করোনার প্রভাব কাটিয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ৫ প্রস্তাবনা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

বিশ্বজুড়ে করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য সমস্যার পাশাপাশি বড় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে অর্থনৈতিক মন্দা। বিশ্বজুড়ে কর্মসংস্থান হারাচ্ছে মানুষ। বাংলাদেশেও একই প্রভাব নিয়ে চলছে আলোচনা পর্যালোচনা। এই মহামারী চলাকালীন ও তার পরবর্তী সময়ে দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য ৫ প্রস্তাবনা দিয়েছে করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ এ্যান্ড ইনফরমেশন। বলা হয়েছে, এসব প্রস্তাব বাস্তবায়নে এক বছরের মধ্যে এই সমস্যাকে কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব। বৃহস্পতিবার (২৫ জুন) জনকণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছে  বিভাষ বাড়ৈ । 

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, ‘বাংলাদেশ এ্যাট ওয়ার্ক: জব ক্রিয়েশন এ্যান্ড ইনক্লুসিভ গ্রোথ ইন দ্য এরা অফ কোভিড-১৯’ শিরোনামের গবেষণা প্রবন্ধে দাবি করা হয়েছে, এক বছরের মধ্যে এই সমস্যাকে কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব। সিআরআই এর জন্য যৌথভাবে গবেষণাটি করেছেন ইমরান আহমেদ ও সৈয়দ মফিজ কামাল। বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদনের পরিসংখ্যান অনুসারে করোনা পরিস্থিতির কারণে দেশে তিন কোটি ৮০ লাখ নতুন দরিদ্র তৈরি হবে। গ্রামাঞ্চলে এই নতুন দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সংখ্যা হবে দুই কোটি ৭০ লাখ এবং শহরাঞ্চলে এক কোটি ১০ লাখ।

বর্তমান দারিদ্র হারের সঙ্গে এই বিপুল নতুন দরিদ্র মিলে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার হতে পারে ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ। সিআরআই এর গবেষণায় বলা হয়েছে, কর্মসংস্থান হারানো মানুষের মধ্যে একটি বড় অংশ স্বাভাবিক চলাচল শুরু হলে দ্রুতই কর্মসংস্থান ফিরে পাবেন। যেমন কৃষির কর্মহীন মানুষরা আবার মৌসুম এলে কর্মব্যস্ত হয়ে পড়বেন, মানুষের চলাচল বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কাজ ফিরে পাবেন রিক্সা ও সিএনজি চালকসহ পরিবহন খাতের শ্রমিকরা। তবে ৬০ লাখ চাকরি দীর্ঘ মেয়াদের জন্য হারিয়ে যাবে। যা দেশের মোট শ্রমশক্তির ১০ শতাংশ।

কিন্তু এই ৬০ লাখ চাকরির পাশাপাশি আগামী এক বছরের মধ্যে আরও নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি সম্ভব বলে জানিয়েছে সিআরআইয়ের এই গবেষণা রিপোর্ট। সেখানে এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য ৫ প্রস্তাবনা দেয়া হয়। পাঁচ প্রস্তাব- ১. যেসব খাতে প্রচুর শ্রমিক আছে সেগুলোতে প্রণোদনা বাড়ানো যেতে পারে। এই খাতের মধ্যে আছে কৃষি খাত যেখানে মোট কর্মশক্তির ৪১ ভাগ রয়েছে, অথচ এখান থেকে মোট জিডিপির মাত্র ১৩ দশমিক ৭ ভাগ পাওয়া যায়। এ ছাড়াও রয়েছে তৈরি পোশাক, চিকিৎসাসামগ্রী উৎপাদন, খাবার প্রসেসিং, যানবাহন, নির্মাণ, খুচরা ব্যবসা, স্বাস্থ্য, নির্মাণ শিল্প ও ফার্মাসিউটিক্যালস।

