গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং কমিটি বাতিলের পর ফরিদগঞ্জের গৃদকালিন্দিয়া হাজেরা হাসমত ডিগ্রি কলেজে ধরে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে চরম উত্তেজনা চলছে। উভয় গ্রম্নপের পাল্টাপাল্টি হামলা ও কর্মসূচির কারনে গৃদকালিন্দিয়া হাজেরা হাসমত ডিগ্রি কলেজে অনির্দিষ্ট কালের জন্য শিক্ষা কর্যিক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
অন্যদিকে, গলস্নাক আদর্শ ডিগ্রি কলেজে এডহক কমিটি গঠন নিয়ে এক পক্ষ কলেজের মূল ফটক ও শ্রেণিকক্ষে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। ফলে বছরের শেষ প্রান্তে এসে দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শতশত শিক্ষার্থীর শিক্ষা কার্যক্রম অনিশ্চয়তার মুখে। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশ কলেজ ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়ে কলেজের প্রধান ফটক ও ভবনের তালা গুলো খুলে দেয়।
জানা গেছে, চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও আওয়ামী লীগের মনোনীত সাবেক এমপি ড.মোহাম্মদ শামছুল হক ভূঁইয়ার সহধর্মিণী ডা. আনোয়ারা হককে ফরিদগঞ্জের গৃদকালিন্দিয়া হাজেরা হাসমত ডিগ্রি কলেজে এডহক কমিটির সভাপতি গোপনে মনোনীত করায় ও কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ এনে গত রোববার কলেজ ক্যাম্পাসে বিএনপির একটি অংশ মানববন্ধন করে। এসময় বিক্সুব্ধদের হাতে কলেজ শিক্ষক লাঞ্ছিত ও কলেজের সিসিটিভি ক্যামেরা যন্ত্রাংশসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাংচুর, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে বের করে দিয়ে তার কক্ষে তালা মেরে দেয়। এ ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা কলেজ গেটে তালা দিয়ে আন্দোলন করে। একই সময়ে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের একটি অংশ শ্রেণি শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত দাবিতে বিক্ষোভ করলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এ সময় তাদের মধ্যে কয়েক দফায় হাতাহাতি হয়। পরবর্তীতে পুলিশ ও সেনাবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে কলেজ কর্তৃপক্ষ পাঠদান অনিদিষ্টকালের জন্য বন্ধ রেখেছে।
অন্যদিকে, গত ৬ নভেম্বর স্থানীয় বিএনপি নেতা মাহবুব মোরশেদ কচিকে সভাপতি ও কলেজ অধ্যক্ষ হরিপদ দাসকে সদস্য সচিব করে তিন সদস্য বিশিষ্ট গলস্নাক আদর্শ ডিগ্রি কলেজে এডহক কমিটি ঘোষণা করেছে জাতীয় বিশ্ব বিদ্যালয়। এতে ক্ষুব্ধ হয় বিএনপির অপর একটি গ্রম্নপের নেতা ডাক্তার আবুল কালাম আজাদ ও তার অনুসারিরা। গত ১৭ নভেম্বর এডহক কমিটির সভাপতি মাহবুব মোরশেদ কচি সভা করার ঘোষণা দিলে আজাদের লোকজন কলেজ ক্যাম্পাসে অবস্থান নেয়। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে উপজেলা প্রশাসন কচিকে ইউএনও অফিসে আসতে বলে। কচি সেখানে গেলে আজাদের লোকজন তাকে ঢুকতে না দিয়ে তাকে তুলে নিতে চায়। সংবাদ পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী এসে তাকে উদ্ধার করে। পরে মাহবুব মোরশেদ কচি ফরিদগঞ্জ প্রেস ক্লাবে এসে ডাক্তার আজাদ গ্রম্নপ তাকে অপহরণের চেষ্টা দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করেন।
এদিকে বিএনপির দুই গ্রম্নপের পাল্টাপাল্টি কঠোর অবস্থান এবং তাদের মারমুখি পরিস্থিতিতে কলেজে শিক্ষকরা তাদের ও শিক্ষার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তা চিন্তা করে অনির্দিকালের জন্য শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করতে বাধ্য হয়। পাঠদান না করতে পাড়লে শিক্ষার্থীদের বড় ধরনের ক্ষতি হবে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই বিষয়টি দ্রম্নত শান্তিপূর্ণ সমাধানের দাবি জানান।
এ বিষয় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন জানান, বিষয়টি জেনেছি। এটি খবুই দুঃখজনক। এ ধরনের কলেজগুলোর কমিটি যেহেতু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় দেখে, আমি তাদের বলছি আপনারা কলেজের শিক্ষা কার্যক্রমে ব্যাঘাত সৃষ্টি না করে বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগাযোগ করেন। কোন অভিযোগ থাকলে আইনি সহযোগিতা নিতে পারেন। তবে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়ে আমরা অবশ্যই কঠোর অবস্থানে আছি।'