করোনার প্রভাবে শিক্ষায় বেশি ক্ষতি

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

কভিড মহামারীর সময় সবচেয়ে কম করোনা-আক্রান্ত হয়েছেন কৃষকরা । সারা বিশ্বের যে সকল কৃষক আক্রান্ত হয়েছিলেন তাদের অধিকাংশের বয়স ছিল ৭০ বছরের ঊর্ধ্বে। এ পেশার যুবকরা সবচেয়ে কম আক্রান্ত হয়েছেন। বিশ্বের ৯৯ শতাংশ কৃষক ও খামারি নিরাপদ ছিলেন। এছাড়াও করোনার ফলে শিক্ষায় যে ক্ষতি হয়েছে তা পূরণ হতে দুই প্রজন্ম লাগবে। 

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এক সেমিনারে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিআইডিএস সম্মেলন কক্ষে সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি এক হাজার করোনা-আক্রান্ত কৃষক বা খামারির মধ্যে মারা গেছেন গড়ে সাতজন।

বিআইডিএসের সিনিয়র রিসার্স ফেলো ড. কাজী ইকবালের সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ড ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. আনানিশ চৌধুরী। তার উপস্থাপিত প্রবন্ধের নাম ‘নাডজড ইনটু লকডাউন? আ ডিফারেন্ট পারস্পেকটিভ অন দ্য গ্লোবাল রেসপন্স টু দ্য কভিড-১৯ প্যানডেমিক’।

গবেষণায় বলা হয়, কভিডে উন্নত দেশগুলোই বেশি সমস্যায় পড়ে। এসব দেশের যেকোনো মহামারী নিয়ন্ত্রণের জাতীয় পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু কারও পরিকল্পনাতেই ‘লকডাউন’ ছিল না।

ড. আনানিশ চৌধুরী বলেন, কভিডে লকডাউনে তেমন কারোর লাভ হয়নি। সুইজারল্যান্ড কোনো লকডাউন দেয়নি; তারাও মৃত্যু ঠেকিয়েছে। ব্রিটেনে যারা কভিডে মারা গেছেন তাদের অধিকাংশ ঘরে ছিলেন। সুইডেনে যারা মারা যান তাদেরও বেশিরভাগ ঘরে ছিলেন।

তার মতে, প্রথম দিকে স্বল্পমেয়াদে লকডাউন ঠিক ছিল। তখন বোঝা যাচ্ছিল না, কোথা থেকে কী হচ্ছে। কিন্তু যখন সবকিছু পরিষ্কার হলো তখন কেন বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ লকডাউন দিয়েছিল? এর ফলে সব কর্মকা- বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের যে মানসিক ও শিক্ষাগত ক্ষতি হয়েছে তা পূরণ হতে দুই প্রজন্ম লাগবে।

ড. আনানিশের গবেষণায় বলা হয়, লকডাউন যে জীবন রক্ষা করতে পারেনি তার প্রমাণ ইউরোপের ২৪টি দেশে কঠোর বা লঘু লকডাউন ছিল, কিন্তু মৃত্যু ঠেকানো যায়নি। মানুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ুও কমে গেছে। লকডাউনে অনেক অপারচুনিটি কস্ট (ব্যয়) হয়েছে। সেদিকে নজর দেওয়া হয়নি। নীতিনির্ধারকদের বোঝা দরকার ছিল যে, সম্পদ সীমিত। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি যে শুধু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বেড়েছে তা নয়। এর জন্য কভিডের সময় নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগও দায়ী।

টিকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দুই থেকে চার ডোজ টিকা দিয়েও অনেকে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। তাহলে টিকার পেছনে এত সম্পদ ব্যয় করার কী দরকার ছিল?

কভিড-১৯ মহামারী চলার সময় ক্যানসার, কিডনি জটিলতা, ডায়াবেটিসসহ নানা রোগে মানুষ মারা গেছে। এসব রোগের সঠিক চিকিৎসা ছিল না। এসব মৃত্যুর বিষয়ে গণমাধ্যম এবং লোকের মধ্যে খুব বেশি আলোচনা ছিল না। সবাই ব্যস্ত ছিল কভিডে মৃত্যুর হিসাব নিয়ে। ইংল্যান্ড ব্যাংকে কর্মরত অর্থনীতিবিদ ডেভিড মাইলসের উদাহরণ দিয়ে বলা হয়েছে, ৪ লাখ ৪০ হাজার মানুষের জীবন বাঁচাতে যদি জিডিপির ৯ শতাংশ ক্ষতি হয় তাহলে ইংল্যান্ডের ক্ষতি হবে ৬৮ বিলিয়ন পাউন্ড। ২০ হাজার মানুষের জীবন বাঁচাতে যদি জিডিপির ৯ শতাংশ ক্ষতি হয় তাহলেও ক্ষতি হবে ১৯৪ বিলিয়ন ডলার। যদি ২০ হাজার মানুষের জীবন বাঁচাতে জিডিপির ১৫ শতাংশ ক্ষতি হয় তাহলে নিট ক্ষতি হবে ৩২৪ বিলিয়ন পাউন্ড। সুতরাং ক্ষতির বিষয়গুলো বিবেচনায় নেওয়া দরকার ছিল।

ড. কাজী ইকবাল বলেন, কভিডের সময় দেশগুলো ভেবেছে তারা জনগণের জন্য কিছু একটা করছে। দৃশ্যমান কিছু, যাতে মানুষ বুঝতে পারে সরকার তাদের পাশে আছে। যদি নীতিনির্ধারণ পর্যায়ে তরুণরা থাকত তাহলে হয়তো এত লকডাউন হতো না।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
দেশকে ভিক্ষুকের জাতিতে পরিণত করতে এ সহিংসতা: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha দেশকে ভিক্ষুকের জাতিতে পরিণত করতে এ সহিংসতা: প্রধানমন্ত্রী দ্রুত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিতে হবে : আরেফিন সিদ্দিক - dainik shiksha দ্রুত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিতে হবে : আরেফিন সিদ্দিক এইচএসসির উত্তরপত্র জমা নিচ্ছে না বোর্ড - dainik shiksha এইচএসসির উত্তরপত্র জমা নিচ্ছে না বোর্ড কলেজ ভর্তি পরীক্ষায় এতো ফেল! - dainik shiksha কলেজ ভর্তি পরীক্ষায় এতো ফেল! বিকল্প পদ্ধতিতে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে: ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ - dainik shiksha বিকল্প পদ্ধতিতে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে: ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের ৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ - dainik shiksha ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের ৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0033161640167236