করোনার কারণে তৈরি পোশাক খাতে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছে। কিন্তু গবেষকরা বলছেন, স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী তৈরির বিষয়ে কাজ করলে এই খাতটিও ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। কারণ মাস্ক, গ্লার্ভস, পিপিইর মতো সামগ্রীর চাহিদা দেশ ও বিদেশে রয়েছে।

দ্বিতীয় প্রস্তাবে সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর কাজ দ্রুত শুরু করার বিষয়েও গবেষণায় পরামর্শ দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, যেসব উন্নয়ন প্রকল্প শ্রমিক নির্ভর বেশি সেসব প্রকল্পকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করে কর্মসংস্থান তৈরি করা যায়। একই সঙ্গে ‘কাজের বিনিময়ে খাদ্য’ প্রকল্পকে এর যুক্ত করে গ্রামাঞ্চলে প্রচুর কর্মসংস্থান তৈরি করা সম্ভব। অবকাঠামো খাতে যে বরাদ্দ আছে তা না বাড়িয়েও এটা করা সম্ভব। এ খাতে দৃষ্টি দিতে হবে শ্রমনির্ভর কাজের ক্ষেত্রে।

তাতে বিপুল মানুষের কর্মসংস্থান হবে। এই ক্ষেত্রে সিটি কর্পোরেশনগুলো তাদের নিজ নিজ এলাকায় রাস্তা নির্মাণ থেকে শুরু করে সড়ক বাতি লাগানোর কাজের মতো বেশ কিছু উন্নয়নমূলক কার্যক্রম শুরু করতে পারে যেখানে শ্রমিক প্রয়োজন হবে।

তৃতীয় প্রস্তাবে অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে অর্থের জোগান সহজ করার বিষয়েও গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এসব অতিক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসাগুলোতে ব্যাংকের মাধ্যমে প্রণোদনা দেয়া হয়। তবে এর বাইরে এনজিওর সহযোগিতায় ঋণের অর্থ সহজে ও দ্রুততম সময়ে পাওয়ার ব্যবস্থা করলে অর্থনীতির চাকা দ্রুত ঘুরতে শুরু করবে। এমনটাই মনে করেন গবেষকরা। লাইট ক্যাসেল পার্টনার সার্ভে অনুসারে, করোনার কারণে প্রায় অর্ধেকের বেশি (৫২%) অতিক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে। আগামী ৩ মাসের মধ্যে এ ধরনের প্রায় ৬৪ ভাগ প্রতিষ্ঠান লে অফ বা অর্ধেকের বেশি কর্মী ছাঁটাই করতে বাধ্য হবে বলেও এই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়।

বলা হয়, এই খাতকে সহায়তার জন্য প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে যা অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যাংকের মাধ্যমে প্রদান করা হবে। অথচ এ ধরনের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানেরই ব্যাংকের শর্ত পূরণ করে অর্থ গ্রহণের সক্ষমতা নেই।

এই অধিকাংশ ইনফরমাল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষুদ্র ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ঋণ গ্রহণ করে। কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে নিজেদের ব্যবসা শুরু করতে তাদের আবারও ঋণের প্রয়োজন হবে। ব্যাংকের মাধ্যমে ৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ সহায়তা প্রদান করলেও এই ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য সহজ শর্তে জামানত বিহীন ঋণ সুবিধা দেয়াটা জরুরী।

ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানকারী সংস্থাগুলোর মাধ্যমে এ ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে ঋণ সহায়তা পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে হবে সরকারকে। গবেষণা কিছু যেসব বিষয়ে গুরুত্ব দেয়ার কথা বলা হয়েছে তার মধ্যে আছে রেস্টুরেন্ট, স্থানীয় মুদি দোকান, স্থানীয় ফলের দোকান, ওয়েল্ডিং দোকান এবং কুটির শিল্প। অনানুষ্ঠানিত পরিবহন বিভাগের অন্তর্ভুক্ত থাকবে রিক্সাচালক, সিএনজি চালক পণ্য বাহক বা কুলি এবং এই শ্রেণী পেশার মানুষ। খাদ্য পণ্য উৎপাদনকারী ও মৎস্যজীবীরা। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, ঈদ-উল-আজহাকে সামনে রেখে গরু মোটাতাজা করণের জন্য অনেকেই কাজ করে।

চতুর্থত প্রস্তাবে স্বাস্থ্যসেবা কর্মী ও ফিরে আসা প্রবাসীদের দক্ষতা উন্নয়নে মনোযোগ দেয়ার বিষয়ে গবেষণায় বলা হয়েছে। গবেষকদের মতে, সাধারণত সরকার যেসব কারিগরি বিষয়ে দক্ষতা উন্নয়নে কাজ করে আসছে তার বাইরেও এখন স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেয়া জরুরী। কারণ দেশ ও বিদেশে এখন প্রয়োজন হবে প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মী। এ জন্য গবেষণায় বলা হয়, যেসব প্রবাসী কাজ হারিয়ে দেশে ফিরে এসেছেন তাদের স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রশিক্ষণ দিলে নতুন কর্মসংস্থান সুযোগ তৈরি হবে।

গবেষণা আরো বলা হয়, বিদেশ থেকে ফেরত আসা এই দক্ষ কর্মীদের দক্ষতাকে স্থানীয়ভাবে কাজে লাগানো যায়। এ ছাড়াও তাদের ব্যবসার জন্য ঋণ সহায়তা দেয়ার কথাও বলা হয়েছে। ফলে এর মাধ্যমে আরও নতুন নতুন কিছু ক্ষুদ্র ব্যবসা শুরু হতে পারে।

পঞ্চম প্রস্তাব হলো, স্থানীয়ভাবে কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক গতি আনতে ‘আমার গ্রাম-আমার শহর’ প্রকল্পকে ফাস্ট ট্র্যাকে নেয়া। বলা হয়েছে, শহরমুখী না হয়ে যদি গ্রামে সব সুযোগ-সুবিধা ও ব্যবসার ক্ষেত্র তৈরি করে দেয়া যায় তাহলে গ্রামের মানুষ গ্রামে থেকেই ব্যবসায় করতে পারবে। সরকার এই বিষয়ক যে উদ্যোগ আছে সেটাকে আরও বিস্তৃত ও দ্রুত করা গেলে স্থানীয় উন্নয়ন সম্ভব।

এ ছাড়াও এই সময়ে ডিজিটাল ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়ন এবং এর মাধ্যমে আইসিটি সেক্টরে আরও কর্মসংস্থান তৈরির সুযোগ সৃষ্টি হবে।

গ্রামে একেবারে প্রান্তিক পর্যায় পর্যন্ত ডিজিটাল সেবা পৌঁছে সেখানে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হলে শহরমুখী মানুষের ঢল কমবে বলেও আশা প্রকাশ করা হয়েছে গবেষণা প্রতিবেদনে। এক বছরের মধ্যে এই সব পরিকল্পনা বাস্তায়ন করা গেলে খুব দ্রুত মানুষ কর্মসংস্থান ফিরে পাবে এবং অর্থনৈতিক চাকাও দ্রুত গতিতে সচল হবে বলে গবেষকরা আশা প্রকাশ করেন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
স্কুল-মাদরাসা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ হাইকোর্টের - dainik shiksha স্কুল-মাদরাসা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ হাইকোর্টের ঢাকাসহ ১৩ জেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কাল বন্ধ - dainik shiksha ঢাকাসহ ১৩ জেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কাল বন্ধ প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের মৌখিক পরীক্ষা শুরু ৯ মে - dainik shiksha প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের মৌখিক পরীক্ষা শুরু ৯ মে বেসরকারি শিক্ষকদের বদলি নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশ হাইকোর্টের - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষকদের বদলি নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশ হাইকোর্টের প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নতুন নির্দেশনা টেম্পু চাপায় কলেজছাত্রী নিহত - dainik shiksha টেম্পু চাপায় কলেজছাত্রী নিহত কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0028738975524902