একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে কমিউনিস্ট আন্দোলনে বিভাজনে তৎকালীন ধর্মভিত্তিক দলগুলো রাজনৈতিকভাবে সুযোগ পেয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমিরেটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী? তিনি বলেন, ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে আইয়ুবের নির্বাচনে কমিউনিস্টরা যখন বাঙালি জাতীয়তাবাদ থেকে সরে দাঁড়ানোর স্লোগান দিয়ে অংশ নিয়েছিল তা ছিল মারাত্মক ভুল। শুক্রবার বিকালে রাজধানীর শিশু একাডেমিতে নিজের ৮৮তম জন্মদিনের আয়োজনে ‘ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান’ শীর্ষক একক বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন?
অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ১১ দফা, ভাসানীর ন্যাপের ১৪ দফা বা ছয় দফার কথা যাই বলি, সব জাতীয়তাবাদের দিকে ধাবিত হয়েছে। তাতে কমিউনিস্ট আন্দোলনের কথাও ছিল? কিন্তু পরে কমিউনিস্টদের মধ্যে বিভাজন তৈরি হলো? তার সুযোগে মওদুদী, চৌধুরী মো. আলীরা ডেমোক্রেটিক অ্যাকশন কমিটি গঠন করে ৮ দফা উত্থাপন করলেন, যাতে অখণ্ড পাকিস্তানের কথা বলা হয়েছিল? তখন রুশপন্থি কমিউনিস্টরাও বললেন, পাকিস্তান বিভক্ত হয়ে গেলে শ্রেণিসংগ্রাম দুর্বল হয়ে যাবে? আর তখনই জামায়াতে ইসলামী কমিউনিস্টদের শত্রু ভাবা শুরু করেছে। তাদের ইশতেহারেও নাস্তিক কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের কথা ছিল? ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানের ঐতিহাসিক মুহূর্তে কমিউনিস্টদের বিভাজনকে বড় ব্যর্থতা বলে মনে করেন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী?
তিনি বলেন, ঊনসত্তরের তারা একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত তারা হারিয়েছে? তখন জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনে নিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল? সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ যে ১১ দফা দিয়েছিল, সেখানে সমাজতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদকে ধারণ করে আরও সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল? তখন কমিউনিস্টরা চীনপন্থি ও রুশপন্থি দুই ধারায় ভাগ হয়ে গেলেন, তারা একে অপরকে রাষ্ট্রবিরোধী শক্তি বলে মনে করা শুরু করলেন?
বিবর্তন সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সভাপতি এএসএম কামালউদ্দিনের সভাপতিত্বে এ আয়োজনে ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীকে ফুলেল শ্রদ্ধা জানায় ওয়ার্কার্স পার্টি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, সিপিবি, বাসদ, বাসদ (মার্কসবাদী), বাসদ (মাহবুব), গণসংহতি আন্দোলন, ছাত্র ফেডারেশন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগ, জাতীয় গণমুক্তি কাউন্সিল, বাংলাদেশ লেখক শিবির, এএলআরডি, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন।