করোনাভাইরাস: যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে মাস্ক ডাকাতির অভিযোগ

দৈনিক শিক্ষা ডেস্ক |

জার্মানিতে যাচ্ছিল এমন দুই লাখ মাস্ক যুক্তরাষ্ট্র মাঝপথে নিজেদের ব্যবহারের জন্য নিয়ে নেয়ার পর তাদের বিরুদ্ধে ‘দস্যুতার‌’ অভিযোগ উঠেছে। রোববার (৫ এপ্রিল) বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ  তথ্যা জানা যায়।

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, বার্লিনের স্থানীয় সরকার জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি এসব মাস্ক জার্মানিতে পাঠানো হচ্ছিল। কিন্তু ব্যাংককে শিপমেন্টটি জব্দ করে জার্মানির পরিবর্তে যুক্তরাষ্ট্র পাঠিয়ে দেয়া হয়।

বার্লিনের পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের জন্য এই ‌‘এফএফপি-২’ মাস্ক কেনার আদেশ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এগুলো আর বার্লিনে পৌঁছেনি।

বার্লিনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আন্ড্রিয়াস গিসেল জানিয়েছেন, সম্ভবন এখন এসব মাস্ক যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হচ্ছে। মার্কিন কোম্পানি থ্রিএম এসব মাস্ক বানায়।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নির্দেশ জারি করেছেন যে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি মেডিক্যাল প্রোডাক্ট অন্য দেশে রফতানি করা যাবে না। কোরিয়ান যুদ্ধের সময়কার একটি আইন বলে তিনি এই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন।

শুক্রবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানান, মার্কিন কোম্পানিগুলো যাতে দেশের চাহিদা মেটাতে চিকিৎসা সরঞ্জামের সরবরাহ বাড়ায় সেজন্যে তিনি ‌‘প্রতিরক্ষা উৎপাদন আইন‌’ ব্যবহার করে তাদের কাছে সেই দাবি জানাচ্ছেন।

হোয়াইট হাউসে করোনাভাইরাস টাস্কফোর্সের ব্রিফিং এ তিনি বলেন,“স্থানীয় চাহিদা মেটাতে আমাদের এখনই এসব সামগ্রী দরকার। আমাদের অবশ্যই এগুলো পেতে হবে।”

তিনি জানান মার্কিন কর্তৃপক্ষ প্রায় দুই লাখ এন-নাইটি-ফাইভ রেসপিরেটর মাস্ক, এক লাখ ৩০ হাজার সার্জিক্যাল মাস্ক এবং ছয় লাখ গ্লোভস জব্দ করে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে। তবে এগুলো কোন দেশে জব্দ করা হয়, সেটা তিনি বলেননি।

বার্লিনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আন্ড্রিয়াস গিসেল তাদের মাস্ক যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়ে দেয়ার বিষয়টিকে ‌‘আধুনিক কালের দস্যুতা’ বলে মন্তব্য করেছেন। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের নিয়ম-কানুন মেনে চলার জন্য তিনি ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান।

এই মন্ত্রী বলেন, “আটলান্টিকের অপর-পারের বন্ধুর সঙ্গে এটা কেমন আচরণ? বিশ্বজুড়ে সংকটের সময়েও এরকম বন্য আচরণ করা উচিৎ নয়‌।”

মাস্কের জন্য মরিয়া সবাই

যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এরকম অভিযোগ মিস্টার গিসেল একা করছেন না। ইউরোপের অন্যান্য দেশের কর্মকর্তারাও যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে চিকিৎসা সরঞ্জাম কেনা এবং চালান আটকে দেয়ার অভিযোগ তুলছেন।

ফ্রান্সে আঞ্চলিক সরকারের নেতারা বলছেন, তারা মেডিক্যাল সরঞ্জাম কিনতে গিয়ে হিমসিম খাচ্ছেন, কারণ অনেক ক্ষেত্রেই যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা বেশি মূল্য দিয়ে এগুলো কিনে নিয়ে যাচ্ছে।

ফ্রান্সের একজন আঞ্চলিক নেতা মাস্ক কেনার জন্য এখন রীতিমত যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে তাকে ‘ট্রেজার হান্ট’ বা ‘গুপ্তধন’ খুঁজে পাওয়ার প্রতিযোগিতার সঙ্গে তুলনা করেছেন।

ইল-দ্য-ফ্রান্স অঞ্চলের প্রেসিডেন্ট ভ্যালেরি পেক্রিস বলেন, “আমরা কেনার জন্য কিছু মাস্ক পেয়েছিলাম। কিন্তু আমেরিকানরা- আমি মার্কিন সরকারের কথা বলছি না, বলছি আমেরিকানদের কথা। তারা আমাদের চেয়ে বেশি দাম দেয়ার কথা বলে সেগুলো নিয়ে গেল। ওরা আমাদের চেয়ে তিন গুন বেশি দাম দিয়েছে এবং তাৎক্ষণিকভাবেই দাম পরিশোধ করেছে।”

করোনাভাইরাসের বিশ্ব-মহামারী যত খারাপ হচ্ছে, অতি প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সামগ্রীর চাহিদা তত বাড়ছে। বিশেষ করে মাস্ক এবং রেসপিরেটরের চাহিদা।

সাধারণ মানুষের ফেস মাস্ক পরা উচিৎ কীনা তা নিয়ে অনেক দেশেই এখন বিতর্ক চলছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ বিষয়ে তাদের নির্দেশনায় পরিবর্তন আনতে পারে বলে জানিয়েছিল এ সপ্তাহের শুরুতে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এখনকার পরামর্শ হচ্ছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য গণহারে সবার মাস্ক পরার দরকার নেই। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রসহ কিছু দেশ এ বিষয়ে ভিন্ন অবস্থান নিয়েছে।

গত শুক্রবার মিস্টার ট্রাম্প ঘোষণা করেন যে ‌‘সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল’ (সিডিসি) এখন সুপারিশ করছে যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ মানুষ যেন ‘নন মেডিক্যাল’ ফেস মাস্ক ব্যবহার করেন। মূলত কাপড়ের তৈরি এই ফেস মাস্ক করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সহায়ক হবে বলে মনে করছে সিডিসি।

বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা যুক্তরাষ্ট্রেই সবচেয়ে বেশি। সেখানে এ পর্যন্ত ২ লাখ ৭৩ হাজার ৮৮০ জন মানুষ করোনাভাইরাস সংক্রমণের শিকার হয়েছে বলে পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা এখন দশ লাখের বেশি। সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী এতে মারা গেছে প্রায় ৬০ হাজার মানুষ।

রফতানি নিষেধাজ্ঞা

যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি থ্রীএম জানিয়েছে তাদের তৈরি এন-নাইনটি-ফাইভ রেসপিরেটর মাস্ক যেন কানাডা বা লাতিন আমেরিকার কোন দেশে রফতানি করা না হয়, সেই মর্মে নির্দেশ জারি করেছে ট্রাম্প প্রশাসন।

থ্রীএম বলেছে, ট্রাম্প প্রশাসনের এই নির্দেশের অনেক মানবিক অভিঘাত তৈরি হতে পারে। অন্যান্য দেশ এখন এর পাল্টা ব্যবস্থা নিতে পারে।

থ্রীএম জানায় তারা প্রতিমাসে দশ কোটি এন-নাইনটি-ফাইভ মাস্ক উৎপাদন করতে পারে। এর এক তৃতীয়াংশ তৈরি হয় যুক্তরাষ্ট্রে আর বাকী দুই তৃতীয়াংশ অন্যান্য দেশে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, তিনি ‘প্রতিরক্ষা উৎপাদন আইন’ ব্যবহার করেছেন “থ্রীএম‌” কে একটা বড় ধাক্কা দেয়ার জন্য। এই আইনটি তৈরি করা হয় ১৯৫০ এর দশকে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট এই আইনের বলে মার্কিন কোন কোম্পানিকে দেশের প্রতিরক্ষার জন্য জিনিস উৎপাদনে বাধ্য করতে পারেন।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই নীতির সমালোচনা করেছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। তিনি বলেছেন, “বাণিজ্যে বাধা দেয়া বা বাণিজ্য কমিয়ে দেয়াটা হবে ভুল।”


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0033960342407227