করোনার প্রভাবে চরম অর্থসংকটে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে গত ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ফলে মার্চ মাসের টিউশন ফি নিতে পারেনি বেশির ভাগ স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়। এতে সরকারি ও এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো তেমন সমস্যায় না পড়লেও নিজস্ব আয়ে চলা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো চরম অর্থসংকটে পড়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠানই তাদের ফান্ড থেকে মার্চ মাসের বেতন দিলেও এপ্রিল ও মে মাসের বেতন এবং ঈদ-উৎসব ভাতার সংস্থান কিভাবে ও কোথা থেকে হবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে। মঙ্গলবার (৫ মে) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায় । প্রতিবেদনটি লিখেছেন শরীফুল আলম সুমন।

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, ঢাকা শিক্ষা বোর্ড থেকে সম্প্রতি এক আদেশে টিউশন ফি আদায়ে চাপ প্রয়োগ না করতে প্রতিষ্ঠানপ্রধানদের অনুরোধ জানানো হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দিলে বা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এলে বকেয়াসহ মাসিক বেতন আদায়ের কথা বলা হয়েছে। এতে উভয়সংকটে পড়েছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ। কারণ তারা বেতন চাইলে তা অমানবিকতার পর্যায়ে পড়ে। বেশির ভাগ অভিভাবকও এ মুহৃর্তে বেতন দিতে রাজি নন। আবার প্রতিষ্ঠানগুলো বেতন আদায় না করলে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন দিতে পারছে না। ফলে অনেক প্রতিষ্ঠানই মানবিক আবেদনের মাধ্যমে এসএমএস পাঠিয়ে বেতন চাচ্ছে। অনেকে আবার করণীয় ঠিক করতে পারছে না।

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সমস্যা নেই। তবে দেশে বর্তমানে অর্ধলাখ কিন্ডারগার্টেন স্কুল রয়েছে। সেগুলোর বেশির ভাগেরই আয়-রোজগার খুব বেশি নয়। শিক্ষকদের বেতনও যৎসামান্য। মার্চ মাস থেকেই এসব স্কুলের শিক্ষকদের বেতন বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া ৩০ হাজারের মতো স্কুল-কলেজ সরকারি ও এমপিওভুক্ত। তারা সবাই সরকার থেকে বেতন পায়। কিন্তু ছয় হাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও তিন হাজার কলেজ সম্পূর্ণই নিজস্ব আয়ে চলে। তারা চরম আর্থিক সংকটে রয়েছে।

কারিগরি শিক্ষাব্যবস্থার বেশির ভাগই বেসরকারি। সরকারি ও এমপিওভুক্ত বাদে এ খাতে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় আট হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে, যারা সম্পূর্ণই নিজস্ব আয়ে চলে। তারা টিউশন ফি নিতে না পারায় বেশ সংকটে পড়েছে। এ ছাড়া সব ধরনের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের অন্যতম আয় প্রাইভেট-টিউশনি। সেটাও দুই মাস ধরে বন্ধ। ফলে বেসরকারি শিক্ষকরা বড় সংকটে রয়েছেন।

দেশের দেড় শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ১০৫টিই বেসরকারি। বড় পাঁচ-সাতটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় অঙ্কের ফান্ড রয়েছে। কয়েক মাস বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও তাদের চলতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু বাকিগুলো চলে আদায়কৃত টিউশন ফি দিয়েই। টিউশন ফি আদায় বন্ধ থাকায় তারাও বেশ সমস্যায় রয়েছে।

একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি  বলেন, ‘অনলাইনে ক্লাস-পরীক্ষা নিলেও মাঝারি ও ছোট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা টিউশন ফি পরিশোধ করবে কি না, তা নিয়ে আমরা সন্দিহান। আমাদের অনুরোধ থাকবে, যাদের সক্ষমতা আছে তারা যেন টিউশন ফি পরিশোধ করে। এখন টিউশন ফি না পেলে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা চালিয়ে যাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়বে।

রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজটি আংশিক এমপিওভুক্ত। এখানে ৬৫০ জন শিক্ষক রয়েছেন, যাঁদের মধ্যে মাত্র ৫২ জন এমপিওভুক্ত। প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব আয়েই বাকি ৬০০ শিক্ষকের বেতন দিতে হয়। প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ প্রফেসর ফওজিয়া  বলেন, ‘আমরা শুধু জানুয়ারি মাসের বেতন নিয়েছি। যখন ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসের বেতন নেব, তখনই করোনার কারণে স্কুল বন্ধ হয়ে গেল। এখন প্রতিষ্ঠানের আগের ফান্ডে বেতন-ভাতা অব্যাহত রাখা হচ্ছে। কিন্তু ছুটি দীর্ঘায়িত হলে তা সম্ভব হবে না। আর একবারে অনেক মাসের বেতন জমে গেলে অভিভাবকদের ওপরও চাপ পড়বে। তাই গভর্নিং বডির সভায় অনুমোদন সাপেক্ষে এক এক মাস করে বেতন নেওয়া যায় কি না, সেটা আমরা ভাবছি।’

মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ড. শাহান আরা বেগম বলেন, ‘আমরা মার্চ মাস পর্যন্ত বেতন নিয়েছি। আমাদের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দিতে হলে টিউশন ফি নিতেই হবে। অন্যথায় বেতন বন্ধ রাখতে হবে।’

সম্প্রতি রাজধানীর মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ থেকে অভিভাবকদের কাছে পাঠানো এক এসএমএসে বলা হয়েছে, ‘করোনা সংক্রমণের কারণে স্কুল ছুটি হয়ে যাওয়ায় যারা মার্চ মাসের বেতন পরিশোধ করতে পারেননি, তাঁরা এবং যাঁদের সামর্থ্য আছে তাঁরা এপ্রিলের বেতন পরিশোধ করলে শিক্ষক-কর্মচারীদের মানবিকভাবে বেঁচে থাকা সম্ভব হবে।’ অভিভাবকদের ঘরে বসেই বিকাশের মাধ্যমে বেতন পরিশোধের অনুরোধ জানানো হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মালিকরা প্রণোদনার দাবি করেছেন। বেসরকারি কারিগরি শিক্ষা খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন টেকনিক্যাল এডুকেশন কনসোর্টিয়াম অব বাংলাদেশ (টেকবিডি) ইতিমধ্যে ৩৯০ কোটি টাকার প্রণোদনা চেয়ে প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছে। কিন্ডারগার্টেন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ঐক্যপরিষদের নেতারাও প্রণোদনা চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছেন। ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলোও প্রণোদনার দাবি তুলেছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0024499893188477