করোনাকালে অনলাইন শিক্ষাকার্যক্রমে গতি

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

গত শতাব্দীর শুরুতে ইউরোপ-আমেরিকায় যখন যক্ষ্মার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়, তখন শিশুদের নিরাপদ শিক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য খোলা মাঠে শিক্ষা দান করার পদ্ধতির আবির্ভাব হয়। শিক্ষকরা খোলা মাঠে ছাত্রদের বিজ্ঞান, ভূগোল, ইতিহাস প্রভৃতি বিষয়ে শিক্ষাদান করতেন। শুরুতে জার্মানি ও বেলজিয়ামে এ ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা শুরু হলেও পরবর্তীকালে তা ছড়িয়ে পড়ে ইউরোপের অন্যান্য দেশে। রোববার (২১ মার্চ) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।

নিবন্ধে আরও জানা যায়, এক শতাব্দী পর পুনরায় করোনা ভাইরাস নামক মহামারিতে বিশ্ব আবারও নিস্তব্ধ। অন্যান্য সামাজিক রাজনৈতিক আর্থিক ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও বন্ধ ঘোষণা করা হয়। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় অন্যান্য সব প্রতিষ্ঠান তাদের কার্যক্রম পুনরায় শুরু করলেও শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে তার ছোঁয়া লাগেনি এখনো। দেশের হাট-বাজার, উপা-সনালয়, রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ নির্বাচন ও অন্যান্য সামাজিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান চলছে তার স্বাভাবিক বেশেই। যেখানে করোনা বা সামাজিক দূরত্ব কিংবা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বালাই নেই বললেই চলে। কিন্তু গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পর্যায়ক্রমে এ বন্ধের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে পেতে প্রথম বর্ষপূতি পালিত হয়ে গেলেও সরকার এখনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার মতো পরিবেশ তৈরি করতে পারেনি।

শিক্ষা কার্যক্রমকে স্বাভাবিক রাখতে অনলাইনে পাঠদান শুরু করেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। তবে তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক ক্লাসে শিক্ষার মান কতটুকু বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে এবং নানাবিধ কারণে এর সফলতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। কেননা অনলাইন ক্লাসের প্রধান শর্তই হলো নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগ, যা থেকে অনেক শিক্ষার্থীই বঞ্চিত হচ্ছে। সম্প্রতি প্রকাশিত এক রিপোর্টে বিশ্বের ১৪০টি দেশের ইন্টারনেট গতি বিশ্লেষণ করে দেখা যায় বাংলাদেশ শেষের দিক থেকে প্রথমে অবস্থান করছে।

অনলাইন ক্লাস কেবল একটি অন্তর্বর্তীমূলক ব্যবস্থা। অনলাইন ক্লাস কখনো সরাসরি ক্লাসের বিকল্প হতে পারে না। কেননা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কখনোই শুধু পুঁথিগত বিদ্যা অর্জনের একমাত্র উদ্দেশ্য নিয়ে নিজের পথ চলে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকেই শিশুর মূল ভিত্তি তৈরি হয়। শিশু তার সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধের বিকাশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকেই লাভ করে। এছাড়াও পারষ্পরিক মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে আচার-আচরণ, সংস্কৃতিবোধ, ভ্রাতৃত্ববোধ, সহানুভূতি, সহনশীলতা ইত্যাদি মানবিক গুণাবলী বিকাশের অন্যতম স্থান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। যার ফলে দীর্ঘ সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ছাত্র-ছাত্রীদের এ ধরনের মানবিক গুণাবলী অর্জন ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া দীর্ঘ সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে দূরে থাকায় শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যও ঝুঁকির মুখে পড়ছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছে।

বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে অনলাইন কার্যক্রমের মাধ্যমে সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করাকে অনেকটা দুরূহ ব্যাপার বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। যেখানে শতভাগ মানুষকে এখনো শিক্ষা কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত করা যায়নি সেখানে অনলাইনের মাধ্যমে তা নিশ্চিত করা অসম্ভব।

দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে তাদের ক্লাস ও পরীক্ষা অনলাইনে মাধ্যমেই সম্পন্ন করেছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ঢের পিছিয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা বুয়েটের মতো দেশসেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনলাইন ক্লাস চলমান রাখলেও পরীক্ষার ব্যাপারে যথেষ্ট অনাগ্রহী, যা তাদেরকে কিছুটা হলেও অন্যদের চেয়ে পিছিয়ে দিচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শেষ বর্ষের শিক্ষার্থীরা। পরীক্ষা না দিতে পারায় তারা পিছিয়ে পড়ছে চাকরির বাজার থেকেও; যা তাদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি করছে এবং আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

তবে এ বিষয়ে অস্বীকার করার কোনো অবকাশ নেই যে, অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম আধুনিক বিশ্বের একটি উন্নত শিক্ষাপ্রক্রিয়া, যার সঠিক ও কার্যকর ব্যবহার জাতির জন্য হতে পারে খুবই ফলপ্রসূ। বিশ্বের নামকরা সব বিশ্ববিদ্যালয় মহামারির এই ক্রান্তিলগ্নে শিক্ষার প্রসারের জন্য তাদের কোর্সসমূহ অনলাইনে উন্মুক্ত করে দিচ্ছে। যা শিক্ষার ক্ষেত্রে নতুন দ্বার উন্মোচিত করছে। সুতরাং বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশে তথ্যপ্রযুক্তির ভাবনাকে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে ছড়িয়ে দিয়ে এবং এর প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উঠে তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিক্ষার প্রসারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করা উচিত।

লেখক : সাখাওয়াত সাব্বির, শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা - dainik shiksha দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার চাকরির বয়স নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর চিঠির পর সমাবেশের ডাক দিলো ৩৫ প্রত্যাশীরা - dainik shiksha চাকরির বয়স নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর চিঠির পর সমাবেশের ডাক দিলো ৩৫ প্রত্যাশীরা স্কুলে গ্রীষ্মের ছুটি কি এপ্রিলে এগিয়ে আনা দরকার? - dainik shiksha স্কুলে গ্রীষ্মের ছুটি কি এপ্রিলে এগিয়ে আনা দরকার? কলেজের শিক্ষকদের ডিজিটাল বদলির আবেদন শুরু রোববার - dainik shiksha কলেজের শিক্ষকদের ডিজিটাল বদলির আবেদন শুরু রোববার বুটেক্সের প্রথম সমাবর্তন ৭ সেপ্টেম্বর - dainik shiksha বুটেক্সের প্রথম সমাবর্তন ৭ সেপ্টেম্বর শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি: শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি: শিক্ষা মন্ত্রণালয় দুর্যোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটিতে বিশেষ কমিটি গঠনে নীতিমালা হবে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha দুর্যোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটিতে বিশেষ কমিটি গঠনে নীতিমালা হবে: শিক্ষামন্ত্রী দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0025529861450195