করোনার বন্ধে এক স্কুলেই অর্ধশতাধিক বাল্যবিবাহ

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি |

করোনা মহামারিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকাকালীন টাঙ্গাইল সদর উপজেলার একটি স্কুলেই অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছে। চরাঞ্চলের হুগড়া হাবিব কাদের উচ্চবিদ্যালয়ের বাল্যবিবাহের শিকার ওই শিক্ষার্থীরা আর স্কুলে আসছে না বলে জানা গেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, টাঙ্গাইল শহর থেকে ১০ কিলোমিটার পশ্চিমে যমুনার চরাঞ্চলে হাবিব কাদের উচ্চবিদ্যালয়। এ স্কুলের বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই দরিদ্র পরিবারের সন্তান। ফলে এ অঞ্চলে বাল্যবিবাহের প্রবণতাও আগে থেকেই ছিল। তবে করোনাকালে বাল্যবিবাহের কারণে এ অঞ্চলের অনেক শিক্ষার্থী স্কুল থেকে ঝরে গেছে।

স্কুল সূত্রে জানা গেছে, এ স্কুলে মোট ১ হাজার ৫৫৬ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৬৯০ জন ছাত্রী। প্রধান শিক্ষক শামীম আল মামুন জানান, ১২ সেপ্টেম্বর স্কুল খোলার পর অষ্টম থেকে দশম শ্রেণির অনেক ছাত্রী অনুপস্থিত রয়েছে। খোঁজ নিয়ে তিনি জানতে পেরেছেন, এসব অনুপস্থিত ছাত্রীর মধ্যে প্রায় ৬০ জনের বিয়ে হয়েছে। এ ছাড়া প্রায় ৩০ ছাত্র দারিদ্র্যের কারণে বিভিন্ন জায়গায় কাজ নিয়েছে। 

প্রধান শিক্ষক বলেন, এ অঞ্চলে বাল্যবিবাহের প্রবণতা আগে থেকেই রয়েছে। স্কুল খোলা থাকাকালে কোনো ছাত্রীর বিয়ের খবর পেলে স্কুল কর্তৃপক্ষ উদ্যোগী হয়ে বিয়ে বন্ধ করতেন। অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ১৮ বছরের আগে মেয়েকে বিয়ে না দিতে উদ্বুদ্ধ করতেন। বিয়ে বন্ধে তাঁরা প্রশাসনের সহায়তাও নিতেন। কিন্তু গত বছরের মার্চে স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দীর্ঘদিন শিক্ষকদের নিয়মিত যোগাযোগ ছিল না। তাই এই বাল্যবিবাহগুলো ঠেকানো যায়নি। বাল্যবিবাহের শিকার কাশিনগর গ্রামের নবম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী জানায়, স্কুল বন্ধ থাকায় তার মা–বাবা তাকে বিয়ে দিয়েছেন।

ওই শিক্ষার্থীর বাবা বলেন, তিনি দরিদ্র একজন কৃষক। ভালো পাত্র পেয়েছেন, তাই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। মেয়ের বিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব পালন করতে পারায় তিনি খুব খুশি বলে জানান।

হুগড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন খান জানান, গত দেড় বছরে সবাই করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধ নিয়ে বেশি ব্যস্ত ছিল। এ সুযোগে অনেক অসচেতন অভিভাবক তাদের অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন। স্বাভাবিক অবস্থায় থাকলে এত বেশি বিয়ে হতো না।

মানব প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক মানবাধিকার কর্মী মাহমুদা শেলী বলেন, এক স্কুলেই যদি এত ছাত্রী বাল্যবিবাহের শিকার হয়, তাহলে চরাঞ্চলের অন্যান্য স্কুলেও নিশ্চয়ই এ হারে বাল্যবিবাহ হয়েছে। বাল্যবিবাহের শিকার এই ছাত্রীদের চিহ্নিত করে স্কুলে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। এ ছাড়া কম বয়সী মেয়েদের যাঁরা বিয়ের রেজিস্ট্রি করিয়েছেন, সেসব নিকাহ রেজিস্ট্রারদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল - dainik shiksha ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন - dainik shiksha চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032379627227783