করোনার প্রভাবে শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে ফেরা নিয়ে অনিশ্চয়তা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

আয়ান ফারুক। মিরপুরের একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী। ছুটির দিন ছাড়া সপ্তাহে ছয় দিনই সকাল ৮টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত অনলাইনে ক্লাস করছে। কিন্তু ক্লাস করতে আগের মতো আর আগ্রহ পাচ্ছে না এই খুদে শিক্ষার্থী।  আয়ান বলে, ‘আমি এখনো নতুন স্কুলে গিয়ে ক্লাস করিনি। আমার কোনো বন্ধুও তৈরি হয়নি। এভাবে ক্লাস করতে আর ভালো লাগে না। আমি স্কুলড্রেস পরে ক্লাসে যেতে চাই। এভাবে ঘরে বসে ল্যাপটপে ক্লাস আর ভালো লাগে না।’ মঙ্গলবার (১৫ জুন) বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন জিন্নাতুন নূর

প্রতিবেদনে আরও জানা যায় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির (বিইউবিটি) বিবিএ তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সামির ইয়াছার। করোনা শুরুর পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় এই শিক্ষার্থী তার চার বছরের শিক্ষাজীবনের দ্বিতীয় বর্ষের পুরো সময়ই অনলাইনে ক্লাস করে কাটিয়েছেন। তিনি জানান, সপ্তাহে চার-পাঁচ দিন অনলাইনে তাদের ক্লাস হচ্ছে। এমনকি পরীক্ষাগুলোও হচ্ছে অনলাইনে। অনলাইন ক্লাসে গড়ে মোট শিক্ষার্থীর অর্ধেক উপস্থিত থাকে। তবে সরাসরি ক্লাসে থেকে একজন শিক্ষার্থী কোনো বিষয় যতটা ভালোভাবে বুঝতে পারে, তা অনলাইনে পারে না। তিনি জানান, ক্লাস প্রেজেনটেশনও অনলাইনে দেওয়া সম্ভব নয়।

আরও পড়ুন : দৈনিক শিক্ষাডটকম পরিবারের প্রিন্ট পত্রিকা ‘দৈনিক আমাদের বার্তা’

আয়ান ও সামিরের মতো বিপাকে পড়েছে দেশের অন্য শিক্ষার্থীরাও। রেকর্ড সংখ্যক দিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অনিশ্চয়তায় সময় কাটছে প্রাথমিক থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের। শ্রেণিকক্ষে যেতে না পেরে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছে অনেকেই। মানসিক চাপ সইতে না এদের কেউ কেউ আত্মহত্যা করেছে। আশঙ্কাজনক যে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের পর গত ১৫ মাসে অন্তত ১৫১ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। এর মধ্যে ৭৩ জন স্কুলশিক্ষার্থী, ৪২ জন বিশ্ববিদ্যালয়-মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী, ২৭ জন কলেজশিক্ষার্থী ও ২৯ জন মাদরাসাশিক্ষার্থী। এদের বেশির ভাগের বয়স ১২ থেকে ২০ বছরের মধ্যে। গত বছর ১৮ মার্চ থেকে চলতি বছর ৪ জুন পর্যন্ত গণমাধ্যমে প্রকাশিত এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদনে এসব তথ্য পাওয়া যায়। মনোরোগ চিকিৎসক ও গবেষকরা বলছেন, করোনাকালে দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের কারণে শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত জীবনের ওপর মানসিক চাপ বাড়ছে। পড়াশোনা ও ক্যারিয়ার নিয়ে হতাশা, পরিবারের শাসন, কোনো কিছুর বায়না ধরে না পাওয়া, প্রেমঘটিত টানাপোড়েন, আর্থিক সংকট, বিষণœতা ও একাকিত্বসহ ছোট ছোট সমস্যায়ও অনেকে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। ফলে তারা তুচ্ছ ঘটনায়ও আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধাবোধ করছে না।

শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি উদ্বিগ্ন অভিভাবকরাও। এত দীর্ঘ সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে না যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের অনেকেই আগের মতো স্বাভাবিকভাবে ক্লাসে যেতে পারবে কি না তা নিয়ে মা-বাবারা দুশ্চিন্তায় আছেন। করোনা সংক্রমণের জন্য কোমলমতি অনেক শিক্ষার্থীকে স্কুলে ভর্তি করানোর বয়স হলেও অভিভাবকরা এখনো তাদের স্কুলে দেননি। আবার ক্লাস না থাকায় সময় কাটাতে শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ অনলাইনে বিভিন্ন অ্যাপস, যেমন ‘টিকটক’, ‘লাইকি’তে অশ্লীল ভিডিও তৈরি করছে। কেউ কেউ মাদকে আবার অনেকে অনলাইন ভিডিও গেমে আসক্ত হয়ে পড়েছে।

মিরপুরের এক বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীর অভিভাবক নাছিমা আক্তার বলেন, ‘দেড় বছর ধরে ছেলে ক্লাসে যায় না। সারা দিন বন্ধুদের সঙ্গে পাড়ায় আড্ডা দেয়। রাত করে বাসায় ফেরে। সারা রাত ফেসবুক আর ভিডিও গেম খেলে ভোরে ঘুমায়। দুপুরে ঘুম থেকে ওঠে। লেখাপড়ার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু আমার কাছ থেকে প্রতি সেমিস্টারের টাকা ঠিকই নিচ্ছে। কিছু শিখছে কি না জানি না। স্কুল খুললে ঠিকমতো ছেলে ক্লাসে যাবে তো? এটি ভেবেই এখন ভয় হচ্ছে!’

দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব ও ফেসবুক পেইজটি ফলো করুন

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, অনলাইনে ক্লাস, সামাজিক যোগাযোগ এবং বিনোদন সবই ইন্টারনেটভিত্তিক হয়ে পড়া শিশুর জন্য নেতিবাচক। কারণ এতে একটি শিশু বেশি সময় অনলাইনেই কাটাচ্ছে। ফলে শিশুর ওপর আলাদাভাবে মানসিক চাপ পড়ার আশঙ্কা আছে। এ জন্য শিশুর সামাজিক যোগাযোগ ও বিনোদন অনলাইনে না করে তা বিকল্প ব্যবস্থায় করা যায় কি না এটি ভাবতে হবে। বিশেষ করে শিশুকে নিয়ে পারিবারিকভাবে গল্প করা এবং পরিবারের সদস্যদের নিয়ে একত্রে মিলে কোনো কাজ করা যেতে পারে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর প্রায় ১৫ মাস ধরে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের অনেকেই এখন সরকারের কাছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বলা হলেও এই ছুটি আরও দীর্ঘায়িত হয়েছে। সর্বশেষ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, করোনাভাইরাসের সংক্রমণে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চলমান ছুটি ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এর আগের ঘোষণা অনুযায়ী ১২ জুন পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি ছিল।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ - dainik shiksha বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি - dainik shiksha যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি - dainik shiksha তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ - dainik shiksha সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই - dainik shiksha শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী - dainik shiksha বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0031940937042236