কোচিংয়ে মডেল টেস্ট : প্রশাসন দেখে পালালেন সরকারি স্কুলের শিক্ষক

আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি |

সরকারী নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই কোচিং চালানোর অভিযোগ উঠেছে বরগুনার আমতলী উপজেলার এ কে হাই সংলগ্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহাকরী শিক্ষক মো. মাইনুল ইসলাম। সোমবার (১৯ অক্টোবর) ছিল তার কোচিং সেন্টারের ইংরেজী বিষয়ের মডেল টেস্ট পরীক্ষা। এমন খবরে কোচিংটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে উপস্থিত হন প্রশাসনে কর্মকর্তারা। তবে, কোচিংয়ে প্রশাসনের উপস্থিতি টের পেয়ে শিক্ষক মাইনুল সন্ধ্যায় পরীক্ষা বন্ধ করে পালিয়ে যান। এ ঘটনা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন সচেতন নাগরিকরা।

সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে কোচিং করাচ্ছেন এ কে হাই সংলগ্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহাকরী শিক্ষক মো. মাইনুল ইসলাম ।  ছবি :আমতলী প্রতিনিধি

জানাগেছে, প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস থেকে শিক্ষার্থীদের সুরক্ষিত রাখতে গত ১৭ মার্চ  সারাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। ওই সময় থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। কিন্তু স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকলেও আমতলী এ কে হাই সংলগ্ন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মাইনুল ইসলাম কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করেনি। সরকারী নির্দেশনা উপেক্ষা করে গত এপ্রিল মাস থেকে স্কুল স্ংলগ্ন পল্লবী আবাসিক এলাকায় ফজলুর রহমানের ঘর ভাড়া নিয়ে কোচিং চালিয়ে আসছেন তিনি। 

সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে কোচিং করাচ্ছেন এ কে হাই সংলগ্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহাকরী শিক্ষক মো. মাইনুল ইসলাম ।  ছবি :আমতলী প্রতিনিধি

অভিযোগ রয়েছে করোনা ভাইরাসে স্কুল বন্ধের সুযোগ নিয়ে শিক্ষক মাইনুল প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে মাসে দুই হাজার পাচ’শ টাকা কোচিং ফি আদায় করছেন। দুই সিফটে ভাগ করে তার কোচিং সেন্টারে শতাধিক ছাত্র-ছাত্রীকে পাঠদান করাচ্ছেন তিনি। প্রত্যেক সিফটে ৫০ জন করে পঞ্চম,চতুর্থ ও তৃর্তীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী রয়েছে। তার কোচিং সেন্টারে শিক্ষার্থীদের বেঞ্চে বসতে স্বাস্থ্যবিধির বালাই ও সামাজিক দুরত্ব ছিল না।

স্থানীয় অভিভাবকরা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, শুরুতেই তার এ কোচিং বাণিজ্যের বিষয়টি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে জাননো হয়। কিন্তু উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. মজিবুর রহমান কোন ব্যবস্থা নেননি। উল্টো তিনি তাকে উৎসাহিত করেছেন এমন অভিযোগ অভিভাবকদের। সরকারী নির্দেশনা উপেক্ষা করে গত সাত মাসে তিনি অন্তত পনের লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তিনি কোচিং সেন্টারে শুধু পাঠদান করাননি, প্রতি দুই মাস অন্তর অন্তর কোচিং ফি আদায়ের জন্য একটি কক্ষে গাদা-গাদি করে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নিয়েছেন। ওই পরীক্ষার ধারাবাহিকতায় গত সোমবার শিক্ষক মাইনুল পুনরায় পরীক্ষা শুরু করেন। 

জানা গেছে, সোমবার ছিল ইংরেজী পরীক্ষা। বিকেলের সিফটের পরীক্ষা বিকেল চারটায় শুরু করেন। ওইদিনই তার কোচিং সেন্টার পরিচালনার বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আসে। সোমবার পরীক্ষার সময়ে প্রশাসন তার কোচিং সেন্টারে যান। প্রশাসনের উপস্থিতি টের পেয়ে কোচিং সেন্টার পরিচালক সরকারি শিক্ষক মো. মাইনুল ইসলাম পরীক্ষা বন্ধ করে পালিয়ে যান।
 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন অভিভাবক দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে ম্যানেজ করে এ কে হাই সংলগ্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. মাইনুল ইসলাম স্কুল বন্ধের পরপরই কোচিং বাণিজ্য শুরু করেন। তিনি গত সাত মাস ধরে কোচিং চালিয়ে আসছেন। প্রতি দুই মাস অন্তর অন্তর টাকা আদায়ের জন্য মডেল টেস্ট পরীক্ষা নিয়েছেন। এতে ছিল না কোন সামাজিক দুরত্ব। তদন্ত সাপেক্ষে এ ঘটনার শাস্তি দাবি করছি।
  
সোমবার সন্ধ্যায় সরেজমিনে গিয়ে দেখাগেছে, একটি ছোট কক্ষে গাদা-গাদি করে ৪৭ জন শিক্ষার্থীর পরীক্ষা নিচ্ছেন।  প্রশাসনের লোকজনের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যায় শিক্ষক। পরে অভিভাবকরা তাদের সন্তানকে নিয়ে যান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কোচিং সেন্টারের পঞ্চম ও চতুর্থ শ্রেণির কয়েকজন শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে স্কুল বন্ধ থাকায় ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া বাসায় রেখেই চালিয়েছিলাম কিন্তু মাইনুল স্যার বাসায় গিয়ে ছেলে মেয়েদের নিয়ে আসেন। আমরা ছেলে মেয়ে কোচিংয়ে দিতে চাইনি কিন্তু স্যারের কারণে পারিনি।

এ বিষয়ে কোচিং সেন্টার পরিচালক ও এ কে হাই সংলগ্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. মাইনুল ইসলাম অভিযোগ স্বীকার করে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, অভিভাবকের অনুরোধেই অল্প কয়েকজন শিক্ষার্থীর ক্লাস নিয়েছি। পরীক্ষা শেষ করেই কোচিং বন্ধ করে দেব।

আমতলী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ মজিবুর রহমান অবৈধভাবে কোচিং পরিচালনার সাথে তার সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার করে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, শিক্ষক মাইনুলের কোচিং বাণিজ্যের বিষয়টি আমার জানা নেই। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বরগুনা জেলা শিক্ষা অফিসার এম এম মিজানুর রহমান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে দ্রুত কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হবে।

আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আসাদুজ্জামান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, কোচিং বাণিজ্য সম্পূর্ণ বেআইনি। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
স্কুল-মাদরাসা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ হাইকোর্টের - dainik shiksha স্কুল-মাদরাসা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ হাইকোর্টের ঢাকাসহ ১৩ জেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কাল বন্ধ - dainik shiksha ঢাকাসহ ১৩ জেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কাল বন্ধ প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের মৌখিক পরীক্ষা শুরু ৯ মে - dainik shiksha প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের মৌখিক পরীক্ষা শুরু ৯ মে বেসরকারি শিক্ষকদের বদলি নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশ হাইকোর্টের - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষকদের বদলি নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশ হাইকোর্টের প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নতুন নির্দেশনা টেম্পু চাপায় কলেজছাত্রী নিহত - dainik shiksha টেম্পু চাপায় কলেজছাত্রী নিহত কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0027480125427246