয়ে অনেক বেশি। তার হাতের লেখাও ভালো। রকি লেখাপড়ার পাশাপাশি সব ধরনের খেলাধুলা, বাই-সাইকেল চালানো ছাড়াও অন্যান্য কাজ নিজে করতে পারে।
এইচএসসি পরীক্ষার্থী মেহেদী হাসান রকি দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, আমি অতি দরিদ্র পরিবারের ছেলে। তাই আমি চাই লেখাপড়া শিখে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হয়ে বাবা-মার দরিদ্র সংসারকে স্বনির্ভর করে গড়ে তুলব। আমি সকলের কাছে দোয়া কামনা করছি।
রকির বাবা আকছেদ আলী দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, আমার চার সদস্যের পরিবারে রকি বড় ছেলে। আমার দুই বিঘা জমি আছে। এই জমিতে কাজ করে যা আয় হয় তা দিয়ে কোনো রকম সংসার চলে। ছেলের লেখা-পড়ার খরচ চালাতে কষ্ট হয়।
রকির মা ছবিলা বেগম বলেন, আমার আরেকটি ছেলে রয়েছে। আমরা কোনো রকম দিন পার করছি।
আড়ানী আলহাজ্ব এরশাদ আলী ডিগ্রী মহিলা কলেজ কেন্দ্রের কেন্দ্র সচিব অধ্যক্ষ শাহবাজ আলী দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, রকি প্রতিবন্ধী হওয়ায় তাকে ১৫ মিনিট সময় বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে।