করোনার সময় বিদ্যালয় বন্ধ থাকার কারণে সব শ্রেণি ও বিষয়ে শিক্ষার্থীদের শিখন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে এক গবেষণায় উঠে এসেছে। গবেষণাটি বলছে, সামগ্রিকভাবে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সর্বোচ্চ পরিমাণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ ক্ষতির পরিমাণ সর্বনিম্ন বলেও গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
মঙ্গলবার রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে এই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের (ইইউ) সহযোগিতায় এ গবেষণাটি করেছে।মোট ২৪০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ১৮ হাজার ৮৩৮ জন শিক্ষার্থীকে নির্বাচন করে বিষয়ভিত্তিক শিখন অবস্থা যাচাই করা হয়েছে।
গবেষণা প্রতিবেদনে ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে মাঠ পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের ওপর পরিচালিত সমীক্ষার ভিত্তিতে শিখনক্ষতি ও শিখনঘাটতির (Learning Loss and Learning Gap) সার্বিক চিত্র উপস্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া কীভাবে এই শিখনক্ষতি পুনরুদ্ধার ও শিখনঘাটতি কমিয়ে আনা যায় এ বিষয়ে প্রতিবেদনটিতে প্রয়োজনীয় সুপারিশ করা হয়েছে।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এটা সুস্পষ্ট যে, করোনাকালীন বিদ্যালয় বন্ধের কারণে সব শ্রেণি ও বিষয়ে শিক্ষার্থীদের শিখন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সামগ্রিকভাবে, পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সর্বোচ্চ পরিমাণে ক্ষতিহ্যস্ত হয়েছে এবং দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই ক্ষতির পরিমাণ সর্বনিম্ন ।
গবেষণা প্রতিবেদনটি বলছে, তুলনামূলক বেশি শিখনক্ষতি ঘটেছে পঞ্চম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় বিষয়ে (-১৬ দশমিক ৪৩ শতাংশ), তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় (-১৫ দশমিক ২৩ শতাংশ) এবং পঞ্চম শ্রেণির ইংরেজিতে (-১২ দশমিক ৪৯ শতাংশ)। অন্যদিকে, সর্বনিম্ন শিখনক্ষতি দেখা যায় দ্বিতীয় শ্রেণির গণিতে (-০.৩৩%) এবং তৃতীয় শ্রেণির গণিতে (-০.১৫%)। আর দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ইংরেজিতে, তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় বিষয়ে এবং চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বাংলা বিষয়ে তুলনামূলকভাবে কম শিখনক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।
তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ব্যতিক্রমীভাবে বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় বিষয়ে বেশি ভালো করেছে। এছাড়াও সব বিষয় ও শ্রেণির শিক্ষার্থীর প্রাপ্ত নম্বরের মধ্যে একটি অসমতা পরিলক্ষিত হয়েছে (বিশেষ করে তৃতীয় ও পঞ্চম শ্রেণির)।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, করোনা অভিমারির সময়ে দীর্ঘসময় বিদ্যালয় বন্ধ থাকার কারণে শিক্ষার্থীদের যে শিখনক্ষতি ও শিখঘাটতি হয়েছে তা পুরোপুরি স্পষ্ট। এই ক্ষতি ও ঘাটতি অনতিবিলম্বে দূর করা জরুরি, অন্যথায় তা শিক্ষার্থীদের শিখন কার্যক্রমে হুমকি হয়ে দাঁড়াবে এবং দেশে একটি দক্ষতাহীন প্রজন্ম তৈরি হবে।
নীতিনির্ধারক, বিদ্যালয় প্রশাসন এবং শিক্ষকরা এই সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় নীতি প্রণয়ন এবং চাহিদাভিত্তিক ও কার্যকর কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে পারেন। যেমন, শিক্ষার্থীদের সক্ষমতা অনুযায়ী পাঠদান, শিক্ষাক্রম পাঠ্যক্রম সমন্বয়করণ, পাঠদানের সময় বৃদ্ধি, শিক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে অভিভাবক ও এসএমসির সংযোগ ঘটানো, ধারাবাহিক মূল্যায়ন নিশ্চিতকরণ ইত্যাদি। তাছাড়াও শিক্ষার এই নতুন সংস্করণে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকদের নতুন শিক্ষণ পদ্ধতির সংযোজন ঘটানো আবশ্যক।
শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে সয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।